মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্র কেবল হিন্দুদের নন, মুসলিমদেরও পূর্বপুরুষ। রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে অযোধ্যা থেকে কাশী পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে মুসলিমদের এ কথাই বোঝাতে চান দুই মুসলিম তরুণী। এই লক্ষ্যেই রামজ্যোতি নিয়ে এবার প্রচারে নামছেন তাঁরা। কারা এঁরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
অযোধ্যায় রামলালার মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন গোটা দেশে ঘরে ঘরে রামজ্যোতি জ্বালানোর অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ আর এবার সেই রামজ্যোতিকেই আরও ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ নিজেদের হাতে তুলে নিলেন দুই মুসলিম তরুণী। হ্যাঁ, ধর্মে তাঁরা হিন্দু নন। কিন্তু তাতে কী? রামের পুজো করতে গেলে হিন্দু যে হতেই হবে, তার তো কোনও মানে নেই! রাম মন্দিরের দরজা যখন সবার জন্যে খুলে যাচ্ছে, তার ঠিক আগেই সেই সমন্বয়ের কথাটিই ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান ওই দুই তরুণী। অযোধ্যা থেকে রামজ্যোতি নিয়ে তা কাশী অব্দি বহন করে নিয়ে যেতে চান তাঁরা। সেই আলোই যেন সমন্বয়ের আলো। বিশ্বাসের অন্ধত্ব ভাঙার আলো। যা জানাতে চায়, মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্র কেবল হিন্দুদের নন, মুসলিমদেরও পূর্বপুরুষ। আর সেই কথাটিই মুসলিম মহল্লায় গিয়ে গিয়ে প্রচার করার শপথ নিয়েছেন নাজনিন আনসারি এবং নাজমা পারভিন নামের ওই দুই তরুণী।
আরও শুনুন:
‘মুসলিম বলে রামের ভজনা করব না!’ সম্প্রীতির আলো ছড়িয়ে হেঁটেই রাম মন্দির যাচ্ছেন শবনম
জানা গিয়েছে, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নাজনিন এর আগেই উর্দু ভাষায় অনুবাদ করেছেন হনুমান চালিশা এবং রামচরিতমানস। শান্তি এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই সামাজিক কাজকর্ম করে চলেন তিনি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাজমা আবার দেশজুড়ে হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজ করে চলেছেন। রামভক্তির মাধ্যমেই নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথ পেয়েছেন তাঁরা, এমনটাই মত দুই তরুণীর। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে সেই বিশ্বাস থেকেই পথে নামছেন তাঁরা। তাঁরা মনে করেন, কেউ ধর্ম বদলাতে পারেন, কিন্তু নিজেদের সংস্কৃতি নয়। সুতরাং এ দেশে যে মুসলিমেরা রয়েছেন, তাঁরাও আসলে রামের উত্তরসূরি।
আরও শুনুন:
তিন তালাকে বিপর্যস্ত জীবন, সেই মুসলিম মহিলারাই বানাচ্ছেন রামলালার পোশাক
সত্যি বলতে, ধর্মের আসল অর্থ তো ধারণ করা। সকলকেই তা ধারণ করতে পারে, সেখানে তো কোনও বিভেদ, কোনও বৈষম্য আসার কথা নয়। রাম মন্দির নির্মাণের আগে যতই সাম্প্রদায়িক বিবাদ বিতর্ক মাথা তুলুক না কেন, মন্দির উদ্বোধনের আগে নানা ঘটনা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, ঈশ্বর আসলে সকলেরই। যে কেউ, যে কোনও রূপেই ঈশ্বরের ভজনা করতে পারেন। আর বিভেদ নয়, সমন্বয়ই আসলে ধর্মের মূল কথা। এই যেমন, এই আবহেই শোনা গিয়েছে শবনম শেখ নামে এক মুসলিম তরুণীর কথা। ধর্মে মুসলিম হলেও যিনি প্রশ্ন তোলেন, রামের ভক্ত হতে গেলে কি হিন্দু হতেই হবে? মুসলিম ধর্মাবলম্বী কেউ কি রামের ভক্ত হতে পারেন না? বরং সবকিছু ছাপিয়ে ভালো মানুষ হয়ে ওঠাই তো আসল কথা। আবার তিন তালাক পাওয়া যে তিন মহিলা রামলালার জন্য নিজেদের হাতে পোশাক বানাচ্ছেন পরম যত্নে, তাঁরাও তো সেই সমন্বয়ের কথাটিই জাগিয়ে দিয়েছেন। এবার রামজ্যোতি হাতে নিয়ে সেই সমন্বয়ের আলো ছড়িয়ে দিতেই পথে নামছেন নাজনিন ও নাজমাও।