বিশ্বকাপে তীরে এসে তরী ডুবেছে ভারতের। তা নিয়ে ক্রিকেটার এবং সমর্থকদের মধ্যে বেজায় হাহুতাশ। কেউ কেউ আবার হার সত্ত্বেও যেন তা মেনে নিতে রাজি নন। তবে, পরাজয় যখন হয়েছে, তখন তার কারণও আছে। আর তা নিয়ে ময়নাতদন্তও জরুরি। সেই কাজটাই করলেন গৌতম গম্ভীর। সাফ বলে দিলেন ঠিক কী কারণে হেরেছে ভারত। আসুন, শুনে নিই।
তিনি যেমন স্পষ্টবক্তা, তেমনই অসাধারণ তাঁর ক্রিকেট-দর্শন। খেলায় আবেগ থাকা জরুরি। তার সঙ্গে দরকার নিখুঁত পরিকল্পনা ও তার বাস্তব প্রয়োগ। আর সেই নিরিখেই যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পরে তা হল, ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা জানেন, এই বিষয়ে গৌতম গম্ভীরের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। আইপিএল হোক বা অন্য টুর্নামেন্ট, ফর্ম্যাট অনুযায়ী গম্ভীর ম্যাচ ধরে ধরে যেভাবে মতামত জানান, তা অনেককেই অবাক করে দেয়। স্পষ্ট হয়ে যায়, প্রায় নীরবেই খেলার রাশ কীভাবে নিজের মুঠোয় রাখতে হয়, সে কথাই বারবার বলতে থাকেন তিনি।
আরও শুনুন: কান্না ক্রিকেটারদের, কষ্ট সমর্থকদের, তবু ভারতের হারে লাভ সেই রাজনীতিরই
বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচেও একটা সময় খেলার রাশ ভারতের হাত থেকে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার দিকে। আর তা নিয়েই একেবারে চাঁচাছোলা বিশ্লেষণ করলেন গম্ভীর। তাঁর সাফ কথা, এটা ১৯৯০ সাল বা নয়ের দশক নয়। এখনকার ম্যাচে ২৪০ রান পর্যাপ্ত নয়। অর্থাৎ এখনকার ক্রিকেট খেলা হবে আধুনিক ভঙ্গিতেই। সেই আধুনিকতা পরিকল্পনা, আগ্রাসন এবং সাহসে। খেলায় ঝুঁকি নিতে জানতে হবে। গম্ভীর তাই বলছেন, অনেক সময়ই পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে, যেন যেতেও কাটে আসতেও কাটে। ঠিক যেন দু-দিক ধারালো এমন তরবারির মুখোমুখি হওয়া। আর তাই তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, একমাত্র যাঁরা এইসব ক্ষেত্রে সাহসি হতে পারবেন, তাঁরাই বিশ্বকাপ জিতবেন।
গম্ভীরের মূল বক্তব্য সেদিনের ম্যাচে ভারতের মোট রান নিয়ে। প্রত্যাশিত ভাবেই, ২৪০ রানের পুঁজি নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নন। তাঁর মতে, ১৫০ রানে যদি সব শেষ হয়ে যেত তা নিয়ে বলার কিছু ছিল না। নয়তো স্কোরবোর্ডে ৩০০ রান অন্তত দরকার। তবে, এর মাঝামাঝি রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই জমে না। সারা বিশ্ব দেখেছে, একটা সময় রোহিত শর্মা আউট হওয়ার পর ভারতের ব্যাটিং মন্থর হয়ে যায়। গম্ভীরের মত, কোহলিকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা তিনি পালন করেছিলেন। পার্টনারশিপ গড়ে তোলাও জরুরি ছিল। তবে, তার জন্য ১১ থেকে ৪০ ওভার পর্যন্ত সময় নিলে খুব মুশকিল। ওই পরিস্থিতিতে সাহসী হয়ে কাউকে ঝুঁকি নিতে হত বলেই মত তাঁর। এমনকী, গম্ভীরের দাবি, অধিনায়ক রোহিতের বলে দেওয়া উচিত ছিল যে, তিনি আউট হলেও যেন ভারত আগ্রাসী মনোভাব থেকে সরে না যায়। এর আগেও গম্ভীর আগ্রাসী ক্রিকেটের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। টি-২০ ক্রিকেটেও ভারতকে যে আরও আক্রমণাত্মক খেলা খেলতে হবে, এমনটাই বলেছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: শুধু ধর্ম ধর্ম! তোমার ক্রিকেট নেই, ভারতবর্ষ!
গৌতম গম্ভীরকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন এই আগ্রাসী মনোভাব তাঁর সহজাত। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে চাপের মুখে তাঁর ৯৭ রানের ইনিংস কেউই ভোলেননি। সেদিন ওইভাবে ইনিংসের ভিত না গড়ে দিলে ম্যাচের ভাগ্য কী হত বলা মুশকিল। পরবর্তীকালে মেন্টর হিসাবেও গম্ভীর যে দলের দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই দলকে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতেই উৎসাহিত করেছেন। ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়েও তাঁর মত একই। কোথাও যেন সাহস আর আগ্রাসনের ঘাটতিই ডুবিয়েছে ভারতকে। সে কথা বলতে দ্বিধা করলেন না গম্ভীর।