অয্যোধ্যার রাম মন্দির দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার উপর বড় আঘাত। এমনটা মত বহু সমালোচকেরই। তা নিয়ে আলোচনারও শেষ নেই। অথচ এক মুসলিম নেতাই বলছেন ঠিক উলটো কথা। তাঁর মতে, এতে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিই মজবুত হবে। কেন তাঁর এমন মতামত? আসুন শুনে নিই।
বাবরি ধ্বংস হয়েছে। তা নিয়ে চলেছে বিস্তর বিবাদ, বিতর্ক। অবশেষে শীর্ষ আদালতের রায় মেনেই তৈরি হয়েছে রাম মন্দির। তা এখন ঘোরতর বাস্তব। অতএব এ নিয়ে আর প্রতিরোধ, প্রতিবাদের কোনও মানে হয় না। বরং অযোধ্যায় যে মন্দির হল এবং মসজিদ যে হচ্ছে, তাতে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিই রক্ষিত হবে। এ-কথা বলছেন খোদ কেরলের ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের রাজ্য সভাপতি স্বয়ং। স্বভাবতই তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে জমে উঠেছে বিতর্ক।
-: আরও শুনুন :-
রাম মন্দির যে আদালতের নির্দেশ মেনেই হয়েছে, তা অস্বীকার করছেন না কেউই। তবে, বাবরি ধ্বংসের ইতিহাস এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বলেই, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলে থাকেন। যাঁরা বিরোধিতা করেন, তাঁদের বক্তব্য এই যে, আরএসএস-এর রামরাজ্যের ধারণার সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর রামরাজ্যের প্রস্তাবের কোনও মিলই নেই। এ আসলে ধর্মের নামে রাজনৈতিক আগ্রাসনের চিহ্ন। আর এর দরুন সবথেকে বেশি আঘাত নেমে আসবে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে। ঠিক এই আবহেই একেবারে পালটা মত মুসলিম লিগের এই নেতার। তিনি বলছেন, বাবরি যখন ধ্বংস হয়েছিল, তখন প্রতিবাদ হয়েছে। তারপর অনেকটা সময় গড়িয়ে গিয়েছে। এখন যা হওয়ার হয়েই গিয়েছে, সেখান থেকে আর পিছনে ফিরে তাকানোর অবকাশ নেই। বরং এই পরিস্থিতি যেভাবে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন, তা প্রশংসারই যোগ্য। আর তাই তাঁর মত, এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দেওয়ার কোনও মানে হয় না। বরং মন্দির ও মসজিদ যে একই বাস্তব হয়ে উঠছে, সেটাই দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার সবথেকে বড় প্রমাণ।
-: আরও শুনুন :-
বেশ কিছুদিন আগেই এই মন্তব্য করেছিলেন মুসলিম নেতা। তবে, সম্প্রতি তাঁর বক্তব্যের একটি অংশ নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হয়। তাঁর সংগঠন কেরলে কংগ্রেসের ‘বন্ধু’ হিসাবেও পরিচিত। ফলে, এই মন্তব্য অন্য রকম রাজনৈতিক তাৎপর্য পেয়ে গিয়েছে। এই ধরনের মন্তব্য অনুচিত বলেই মনে করেছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লিগ। অন্যদিকে তাঁর বক্তব্যকে সমর্থনও জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ। তাঁদের বক্তব্য, মুসলিম লিগের ওই নেতার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে যাতে আবার নতুন করে ঘৃণা না ছড়িয়ে পড়ে, সেই চেষ্টাই করছেন তিনি। বিতর্ক-বিবাদ যা ছিল, ইতিহাস তার সাক্ষী থেকেছে। এখন যখন রাম মন্দির হয়েই গিয়েছে, নতুন করে বিতর্ক তৈরি না করে, সামনের দিকে তাকানোই শ্রেয়। সেই কথাই বলতে চেয়েছেন নেতা। কোনও ভাবেই দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা যাতে আহত না হয়, তাই-ই আসলে তাঁর বক্তব্যের মূল কথা। আর তাই মন্দির-মসজিদের একযোগে নির্মাণকেই ধর্মনিরপেক্ষতার চিহ্ন হিসাবে তুলে ধরেছেন। তবে, আদৌ এই চিহ্ন দেশকে এগিয়ে দেবে কি-না, সে উত্তর অবশ্য সময়ের হাতেই তোলা থাকছে।