চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, আর কোনও দিনই সাইকেল চালাতে পারবেন না তিনি। কিন্তু সে কথাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন এই সেনাকর্মী। উলটে সাইকেল অভিযানের নেতা হয়ে ফের নেমে পড়েছেন রাস্তায়। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মনের জোরের কাছে হার মানতে হয় সব বাধাকেই। সে কথাই যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন এই সেনাকর্মী। দুটি পা-ই যিনি হারাতে বসেছিলেন একসময়। একসময় সপ্তাহে অন্তত ১০০ কিলোমিটার সাইকেল চালানো তাঁর অভ্যাসের মধ্যেই পড়ত। এমনকি দুর্ঘটনার দিনেও তিনি সওয়ার ছিলেন সাইকেলেই। কিন্তু এরপর তিনি আর কোনও দিনই সাইকেল চালাতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরাও। কিন্তু সেইসব আশঙ্কাই হেরে গিয়েছে এই সেনা আধিকারিকের মনের জোরের কাছে। ফের সাইকেল নিয়েই তাই পথে নেমেছেন ব্রিগেডিয়ার এন এস চারাগ। তাও আবার একা নন, গোটা একটি দলের সাইক্লোথন বা সাইকেল অভিযানের নেতার ভূমিকা পালন করছেন তিনিই।
আরও শুনুন:
স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে গেলেই হতে পারে হাজতবাস! কোথায় এমন নিয়ম রয়েছে জানেন?
২০২০ সালে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর ব্রিগেডিয়ার চারাগ যখন হাসপাতালে ভরতি হন, তখন তাঁর দুটি পায়ের অবস্থা শোচনীয়। পা ভেঙে গিয়েছে, অন্ত্র ছিন্নভিন্ন, পাশাপাশি পেলভিস বা শ্রোণী অঞ্চলেও অজস্র আঘাত। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে আর সাইকেল চালানো সম্ভব হবে না। হাসপাতালের বেডে শুয়েই ৫২ দিন কেটে গিয়েছিল তাঁর। সেই অবস্থা থেকে ফের পথে নামতে পারাকে মাইলস্টোন বলেই মনে করছেন ওই সেনাকর্মী। এনসিসি-র ১৩ জন মহিলা ক্যাডেটকে নিয়ে সাইকেল অভিযানে বেরিয়েছিলেন তিনি। আর কন্যাকুমারী থেকে নয়া দিল্লি, প্রায় ৩৬০০ কিলোমিটার পথ দু’চাকায় পাড়ি দিয়ে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, কোনও কিছুই আসলে অসম্ভব নয়।
আরও শুনুন:
পুরুষ নয়, শরীরী প্রেমের সাধ মেটাচ্ছে গাছ! সুখের গোপন কথা ফাঁস মহিলার
ম্যারাথনের মতোই, সাইক্লোথনের ক্ষেত্রে সাইকেল নিয়ে একটি বড় দূরত্ব পাড়ি দিতে হয়। সে পথও খুব মসৃণ হয় না সবসময়ে। এক্ষেত্রেই যেমন, দেশের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তরে পৌঁছতে যেমন উচ্চতার সমস্যা ছিল, তেমনই যাত্রার শেষ ভাগে দিল্লিতে ৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ঠান্ডার কামড়ও ছিল। তারপরেও প্রতিদিন গড়ে ১০৮ কিলোমিটার করে সাইকেল চালিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার সহ গোটা দল। আর ৩৩ দিনেই পুরো দূরত্ব পাড়িও দিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। এই দূরত্ব যতখানি এক স্থান থেকে আরেক স্থানের, ততখানিই হয়তো মনের সঙ্গে শরীরের দূরত্বও। সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে মন ও শরীরকে এক সুতোয় বেঁধেছেন এই সেনাকর্মী। যাতে মন যা চাইছে, শরীর তাতে বাদ সাধতে না পারে। আর সেইভাবেই তিনি ফিরে এসেছেন সাইকেলের কাছে, নিজের ভালোবাসার কাছে। আর আরও একবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, মনের জোরে হার মানানো যায় যে কোনও বাধাকেই।