পুরাণ মতে, দেবাদিদেব মহাদেবের উগ্ররূপ কালভৈরব। উজ্জ্বয়িনী নগরে মহাদেবের এই রূপের মন্দির রয়েছে। ভক্তিভরে তাঁর পুজো করলে যে কোনও বিপদ থেকে মুক্তি মেলে। তবে শাস্ত্রমতে, মাঘ মাসে কালভৈরবের পুজো করা বিশেষ ফলদায়ক। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
তাঁকে তুষ্ট করতে পারলেই যে কোনও বর পাওয়া সম্ভব। লোককথায় দেবাদিদেব মহাদেব সম্পর্কে এমনটা প্রচলিত। তবে পুরাণের ব্যাখ্যায়, ভোলা মহেশ্বর মোটেও এমন নন। তাঁকে তুষ্ট করা যেমন কঠিন, তেমনই তাঁর ক্রোধের সামনে ত্রিলোকের কেউই দাঁড়ানোর সাহস পায় না। দেবতা হোক বা অসুর, সকলেই এই কারণে মহাদেবকে সমীহ করে চলেন।
আরও শুনুন: শনিবার হনুমান পুজো করলে তুষ্ট হন গ্রহরাজ, দূর হয় অর্থ কষ্ট
সেই মহাদেবের উগ্ররূপ কালভৈরব। ভক্তদের সমস্ত রকমের বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন তিনি। এমনকি দেবাদিদেবের এই রূপের পুজো করলে মৃত্যুভয়ও কমে। মহাদেবের প্রচলিত মূর্তির থেকে এই মূর্তি বেশ আলাদা। মূর্তির বাহন কুকুর। হাতের অস্ত্রও আলাদা। এছাড়া এই পুজো মদ আবশ্যক। উজ্জ্বয়িনীর কালভৈরব মন্দিরে প্রসাদ হিসেবেই দেওয়া হয় মদ। অনেকে তামাকও দিয়ে থাকেন নৈবেদ্য হিসেবে। আসলে, দেবাদিদেবের এই উগ্রতম রূপটি সম্পূর্ণভাবে সংহার মূর্তি। পুরাণের কাহিনি বলে, মহাদেব আর ব্রহ্মা একবার ভয়ঙ্কর বচসায় জড়িয়ে পড়েন। ক্ষমতায় কে কার থেকে বেশি, সেই নিয়ে লড়াই চলতে থাকে। এতে মহেশ্বর এতটাই রেগে যান, যে তাঁর কপাল থেকে জন্ম হয় কাল ভৈরবের। সংহার রূপে তিনি ব্রহ্মার পাঁচটা মাথার একখানা কেটে ফেলেন। কিন্তু তা কালভৈরবের হাতেই আটকে যায়। সেই পাপ থেকে মুক্তি পেতে কাল ভৈরব ভিখারির রূপে মর্তে আসেন। কথিত আছে, কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে গঙ্গাস্নান করে সেই পাপ থেকে মুক্তি পান কাল ভৈরব। সেই থেকে ওই তিথিতে তাঁর পুজো হয়ে আসছে।
আরও শুনুন: কণ্ঠে তুলসীর মালা ধারণ, শুধুই ধর্মীয় রীতি, নাকি আছে স্বাস্থ্যেরও উপকার?
তবে এই রূপের পুজো করতে হয় খুবই নিষ্ঠা সহকারে। হিসাব মতো ১২মাসে ১২টি কালাষ্টমী তিথি পড়ে। তার মধ্যে মাঘ মাসের কালাষ্টমী তিথি বিশেষ। কাল ভৈরবের পুজো করতে কালো পোশাক পরা আবশ্যক। উগ্ররূপের এই পুজোয় বলিদানেরও চল রয়েছে। তবে বাড়িতে এই পুজো করতে হলে তেমন কোনও নিয়ম মানার প্রয়োজন নেই। শিবের পুজোর মতোই নিয়ম মানতে হয় এই পুজোয়। ব্রতীকে নিষ্ঠাভরে উপোস থেকে পুজো করতে হয়। ভোগ হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ফল, নারকেল, মিষ্টি দেওয়া যেতে পারে। এই পুজোয় চন্দন এবং ধুপ-ধুনো আবশ্যক। সেইসঙ্গে প্রদীপ জ্বালাতে হয় অন্তত ২১ টি। পুজোর শেষে আরতি এবং ব্রতকথা শুনতে হবে। একইসঙ্গে পুজোর শেষে কুকুরকে খাওয়ানোও বিশেষ ফলদায়ক। বেনারস এবং উজ্জ্বয়িনীতে কালভৈরব মন্দিরে নিয়মিত পুজো হয়। প্রতিদিন হাজারও ভক্তের ভিড় হয় সেই মন্দিরে। এর মধ্যে মাঘমাসে যদি পুজো দেওয়া হয় তাহলে ভক্তের সবধরনের মনস্কামনা পূরণ হয়।