মন্দির, মসজিদ- ধর্মভেদে নানা বিভাজন। তবে, সেই ধর্ম যাঁরা পালন করেন, তাঁরা তো মানুষ। মানুষের বিপদে মানুষ কি পাশে না দাঁড়িয়ে পারে! সম্প্রতি সেই নমুনাই দেখা গেল কর্নাটকে। শবরীমালা যাওয়ার পথে ভক্তরা আশ্রয় চাইলেন মদজিদে। তারপর? কী হল, আসুন শুনেই নেওয়া যাক।
শবরীমালা মন্দিরে দর্শনে যাচ্ছিলেন জনা ছয় হিন্দু ভক্ত। উত্তর কর্নাটক থেকে বাইকে করে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে, যাত্রাপথে আচমকাই পড়লেন বিপদে। এমন জায়গায় রাত নামল, যেখানে বন্য প্রাণীদের উৎপাত হতে পারে। জায়গাটা প্রায় জঙ্গলই বলা যায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন, আছে একটা মসজিদ। কিন্তু হিন্দু দর্শনার্থীদের কি মসজিদে আশ্রয় মিলবে? সংশয় নিয়েই আশ্রয় চাইতে গিয়েছিলেন তাঁরা।
ছয় হিন্দু ভক্তের আর্জি শুনে আর দ্বিমত করেনি মসজিদ কর্তৃপক্ষ। মসজিদের মধ্যেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এমনকী পুজোপাঠ, যা ভক্তরা করে থাকেন, তা যাতে তাঁরা সুষ্ঠুভাবে করতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। মসজিদের ভিতর রাত কাটিয়ে, সকালে প্রার্থনা সেরে হিন্দু ভক্তরা আবার রওনা দেন শবরীমালার উদ্দেশে। মসজিদ প্রেসিডেন্ট উসমান জানিয়েছেন, “ওঁরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কিন্তু তাতে কী! জায়গাটা ঘন জঙ্গল, বন্য হাতির উপদ্রব বাড়ে। সেখানে রাতে যে-ই আশ্রয় চাক না কেন, মসজিদে তাঁরা থাকতে পারেন। ধর্ম এসব ক্ষেত্রে কোনও বাধা হতে পারে না।” উসমান জানিয়ে দিয়েছেন, নানা ভাবে আমরা ঈশ্বরের আরাধনা করি। কেউ বলি ভগবান, কেউ আল্লাহ্। কিন্তু তিনি তো একজনই। অতএব মানুষ বিপদে পড়লে মসজিদের দ্বার খোলা হবে নাই-বা কেন!
আরও শুনুন: ‘মুসলিমরাও রামেরই উত্তরসূরি’, সমন্বয়ের বার্তা দিতেই রামজ্যোতি নিয়ে পথে নামছেন দুই মুসলিম তরুণী
ঘটনায় আপ্লুত হিন্দু ভক্তরাও। মসজিদ কর্তৃপক্ষকে তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। কোড়গু জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ভিতর ছিল এই মসজিদ। রাতে জঙ্গলের মধ্যে সেখানে আশ্রয় না মিললে নানা বিপদের সম্ভাবনা থাকত। তবে, এখন আর সে সব নিয়ে ভাবছেন না তাঁরা। ধর্ম যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত মানুষের পাশে মানুষই দাঁড়ায়। কর্নাটকের এই ঘটনা যেন আরও একবার মনে করিয়ে দিল, যত বিভাজন, যত ভেদই থাকুক না কেন, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই।