ধর্ষণ বন্ধ করতে চান? তাহলে নারীকে সম্পত্তি কিংবা স্রেফ যৌন সুখের সামগ্রী ভাবা বন্ধ করুন। এমনটাই বলছে খোদ আদালত। ঠিক কোন প্রসঙ্গে উঠে এল এই পর্যবেক্ষণ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সমাজ থেকে যৌন হেনস্তার মতো অপরাধ রুখতে হলে আগে বদল আনতে হবে ভাবনাতেই, সাফ মত আদালতের। সেই ভাবনা কী? নারীকে যৌন সুখ পাওয়ার উপকরণ ভাবা। এহেন ভাবনা বদলাতে হবে, আর তাহলেই ধর্ষণের প্রবণতায় অনেকখানি বাঁধ দেওয়া সম্ভব, এমনটাই মনে করছে গুজরাট আদালত।
সম্প্রতি এক মামলার প্রেক্ষিতেই ধর্ষণ রোখার প্রসঙ্গে মত প্রকাশ করেছে গুজরাটের উচ্চ আদালত। নারীর প্রতি ধর্ষণ বা যৌন হেনস্তার মতো যেসব অপরাধ ঘটে, তাদের শিকড় আসলে রয়ে গিয়েছে সমাজের গভীরেই। এমনটাই মনে করছে আদালত। আদালতের পর্যবেক্ষণ, আসলে সমাজে নারীর প্রতি যে ভাবনা জারি রয়েছে, তা-ই অনেকাংশে বড় ভূমিকা নেয় এই জাতীয় অপরাধ সংঘটনে। আর সেই সমাজের একটা বড় অংশই নারীকে স্রেফ কোনও পুরুষের সম্পত্তি বলেই মনে করেন। নারীরও যে আলাদা একজন মানুষের মর্যাদা প্রাপ্য হতে পারে, এই যুগে দাঁড়িয়েও অনেকেই তা ভেবে উঠতে পারেন না। আর যেহেতু তার স্বাধীন মতামতের কোনও দাম দেওয়া হচ্ছে না, ফলে নারীকে স্রেফ যৌন সুখের সামগ্রী হিসেবে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যায়, এমন ভাবনাও এসেই যায়। সেখানে যদি কোনও নারী সেই আচরণের পালটা রুখে দাঁড়ান, তাহলে ওই ভাবনায় অভ্যস্ত পুরুষের অহংয়ে আঘাত লাগবে। আর তার জেরেই জোর করে দখল করার প্রবৃত্তি আসবে, যা থেকে হেনস্তা বা ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
গুজরাটের বোতাড় অঞ্চলে একটি ৯ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ করে হত্যা করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এক ব্যক্তি। বছর ৩৯ বয়সের ওই ব্যক্তিকে সেই অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন স্পেশাল পকসো কোর্টের বিচারপতি ডি জি রানা। আর এই প্রসঙ্গেই বিচারপতির মন্তব্য, আসলে ধর্ষণের নেপথ্যে এই ভাবনা কাজ করে চলে যে সম্পত্তির মতোই মেয়েরা স্রেফ কোনও বস্তু যাকে দখল করা যায়, অধিকার করা যায়। আর সেই সম্পত্তি দখলের মধ্যে দিয়েই পৌরুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ সম্ভব, এমনটাই ধারণা অনেকের। সুতরাং কেবল শাস্তি দিয়েই যে এই অপরাধপ্রবণতাকে রুখে দেওয়া সম্ভব নয়, বরং তার উৎস সন্ধান করে সেই শিকড় থেকেই এই প্রবণতাকে সমূলে উৎপাটিত করতে হবে, সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে আদালত।