সকালে ভৈরবী, সন্ধ্যায় ভজন। খেয়াল, ঠুমরী সবই চলে। কোনও বাড়িতে বা মন্দিরে নয়, এইসব নিয়মিত শোনা যায় এক গো-শালায়। অবশ্য কোনও মানুষের জন্য নয়, ওই খেয়াল বা ভজন গোরুর জন্য। এতেই নাকি গোরু বেশি দুধ দেয়। কোথায় রয়েছে এমন অদ্ভুত গো-শালা? আসুন শুনে নিই।
গান শুনতে কে না ভালোবাসে! শিশুরাও গানের সুরে কান্না থামায়। কিন্তু কোনও চারপেয়ে জন্তু গান শুনে খুশি হচ্ছে এমনটা শুনেছেন? দক্ষিণের এক গোশালায় এমওনটাই হয়। সেখানকার গোরুদের রোজকার রুটিনে রয়েছে ভজন শোনার অভ্যাস। আর এই গান শুনেই নাকি বেশি করে দুধ দেয় ওই গরুর পাল।
আরও শুনুন: নিয়মিত গোরুকে খেতে দিলে কাটে গ্রহের দোষ, আর কোন প্রাণীকে খাওয়ালে ভাগ্য ফেরে?
কথা বলছি, কেরালার এক গোশালা সম্পর্কে। সেখানকার পেরিয়া অঞ্চলের এই গোশালার নাম ‘গোকুলম’। যা আসলে শ্রীকৃষ্ণের গোকুল থেকে অনুপ্রাণিত। কৃষ্ণ যেমন গোরু চড়াতে গিয়ে বাঁশি বাজিয়ে শোনাতেন, তেমনই গোকুলমের গোরুও নিয়মিত গান শোনে। আর এই অভ্যাস আজকের নয়। প্রায় বছর কুড়ি আগে থেকেও এখানকার গোরুগুলিকে নিয়মিত গান শোনানো হত। কর্তৃপক্ষের দাবি, এর জেরে ওই গোরুগুলি দুধ দেওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে। তখন অবশ্য কোনও লাইভ পারফরম্যান্স হত না। অর্থাৎ রেকর্ডেড গান বা যন্ত্রসঙ্গীত বাজিয়ে শোনানো হত গোরুকে। তাতেও আগে যা দুধ হত, তার থেকে অন্তত ২ লিটার করে দুধ বেশি দিতে শুরু করে গোকুলমের প্রতিটি গোরু। এর কারণ খুঁজতে বেশ কিছুদিন গবেষণা চালায় কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিদেশি ইউনিভার্সিটিতেও আয়োজন করা হয় বিশেষ গবেশনার। সেখানেই দেখা যায় সত্যি গান শুনলে গোরুর মনের উপর তার প্রভাব পড়ে। যার দরুন গোরু বেশি দুধ দিতেই পারে। এরপর থেকেই নিয়মিত গোকুলমে গানের আসর বসানোর ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। মূলত যন্ত্রসংগীতই শোনানো হত। তবে সেখানে ভজন, খেয়াল, রাগাশ্রয়ী গান সবই চলত। এর থেকেই আরও একটা ব্যাপার লক্ষ করে গোশালা কর্তৃপক্ষ। রাগাশ্রয়ী গান শোনার দিকেই বেশি ঝোঁক গোরুর পালের। বিশেষ করে ভৈরবী রাগ। তাই এই রাগ গোরুর রোজকার রুটিনে যোগ করে দেয় গোশালা কর্তৃপক্ষ।
আরও শুনুন: গরুর খুরে পিষ্ট হলেই পুণ্য লাভ, মধ্যপ্রদেশে দীপাবলির আবহে অভিনব কাণ্ড ভক্তদের
বর্তমানে কেরালার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে গোকুলম। সকালে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যে কেউ সেখানে যেতে পারে। গোরুর দুধ কিংবা দুগ্ধজাত নানা জিনিস বিক্রিও হয়। যা একেবারে খাঁটি বলেই দাবি করেন সেখানকার লোকজন। শুধু তাই নয়, গোরুকে গান শোনানোর জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পীরা হাজির হন। তালিকায় বিখ্যাত বেহালা বাদক এল.সুব্রাহ্মণও রয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণের স্থানীয় শিল্পীরা তো আছেনই। যন্ত্র সংগীতের পাশাপাশি কন্ঠ্য শিল্পীরাও এখানে অনুষ্ঠান করতে আসেন। সেখানে গোরুকে বিনোদন দেওয়াই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। আর এমনটা হয় প্রায় রোজই। বিশেষ দিনে ব্যবস্থা করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠানেরও। জন্মাষ্টমী বা কৃষ্ণ সম্পর্কিত উৎসবেও গানের আসর বসে। এইসময় পর্যটকদের ভিড়ও থাকে চোখে পড়ার মতো। সবমিলিয়ে গানের সুরে প্রতিদিন মেতে থাকে গোকুলমের সমস্ত গোরু