দাতা কর্ণের সঙ্গে ভারতবাসীরা পরিচিত। ভারতীয় দর্শনে দানের গুরুত্ব তুলনাহীন। ফলত, দানের নিরিখে বিশ্বে যে রেকর্ড গড়বেন একজন, ভারতীয়, তাতে বোধহয় অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু কে তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
প্রায় ৮৩০ হাজার কোটি টাকা তিনি দান করেছেন। যে অঙ্কের উপার্জনই প্রায় স্বপ্নের মতো, সেই অর্থ দেশের জন্য, দশের জন্য দিয়ে দিতে তিনি এতটুকু দ্বিধা করেননি। বিশ্বে বর্তমানে যে খ্যাতনামা শিল্পতিরা আছেন, তাঁরাও দানধ্যানে কম কিছু নন। নানা সময় এই সংক্রান্ত যে তালিকা দেখা যায়, সেখানে তাঁদের নাম ঘোরাফেরা করে। তবে, এই ক্ষেত্রেও শীর্ষে আছেন এক ভারতীয়ই। গোটা বিশ্ব তাঁকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকী বিল গেটসের মতো ব্যক্তিত্বের নাম আসে তাঁর পরে। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং জামশেদজি টাটা।
-: আরও শুনুন :-
নেপথ্যের শিল্পী, উস্তাদ জাকির হুসেনের জন্য তবলা বানান যে রামচন্দ্র
যে সময় তিনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তখন ব্যবসা কেবল অর্থলাভের উপায় ছিল না। তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল দেশ গড়ার স্বপ্নও। আমরা সকলেই জানি, স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে তাঁর অবিস্মরণীয় সেই সাক্ষাতের কথা। শিকাগোয় ধর্মসম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন স্বামীজি। সেই সময় জাহাজে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় জামশেদজির। তিনি তখন তরুণ ব্যবসায়ী। স্বপ্ন দেখছেন নতুন কিছু করার। স্বামীজির সঙ্গে অল্প সময়েই তাঁর বেশ সখ্য গড়ে ওঠে। দেশের পরিস্থিতি, জাগরণ নিয়ে তাঁদের আলোচনাও হয়েছিল। তখন স্বামীজি স্বয়ং তাঁকে দেশে ব্যবসা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। অবাক হতে হয় এই ভেবে যে, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী কেন সেদিন ব্যবসার পরামর্শ দিয়েছিলেন? আসলে যুগনায়ক বিবেকানন্দ তো তাঁর দেশকেই নতুন করে গড়ে তুলতে চাইছিলেন। আধ্যাত্মিক জাগরণের পাশাপাশি তাই অর্থনীতির উত্থানকেও তিনি কখনও খাটো করে দেখেননি। অর্থনীতির শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে না পারলে পরাধীন ভারতবর্ষের মুক্তি সম্ভব নয়। দরকার দেশের বেকারদের কর্মসংস্থান। বিশ্বের সঙ্গে টক্কর দিতে হলে দেশকে অর্থাৎ দেশের মানুষকে সবদিক থেকেই হয়ে উঠতে হবে আত্মনির্ভর। তার একদিকের বাঁধন যদি হয় ধর্ম, অন্যদিকে নিশ্চিতই আছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। তা নিয়েই দুই ব্যক্তিত্বের কথা হয়েছিল সেদিন। পরে স্বামীর পরামর্শকে বাস্তবায়িতও করেছিলেন জামশেদজি। আসলে সেই ব্যবসা-ই ছিল তাঁর কাছে স্বদেশব্রত। ফলত তাঁর হাত ধরে যে ইতিহাস গড়ে ওঠে, শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বই তার সাক্ষী থেকেছে।
-: আরও শুনুন :-
অযোধ্যা লতা মঙ্গেশকরেরও, ৪০ ফুটের বীণায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাম-ই
আর তাই ব্যবসায়িক লাভকে শুধু এক ব্যক্তি বা এক পরিবারে কুক্ষিগত করে রাখার কথা কল্পনাও করেননি জামশেদজি। আন্তর্জাতিক এক সংস্থার দেওয়া তথ্য বলছে, সমাজসেবার জন্য তাঁর দেওয়া অর্থ প্রায় সমুদ্রসমান। তাঁর মৃত্যুর পরেও সেই ধারা বজায় থেকেছে। আর তাই গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দাতা তথা সমাজসেবী হিসাবে গোটা বিশ্বই সম্ভ্রমের সঙ্গে স্মরণ করে জামশেদজি টাটাকে। আজ যখন বিশ্বে ‘ক্রোনি ক্যাপিটিলজম’ নিয়ে অবিরত চর্চা হয়, তখন জামশেদজির মতো মানুষ, তাঁর দর্শনই হয়ে ওঠে আগামীর আলোকবার্তা।