রামের পুজো করতে হিন্দু হতে হয় না, এমনটাই বিশ্বাস শবনম শেখের। আর তাই, রামকে পাওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে মুম্বই থেকে অযোধ্যায় চলেছেন এই মুসলিম তরুণী। আর তাঁর এই যাত্রা প্রশ্ন রাখছে গোটা দেশের সামনে- ধর্মের কাজ বেড়া তোলার, নাকি বেড়া ভাঙার? হয়তো এ প্রশ্নের উত্তরের হদিশও দিচ্ছে এই যাত্রাই।
রাম মন্দিরের দিকে হেঁটে চলেছেন এক মুসলিম তরুণী। মাথায় হিজাব। পিঠের ব্যাগে গেরুয়া পতাকা। তাঁকে দেখে খানিক অবাকই হচ্ছেন সকলে। কারও প্রশ্ন, মুসলিম হয়েও কেন হিন্দুদের উপাস্য রামের প্রতি এমন ভক্তি তাঁর? কেনই বা তিনি এগিয়ে চলেছেন রাম মন্দিরের পথে? অথচ, সত্যিই কি এমন প্রশ্ন ওঠার কথা ছিল? নাকি এই ছবিটাই ভারতবর্ষের সত্যিকার ছবি হওয়ার কথা ছিল? হয়তো সেই প্রশ্নকেই উসকে দিল এই মুসলিম তরুণীর যাত্রা।
আরও শুনুন: রামের মঙ্গলকামনায় পুজো দেবেন মদ ও মাংস দিয়ে, গঙ্গার কাছে মানত সীতার
তরুণীর নাম শবনম শেখ। না, তাঁকে কেউ রাম মন্দিরে যেতে বাধ্য করেননি। তিনি যাচ্ছেন স্বেচ্ছায়। ঠিক করছেন, পায়ে হেঁটেই যাবেন। মুম্বই থেকে ১৪২৫ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছবেন রামের জন্মভূমিতে। ভেবেই অবশ্য ক্ষান্ত হননি। শুরু করে দিয়েছেন হাঁটা। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে কি পৌঁছতে চান অযোধ্যায়? তেমন কোনও বাধ্যবাধকতা অবশ্য নেই তাঁর। তিনি কেবল জানেন, তিনি রামলালার কাছে পৌঁছতে চান, সে যবেই হোক না কেন। প্রতিদিন তাই হাঁটছেন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার। সঙ্গী দুই যুবক। তাঁরা আবার ধর্মে হিন্দু, রমন রাজ শর্মা এবং বিনীত পাণ্ডে। ধর্ম আলাদা, কিন্তু পথের ধর্ম তো নানা মানুষকে একসঙ্গে বেঁধে ফেলাই। তাঁদের সাহায্য করছে স্থানীয় প্রশাসনও। আরও আশ্চর্যের কথা, চলার পথে বহু মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষও উৎসাহ দিয়েছেন শবনমকে। জয় শ্রীরাম ধ্বনি বলে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁকে।
হাঁটতে হাঁটতেই একটা প্রশ্নও তুলেছেন শবনম। রামের ভক্ত হতে গেলে কি হিন্দু হতেই হবে? মুসলিম ধর্মাবলম্বী কেউ কি রামের ভক্ত হতে পারেন না? শবনম নিজেই যেন সেই প্রশ্নের উত্তর। আর শবনমের হাঁটা যেন হয়ে উঠেছে চলমান ভারতবর্ষেরই রূপ। সত্যিই, রামের পুজো করতে গেলে হিন্দু যে হতেই হবে, তার তো কোনও মানে নেই! শবনম তাই বলেন, সবার উপরে ভালো মানুষ হতে দোষ কী!
ভারতবর্ষে নানা মত, নানা দ্বন্দ্ব। তবে, তার মধ্যেই যা থাকে তা হল মেলবন্ধন। সম্প্রীতির আলো। আজকের ভারতবর্ষে সেই আলোই যেন ছড়িয়ে দিচ্ছেন শবনম, শবনম শেখ। প্রমাণ করে দিচ্ছেন, রাম মন্দির শুধু কোনও এক ধর্মের মানুষের নয়। তা ভারতবর্ষের মন্দির।