নতুন বছরের শুরুতেই রাম মন্দিরের উদ্বোধন। রাজকীয় অনুষ্ঠানের প্রহর গুনছে গোটা দেশের গেরুয়া শিবির। তবে এই মুহূর্তের জন্য দীর্ঘ ৩৪ বছর অপেক্ষা করেছেন রাম মন্দিরের স্থপতি চন্দ্রকান্ত সোমপুরা। কেন জানেন? আসুন শুনে নিই।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর মিলেছিল বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির তৈরির অনুমতি। ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। তারপরই জোর কদমে শুরু হয় মন্দির তৈরির কাজ। তবে রাম মন্দির কেমন দেখতে হবে সেই নকশা তৈরি হয়েছিল প্রায় তিন দশক আগে। আর সেই কাজ করেছিলেন বিখ্যাত স্থপতি চন্দ্রকান্ত সোমপুরা।
আরও শুনুন: রাম নামে মুছবে ভেদাভেদ! অযোধ্যার মন্দির উদ্বোধনে আমন্ত্রণ মুসলিমপ্রধান দেশগুলিকেও
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এতদিন আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল রাম মন্দিরের নকশা?
তাহলে খুলেই বলা যাক। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, রামমন্দির উদ্বোধনের দিনক্ষণ। সব ঠিক থাকলে লোকসভা ভোটের আগে দরজা খুলছে রাম মন্দিরের। এখনই সাধারণ ভক্তদের প্রবেশের অনুমতি নেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও চাইলেই সবাই যেতে পারবেন না। কিন্তু তাতে কি! রাজকীয় অনুষ্ঠান ঘিরে উত্তেজনার কমতি নেই গোটা দেশের রামভক্তদের। রামলালার মূর্তি স্থাপনের পর কেমন দেখতে লাগবে গর্ভগৃহ, সেই ছবি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাঁরা। তবে সেই তালিকায় সবার উপরে নাম থাকবে চন্দ্রকান্ত সোমপুরা। কারণ এই মুহূর্তের জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩৪ বছর। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এত বছর আগেই তিনি রাম মন্দিরের নকশা তৈরি করে ফেলেন। তারপর নদীতে বহু জল গড়িয়েছে। রাম মন্দির উদ্বোধনের আবহে প্রকাশ্যে এল চন্দ্রকান্তের সেই কাহিনী।
আরও শুনুন: সেজে উঠবে অযোধ্যার মন্দির, রামের মূর্তি বানাচ্ছেন বাংলার জামালউদ্দিন
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন যেখানে রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে তা বহু বছর আগে দেখতে গিয়েছিলেন চন্দ্রকান্ত। সময়টা ১৮৮৯ সাল। সেইসময় অযোধ্যা ভ্রমণে চন্দ্রকান্তের সঙ্গী ছিলেন তৎকালীন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রধান অশোক সিংহল। তিনিই চন্দ্রকান্তকে রাম মন্দিরের নকশা তৈরির দায়িত্ব নিতে বলেন। তবে তখনকার পরিবেশ আজকের তুলনায় অনেকটাই আলাদা ছিল। শোনা যায়, সেই সময় চন্দ্রকান্তকে ওই অঞ্চলের জমি মাপার জন্য কোনও ফিতে পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। অগত্যা পা দিয়ে জরিপ করে জমির মাপ আন্দাজ করেন তিনি। এবং সেই ভিত্তিতেই বানিয়ে ফেলেন নকশা। একটা নয়, নতুন মন্দিরের বেশ কয়েকটা নকশা তৈরি করেন চন্দ্রকান্ত। বোঝানোর সুবিধার্থে সেই নকশা অনুযায়ী তৈরি করেন কাঠের মডেলও। যা দেখানো হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মকর্তাদের। এরপর সেই মডেল দেখেন কুম্ভ মেলার সাধুরা। তাঁরাই কার্যত ঠিক করে দেন কোন মডেলের আকারে তৈরি হবে রাম মন্দির। এরপরও অপেক্ষা করতে হয় বেশ কয়েক বছর। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী মন্দির তৈরির কাজ শুরু হওয়ার গ্রিন সিগন্যাল পায়। এইসময় মন্দিরের নকশায় ফের বদল হয়। ঠিক হয় আগের তুলনায় আকারে আরও বড় হবে রাম মন্দির। মোটামুটি এই সময় থেকেই একটু একটু করে মন্দিরের কাজ শুরু করে দেন চন্দ্রকান্ত। প্রথমে শুরু হয় পাথর খোদাইয়ের কাজ। ২০১৯ সালে চন্দ্রকান্ত ঘোষণা করেন প্রায় ৪০% কাজ হয়ে গিয়েছে। এরপর মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। আর দিনরাত এক করে কাজ শুরু করেন শিল্পীরা। বছর তিনেকের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তাই এই মুহূর্তে সেই দিনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন চন্দ্রকান্ত। তবে এই প্রথম নয়, সোমপুরা পরিবার দেশের আরও কিছু বিখ্যাত মন্দিরের নকশা করেছে। বিশেষ করে চন্দ্রকান্তের বাবা প্রভাকর সোমপুরা। গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের নকশা তাঁর তৈরি। এ ছাড়া মথুরা, পালানপুর সহ একাধিক জায়গায় বিখ্যাত সব মন্দিরের নকশা তৈরি করেন প্রভাকর। চন্দ্রকান্তের ঝুলিতেও স্বীকৃতির কমতি নেই। পুত্র আশিসের সঙ্গে মিলে এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১৩১টি মন্দিরের নকশা তৈরি করেছেন চন্দ্রকান্ত। যার মধ্যে রয়েছে গান্ধীনগরের স্বামী নারায়ণ মন্দির, পালানপুরের অম্বাজি মন্দির-সহ আরও অনেক মন্দির। প্রতিটিই স্থাপত্যের দিক দিয়ে অনন্য বলা চলে। এবার সেই তালিকায় যোগ হল অযোধ্যার রাম মন্দির। বলা বাহুল্য, চন্দ্রকান্ত একেই জীবনের সেরা স্বীকৃতি হিসেবে মনে করছেন। আগামী তিন বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ মন্দির তৈরি হয়ে যাবে বলেও বিশ্বাস বর্ষীয়ান স্থপতির।