সবমিলিয়ে ১৮ টন খাবার। তার মধ্যে ওয়াইনের বোতলই রয়েছে ২৫০০০ খানা। এমন কোনও দেশ নেই, যেখানকার বিখ্যাত খাবার তালিকায় নেই। অবাক লাগলেও, এমনই বহর ছিল বিশ্বের সবথেকে দামি পার্টির। কে আয়োজন করেছিল জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বিয়েবাড়ি হোক বা অফিস পার্টি, কবজি ডুবিয়ে খাওয়ার ইচ্ছা থাকে অনেকেরই। তবে এই পার্টিতে কবজি কেন, গোটা হাত ডুবিয়ে খেলেও আশ মিটবে না। পানীয় থেকে শুরু করে বিশ্বের নামকরা সব খাবার, কি ছিল না এই পার্টির মেনুতে। আর সেই কারণেই একে বিশ্বের সবথেকে দামি পার্টির তকমা দেওয়া হয়।
আরও শুনুন: ‘রাম-সীতা’ দোকানে এলেই বিনামূল্যে খাবার, অভিনব বিজ্ঞাপন নয়ডার মুসলিম দোকানির
কথা বলছি, ইরানের শেষ ‘শাহ’ মহম্মদ রেজা পাহলাভির আয়োজিত এক পার্টি সম্পর্কে। ১৯৭১ সালের এই অনুষ্ঠানটি ছিল পারসি সাম্রাজ্যের ২৫০০ তম বর্ষপূর্তির উদযাপন। যার আয়োজন শুনলে লজ্জা পেতে বাধ্য বিশ্বের তাবড় ধনীরা। সেই সময়ও ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। দেশের সাধারণ মানুষের বেশিরভাগই ছিলেন অত্যন্ত গরীব। তবে মহম্মদ রেজা সেসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতেন না। নিজের ঠাটবাট বজায় রাখার নানা রকমফের চালিয়ে যেতেন তিনি। এই পার্টির আয়োজনও সেই আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট করার জন্যই তিনি আয়োজন করেছিলেন। ঠিক হয়, গোটা বিশ্বের মোট ৬৫ টি দেশ থেকে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এদিকে এত লোকের ঠিকমতো যত্ন আত্তি করার পর্যাপ্ত জায়গা ইরানের রাজধানীতেও ছিল না। তাহলে উপায়?
আরও শুনুন: প্রেম ভেঙেছে? খাবার নিয়ে হাজির ‘এক্স গার্লফ্রেন্ড’! নামেই আশ্বাস দোকানের
অনেক ভেবে মহম্মদ ঠিক করেন, পার্টির আয়োজন হবে মরুভূমিতে। সেইমতো শহরের প্রান্তে মরভূমিকেই আস্ত একটা শহরের রূপ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। প্রায় ৩০ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয় একের পর এক তাঁবু। শুধু তাই নয়, মরভূমিতে প্রাণ আনার জন্য জঙ্গল থেকে প্রায় ৫০০০০ পাখি এনে সেখানে ছাড়া হয়। কয়েক মাসে ওই অঞ্চলের চেহারা বদলে যায় সম্পূর্ণভাবে। এরপর আসা যাক খাবারের কথায়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নামকরা সব খাবার আনা হয় এই পার্টিতে। সবমিলিয়ে পরিমানটা দাঁড়ায় ১৮ টন-এ। এর মধ্যে মদের বোতলই ছিল ২৫হাজার। খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন ১৮০জন খানসামা। এই মহা আয়োজন ঠিকমতো মেটাতে ৪০ টি ট্রাক এবং ১০০ টি প্লেনও আনা হয় ফ্রান্স থেকে। আর এসব করতে যে আকাশছোঁয়া খরচ যে হবে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না! হিসাব বলছে, সেই সময় প্রায় ১০০ মিলিয়ন খরচ হয়েছিল এই পার্টির আয়োজন। যা কয়েক হাজার কোটির সমান। মোট ৩ দিন ধরে চলেছিল এই রাজকীয় উৎসব। তবে মহম্মদের এই কাজ একেবারেই মেনে নেয়নি ইরানের সাধারণ মানুষ। এমনকি তাঁকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেও বাধ্য করা হয়। কিন্তু তাতে কি! এই পার্টি আয়োজন করে ততদিনে ইতিহাসের পাতায় নাম তুলে নিয়েছেন মহম্মদ। যার চর্চা আজও অনেকের মুখে মুখে ফেরে।