রাম-রাবণের যুদ্ধের ঘটনা নিয়েই গড়ে উঠেছে রামায়ণের কাহিনি। রাম ও রাবণ, একে অপরের ঘোষিত শত্রু। কিন্তু অযোধ্যায় রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার আগে জানা গেল, তাঁকে জন্মভূমিতে স্বাগত জানাচ্ছে খোদ রাবণের গ্রামও। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মহাকাব্যের মন্দজন বলেই তো পরিচিত রাবণ। রামের শত্রু তিনি। কিন্তু সেই রাবণের গ্রামেই রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে দেখা গেল অন্য ছবি। রামজন্মভূমি অযোধ্যায় ফিরছেন রামলালা, এই ঘটনাকে স্বাগত জানালেন ‘রাবণের গ্রাম’-এর অধিবাসীরা।
-: আরও শুনুন :-
রামের মুখে শরিয়ত, কখনও তিনিই রাম হায়দার… রামকথাকে নানাভাবে খুঁজেছেন মুসলিমরাও
মহাকাব্যে যেমন একজন নায়ক থাকেন, তেমনই থাকেন এক প্রতিনায়কও। ঠিক যেমন রামায়ণে রামের বিপরীতে দাঁড়িয়ে রাবণ। রাম যেমন মর্যাদাপুরুষোত্তম, অর্থাৎ সাধারণের তুলনায় তিনি অতি গুণবান, তেমনই লঙ্কেশ্বর রাবণও প্রবল, তিনিও পরম জ্ঞানী ও শিবভক্ত, সাধারণ মানুষের তুলনায় তিনি সবরকম ভাবেই অতিকায়। কিন্তু কখনও মুনিঋষিদের উত্যক্ত করা, কখনও আবার সীতাহরণ- এমন একাধিক দোষে তিনি হয়ে উঠেছেন খলনায়ক। শেষ পর্যন্ত সীতাহরণের দায়ে রামের হাতেই মৃত্যু ঘটেছে তাঁর। রামের ভক্তদের কাছে রাবণ যেমন খলনায়ক হিসেবে ঘৃণিত, তেমনই রাবণবধের জন্য রামকেও দূরেই ঠেলে রাখেন রাবণের অনুরাগীরা। রাম-রাবণের যুদ্ধ আসলে অনার্য সাম্রাজ্যের প্রতি আর্যদের আগ্রাসন, এমন কথাও বলে থাকেন অনেকে। ঠিক তেমনটাই বিশ্বাস করেন বিসরাখ অঞ্চলের মানুষেরাও। গ্রেটার নয়ডার কাছেই রয়েছে বিসরাখ গ্রাম, যা চলতি কথায় ‘রাবণের গ্রাম’ বলেই পরিচিত। মনে করা হয়, এই স্থানই আসলে রাবণের জন্মভূমি। তাই সেখানকার মানুষ রাবণকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করেন। রাবণের এক বিশাল মন্দিরও রয়েছে এখানে। এখানে কোথাও দশেরা তিথিতে রাবণবধের উৎসবও পালন করা হয় না। বরং রাবণের মৃত্যুর কথা মনে করে এখানকার মানুষজন শোক পালন করেন। অন্যদিকে, রামের পুজোর কোনও চলই ছিল না এই গ্রামে।
কিন্তু অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের আবহে বদলে গেল সেই ছবিটিই। জানা গিয়েছে, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় যেমন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে, ঠিক সেদিনই এই গ্রামের প্রাচীন শিবমন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হবে রামদরবার। সেখানে থাকবে রাম সীতা লক্ষ্মণ ও হনুমানের মূর্তি। প্রতিষ্ঠার আচার পালন করবেন ১১ জন পুরোহিত। সঙ্গে ভজন গেয়ে গ্রাম পরিক্রমা করবে এক শোভাযাত্রা। রাবণের পুরনো মূর্তিটিও অবশ্য থাকবে, তবে তিনি আর পুজো পাবেন কি না তা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে গ্রামবাসীদের একাংশের।
-: আরও শুনুন :-
বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে শতাধিক রামায়ণ, রামকে কেন্দ্র করেই জারি ভিন্নমতের অধিকারও
এ কথা তো অজানা নয় যে, বহুত্বকে বরাবরই মান্যতা দিয়ে চলেছিল এ দেশ। যে দেশের মহাকাব্য রামের বীরগাথা, সে দেশেই যে রাবণেরও মন্দির থাকে, এ ঘটনা তো সেই বহুস্বরকেই স্বীকৃতি দেয়। রাম মন্দিরকে ঘিরে ভক্তির জোয়ার যেন সেই বহুত্বকে ভাসিয়ে না দেয়, সে কথাও বোধহয় এই সময়ে দাঁড়িয়ে মনে রাখা জরুরি।