কঠোর ভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। কোনও কোনও সিনেমার জন্য বরাদ্দ হয় এই অভিধা অর্থাৎ সিনেমা পায় ‘ওনলি ফর অ্যাডাল্টস্’ সার্টিফিকেট। এরকম বহু সিনেমার কথাই মনে পড়ে। তবে, দেশে প্রথম প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সিনেমা কোনটি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’! এ-কথা বললে প্রথমেই যাঁর কথা মনে আসে, তিনি মধুবালা। পাঁচ কিংবা ছয়ের দশকে ভারতীয়, বিশেষত হিন্দি সিনেমার দুনিয়াকে যাঁরা সৌন্দর্যে আর কল্পনার মাধুর্যে ভরিয়ে দিয়েছিলেন, মধুবালা তাঁদেরই একজন। তিনি যেন চিরন্তন সেই প্রেমিকা যাঁর সামনে নতজানু হয় সময়। আর কয়েক দশক পেরিয়ে এসেও তাই অম্লান হয়ে থাকে মধুবালার ম্যাজিক।
আরও শুনুন: স্মৃতি-বিস্মৃতি, ‘পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট সেক্স’ আর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা এক ‘ইমানদার’
অবশ্য যাকে আমরা ম্যাজিক বলে থাকি, তার নেপথ্যে থাকে পরিশ্রম এবং চিন্তা-ভাবনা। শুধু সৌন্দর্যে তো তিনি মুগ্ধ করেননি। অভিনয়ের যে অভূতপূর্ব চিহ্ন তিনি পর্দায় রেখেছিলেন, তা আজও নির্বিকল্প। শুধু চোখের চাহনিতেই পর্দায় রোম্যান্টিক কাব্য লেখার অভাবনীয় ক্ষমতা ছিল বলেই, আজও সেই অন্ত্যমিলে বুঁদ হয়ে থাকে দর্শক। মধুবালা তাই শুধু অতীতের অভিনেত্রী হয়েই থাকেন না, হয়ে ওঠেন ভারতীয় সিনেমার অন্যতম আইকন। পুরুষপ্রধান ইন্ডাস্ট্রিতেও তিনি তৈরি করতে পারেন তাঁর সাম্রাজ্য। আর তিনি হয়ে ওঠেন দর্শক-হৃদয়ের অদ্বিতীয় সম্রাজ্ঞী। খেয়াল করলে দেখা যাবে, যে যে চরিত্র তিনি বেছেছেন তা-ও বেশ ছক ভাঙা। চরিত্র বাছার এই মুনশিয়ানা খুব সহজ ব্যাপার যে নয়, তা আমরা সকলেই জানি। যে চরিত্র সময়ের অন্তরের গোপন বাসনাকে পূরণ করে সেই চরিত্রই অভিনেতাকে অমর করে দেয়। আর এই ক্ষেত্রে মধুবালার চরিত্র বেছে নেওয়া ও তাতে রূপদান দুই-ই ছিল বেশ সাহসি এবং বলিষ্ঠ।
আরও শুনুন: বোল্ড সিনে ট্রোলড! হালফিলের সফল হিন্দি ছবির নায়িকা তিনিই, চেনেন এঁকে?
সেরকমই একটি চরিত্র ছিল ঊষা। ছবির নাম ‘হাসতে আঁসু’। নায়িকা উষা নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল। সে সময়ে অনেক মেয়েকেই হয়তো এমন সিদ্ধান্তের শিকার হতে হত। হয়তো অনেকেই তা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইতেন। তবে, পারতেন কই! সিনেমা যেন সেই ইচ্ছেকেই পর্দায় বাস্তব করে তুলল, আর সেই পথে গিয়ে গেলেন মধুবালা ওরফে ছবির উষা। ছবির গল্প অনুযায়ী স্বামী কোনওভাবে উষার মেধা, স্বাতন্ত্র মেনে নিতে পারে না। তা গড়ায় শারীরিক হেনস্তাতে। প্রতিবাদে একদিন ঘর ছাড়ে উষা। মাথায় রাখতে হবে, এ সিনেমা হচ্ছে ১৯৫০ সালে। সে সময়ে দাঁড়িয়ে নায়িকার এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট সাহসি। উষার সন্তান হয়, তবে সে প্রথাগত সংসারে ফিরে যাওয়ার পথ ধরে না। বরং শুরু করে নিজের লড়াই। একটি কারখানায় কাজ নেয়। সেখানে পুরুষ সহকর্মীদের টিপ্পনি ছুটে আসে তার প্রতি। দমে যায় না উষা, লড়াই করে সন্তানকে বড় করতে থাকে। উড়িয়ে দেয় সব প্রতিবন্ধকতাকে। শেষমেশ উষার স্বামীকে এসে ক্ষমা চাইতে হয় তার কাছে। এই গল্পের ভিতরই একজন আধুনিক স্বনির্ভর নারীর স্বাতন্ত্র উঠে এসেছিল সেই পাঁচের দশকে। আর এই উষা চরিত্রে বাজিমাত করেছিলেন মধুবালা। ছবিতে কমেডির ছোঁয়া ছিল, ছিল নানা নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা। তবে, তার মধ্য দিয়েই বলিষ্ঠ বার্তা দিয়েছিলেন পরিচালক।
এরকম একটা সাহসি চরিত্রে রূপদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেদিন মধুবালা। তবে, এই ছবি আরও একটি কারণে স্মরণীয়। গোটা দেশে এই ছবিটিই প্রথম পেয়েছিল ‘অ্যাডাল্টস সার্টিফিকেশন’। বিতর্কিত, বহুল আলোচিত ছবিটি বরাদ্দ হয়েছিল কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই। ১৯১৮-এর যে ‘ইন্ডিয়ান সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট’ তার পরিবর্ধন হয় ১৯৪৯-এ। আর ১৯৫০-এ এসে ‘হাসতে আঁসু’পায় প্রাপ্তবয়স্কের জন্য প্রথম ছাড়পত্র। মধুবালা যে চরিত্র নির্বাচনে অত্যন্ত সাহসি ছিলেন, এই তথ্য যেন আমাদের সে কথাই জানিয়ে দেয়।