ভিসা ছাড়াই ঢোকা যাবে পাকিস্তানে। তাও আবার সে দেশের সরকারি অফিসারদের সামনে দিয়েই। কেউ বাধা দিতে আসবে না। ভাবছেন তো, এমন সুযোগ পেতে গেলে উঁচু দরের সরকারি অফিসার বা মন্ত্রী হতে হবে? একেবারেই না! পাকিস্তানের এই বিশেষ জায়গায় ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন যে কোনও সাধারণ মানুষ। কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
‘বজরঙ্গি ভাইজান’ সিনেমার কথা মনে আছে? ভারত-পাক বর্ডার পার করা নিয়ে কী ঝক্কিটাই না পোহাতে হয়েছিল নায়ক সলমনকে। বলাই বাহুল্য, এই কাজ করতে গেলে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে পারেন দুই দেশের নাগরিকই। কিন্তু পাকিস্তানেও রয়েছে এমন এক জায়গা যেখানে যাওয়ার জন্য কোনও ভিসার প্রয়োজন নেই। ভারতীয়রাও প্রতিবেশী দেশের ওই বিশেষ স্থানে যে কোনও সময় ঢুঁ মারতে পারেন।
আরও শুনুন: পাকিস্তানি ক্রিকেটারের স্ত্রী, ভারতীয় তরুণীকে ঘরে ফেরার সুযোগ দিল বিশ্বকাপ
কথা বলছি, পাকিস্তানের কর্তারপুর গুরুদ্বার সম্পর্কে। দেশভাগের সময় পাঞ্জাব প্রদেশের বেশ কিছুটা অংশ পাকিস্তানে চলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার গুরুদ্বার বা মন্দিরগুলিও হয়ে যায় পাকিস্তানের অংশ। সময়ের সঙ্গে যার অনেককিছুই আজ আর নেই। তবে যেটুকু রয়েছে সেখানে এখনও নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন। তেমনই এক গুরুদ্বার হল কর্তারপুর দরবার সাহিব। স্থানীয়রা মনে করেন, এই গুরুদ্বার শিখ ধর্মের প্রবক্তা গুরু নানকের বাড়ি। এখানেই জীবনের শেষ সময়টা কাটিয়েছেন নানক। তাই শিখ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই স্থানের মাহাত্ম্য যথেষ্টই। প্রতিদিন হাজারও ভক্তের ভিড় জমে এখানে। আশ্চর্যের বিষয়, এদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই সবথেকে বেশি থাকে। অথচ এর দূরত্ব ভারত-পাক বর্ডার থেকে অন্তত কয়েক কিলোমিটার। বিখ্যাত রবি নদীর ধার বরাবর কর্তারপুর শহর। যার পাশে অবস্থিত দরবার সাহিব গুরুদ্বার। সেখানেই পৌঁছতে গেলে স্রেফ ভারত-পাক বর্ডার পেরোতে হবে তাই নয়, অনেকটা রাস্তা পার করতে হবে গাড়ি বা অন্য কিছুতে।
আরও শুনুন: অষ্টমীর পুজোপাঠ থেকে দশেরা পালন, রাম নামও উচ্চারণ করেন পাকিস্তানের এই ক্রিকেটার
এখন প্রশ্ন হল, এতটা রাস্তা কীভাবে পার করেন ভারতীয়রা?
এমনিতে পাকিস্তানে ঢুকতে গেলে হাজার ঝক্কি পোহাতে হয়। আগে থেকে ভিসার অনুমতি চাইতে হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। অনুমতি যে মিলবেই তার কোনও মানে নেই। দুই দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের জেরে পাকিস্তানের ভিসা পাওয়া যথেষ্ট কঠিন কাজ বলেই মনে করেন অনেকে। বাস্তবে হয়ও তাই। তবে সেই নিয়ম পাকিস্তানের অন্যান্য অংশের জন্য প্রযোজ্য। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। পাকিস্তানের কর্তারপুর শহরটিকেই প্রায় ভিসা-ফ্রি বলা চলে। অর্থাৎ এখানে যেতে গেলে কোনও ভিসার প্রয়োজন নেই। তাই প্রতিদিন হাজার হাজার ভারতীয় নিশ্চিন্তে পাক বর্ডার পেরিয়ে এই গুরুদ্বারে হাজির হন। যদিও এখানে যাওয়ার জন্য একেবারে কোনও নিয়ম নেই এটা বলা যায় না। আগে থেকে ব্যবস্থা করতে হয় অনুমতি পত্রের। সেই কাজও বিশেষ ঝক্কির নয়। প্রথমে অনলাইনে গুরুদ্বারের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন জানানো। তার ওপর পরিচয় পত্র সব যাবতীয় নথি সেখানে জমা দিলেই কাজ শেষ। কিছুদিনের মধ্যে ই-মেইল মারফত চলে আসবে অনুমতি পত্র। যা সঙ্গে রাখলে পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখতে কেউ বাধা দেবে না। তবে শর্ত একটাই, সকালে গেলে অবশ্যই বিকেলের মধ্যে ফিরতে হবে। কোনওভাবেই ভিনদেশে রাত কাটানো যাবে না। কিন্তু তাতে কি! এইটুকু শর্ত মেনেই গুরুদ্বারে ছোটেন শিখ ধর্মাবলম্বীরা। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ভিসা ছাড়া পাকিস্তানে যান ভারতীয়রা।