২২ জানুয়ারি অযোধ্যার মন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে নতুন মূর্তির ছবি। স্রেফ রামলালা নয়, মূর্তিটির সঙ্গে রয়েছে আরও অনেক কিছু। ঠিক কী কী রয়েছে মূর্তিতে? আসুন শুনে নিই।
রামমন্দির উদ্বোধন ঘিরে সাজো সাজো রব গোটা দেশে। তবে এই মুহূর্তে চর্চার কেন্দ্রে রামলালার নতুন মূর্তি। ২০০ কেজির মূর্তিটিকে ইতিমধ্যেই মন্দিরের গর্ভগৃহে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে মূর্তিটির ছবিও। যা দেখার পরে আবেগে ভেসেছেন দেশ-বিদেশের রামভক্তরা। সোশ্যাল মিডিয়াও ছেয়ে গেছে রামলালার নতুন মূর্তির ছবিতে। একইসঙ্গে মূর্তিটির কী বিশেষত্ব সেই নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
আরও শুনুন: রাম মন্দিরে প্রতিষ্ঠা হবে তাঁর হাতে গড়া রামলালার, কে এই অরুণ যোগীরাজ?
যে রামমন্দিরকে ঘিরে এত আলোচনা, তার প্রধান আকর্ষণ রামলালার মূর্তি। বহু প্রতীক্ষিত মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার কেমন মূর্তি থাকবে তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহ অপেক্ষায় ছিলেন প্রায় সকলেই। মন্দির কমিটির তরফে ধাপে ধাপে জানানো হয়েছিল মূর্তিটির বিশেষত্ব। তখনই জানা গিয়েছিল, মূর্তিটির ওজন হবে ২০০ কেজি। উচ্চতায় ৫১ ইঞ্চি, আর চওড়ায় প্রায় ৩৬ ইঞ্চি। মূর্তিটি তৈরি হয়েছে নেপাল থেকে আনা বিশেষ শালগ্রাম শিলা খোদাই করে। তাই মূর্তির রং কালো। একজন নয়, রামলালার এই মূর্তি তৈরির বরাত পেয়েছিলেন কয়েকজন শিল্পী। তাঁদের মধ্যে সেরার সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে কর্নাটকের মহীশূরের বাসিন্দা অরুণ যোগীরাজের তৈরি করা মূর্তিটি। এই মূর্তিই রামমন্দিরের গর্ভগৃহে নিত্য পূজিত হবে। তার আগে মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা। আগামী ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে সেই পুজোপাঠ সম্পন্ন হওয়ার কথা। মন্দির কমিটি আগেই জানিয়েছিল, রামলালার এই নতুন মূর্তি ৫ বছরের বালকের মতো দেখতে হবে। মূর্তির ছবি প্রকাশ্যে আসতে, অনেকেই সেই প্রসঙ্গ তুলছেন। প্রায় সকলেরই দাবি, এই মূর্তিতে এমনই মায়া রয়েছে, যা কেবলমাত্র ৫ বছরের নিস্পাপ বালকের মধ্যেই মেলে। শুধু তাই নয়, এই মূর্তির সঙ্গে সীতা বা লক্ষ্মণও নেই। স্রেফ রামলালা এবং রাম সম্পর্কিত কিছু অনুষঙ্গই রয়েছে এই মূর্তিতে।
আরও পড়ুন: রামের মঙ্গলকামনায় পুজো দেবেন মদ ও মাংস দিয়ে, গঙ্গার কাছে মানত সীতার
একবার উপর থেকে শুরু করা যাক। হিন্দু ধর্মে যে কোনও শুভ কাজ বা অনুষ্ঠানে, সূর্যার্ঘ্য দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সূর্যদেবকে সর্বত্রই তেমন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। রামলালার নতুন মূর্তির একেবারে উপরেও সেই সূর্যদেবকেই রাখা হয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এরপরই হিন্দু ধর্মের পবিত্র দুই চিহ্ন, যথা ‘ওম’ এবং ‘স্বস্তিক’ রয়েছে মূর্তির দুই পাশে। একইঙ্গে রয়েছে শঙ্খ, চক্র এবং গদা। মূর্তির পিছন দিকে যে চালচিত্রের আকার রয়েছে সেখানেই ছোট ছোট করে খোদাই করা। এবং দূর থেকেও সসব বেশ স্পষ্ট। যা বুঝিয়ে দিচ্ছে অরুণ যোগিরাজ শিল্পী হিসেবে কতটা যোগ্য এবং দক্ষ। এরপরই খোদাই করা বিষ্ণুর দশ অবতারের মূর্তি। একদিকে, মৎস, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন আর অন্যদিকে পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, কল্কি। এদের যে প্রচলিত রূপ দেখা যায় তাই খোদাই করা। এরপরই মূর্তির দু-পাশে নারায়ণের দুই প্রিয় অনুচরের মূর্তি খোদাই করা। একদিকে হনুমান, অন্যদিকে গরুড়। মানুষরূপী পাখি গরুড়কেই শাস্ত্রমতে পক্ষীশ্রেষ্ট বলা হয়। তিনিই শ্রীবিষ্ণুর বাহন। তাই রাম মূর্তির চালচিত্রে রয়েছে তাঁরও মূর্তি। এদিকে হনুমান হলেন রামের পরম ভক্ত। তাঁকে ছাড়া রামের মূর্তি সচারচর দেখা যায় না। অযোধ্যার রামলালার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সেখানেও রামের পায়ের কাছে রয়েছে পবননন্দন হনুমান। রামলালার এই মূর্তির ছবি দেখে, অনেকেই দাবি করছেন এমন মূর্তি আর কোথাও নেই। তাই আবেগে ভেসে ছবিটি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন নেটদুনিয়ার বাসিন্দারা। একইসঙ্গে জোরকদমে অযোধ্যায় রামমন্দির সাজানোর কাজ চলছে। সেখানেই প্রায় ৭০০০ মানুষের উপস্থিতিতে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার পুজো সম্পন্ন হবে। বিশেষ অভিষেকের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অযোধ্যায় পৌঁছে গিয়েছে একাধিক সামগ্রীও। তাই এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন অযোধ্যা সহ গোটা দেশের রামভক্তরা।