পাণ্ডবদের দেওয়া কৃষ্ণমূর্তিই বিপদ ডেকে আনছে। তাই বিসর্জন দেওয়া হল সেই মূর্তিকে। নিছক পাঠ্যবইয়ের একটি গল্পে ছিল এ কথা। কিন্তু এহেন গল্প আসলে হিন্দু ভাবাবেগকেই আঘাত করছে, এই মর্মে এবার হুলুস্থুল তেলেঙ্গানায়। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ধর্মের ইস্যুতে বিতর্ক উসকে উঠল তেলেঙ্গানায়। সরকারি পাঠ্যবইয়ের একটি গল্পকে ঘিরেই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের দাবিতে সরব হয়েছে হিন্দুত্ববাদী শিবির। গল্পটিতে দেখানো হয়েছিল, ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষ্ণমূর্তিকে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এমন মনোভাব হিন্দু ধর্মকে অপমান করছে বলেই দাবি হিন্দুত্ববাদীদের। যার জেরে শাসক দল বিআরএস-এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একযোগে জোর আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
কী ঘটেছে ঠিক?
আরও শুনুন: তাঁর ভিডিওতে রশ্মিকার মুখ! ভাইরাল ডিপ ফেক ভিডিও-র তরুণী আসলে কে?
জানা যাচ্ছে, তেলেঙ্গানা সরকারের চালু করা পাঠক্রম অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণিতে তেলুগু ভাষার যে সরকারি বই পড়ানো হয়, তাতেই রয়েছে এই গল্পটি। চলতি শিক্ষাবর্ষেই এই বই চালু করেছিল স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং। সেখানে ‘মানা ঝান্ডা’ অর্থাৎ ‘আমাদের পতাকা’ নামের গল্পটিতে রয়েছে চেয়রালা নামে এক অঞ্চলের কথা, যে অঞ্চলের উপর দিয়ে পাণ্ডবরা মহাপ্রস্থানের পথে গিয়েছিলেন। গল্পে বলা হয়েছে, যাওয়ার সময় এখানকার বাসিন্দাদের একটি কৃষ্ণমূর্তি দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই মূর্তিটিই বিপদ ডেকে আনে। বাসিন্দাদের মনে হয়, ওই মূর্তির কারণেই নানারকম বিপাকে পড়ছেন তাঁরা। তাই শেষমেশ কোনও স্থানীয় সাধুর পরামর্শে মূর্তিটিকে বিসর্জন দেওয়া হয়।
আরও শুনুন: মুসলিমদের কাছে ভোট চাওয়া মানেই অপমান! কেন বললেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা?
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, এই গল্পের সঙ্গে মহাভারতের কোনও যোগ নেই। সুতরাং পাণ্ডবদের নাম উল্লেখ করে এমন গল্প পড়ানোর মানে হয় না। তবে সত্যি বলতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বা স্থানের বদল ঘটলে যে পুরাণ-মহাকাব্যে কিছু প্রক্ষেপ ঘটে, তেমনটা তো বলেন বিশেষজ্ঞরাই। মহাকাব্য তো আসলে এক বিরাট সময়ের, বিরাট অঞ্চলের মানুষের কথা- তাই তাঁরা এই সমস্ত জনশ্রুতি, চলতি গল্প, সবকিছুকে মিলিয়েই মহাকাব্যকে পড়তে চান। কিন্তু সে যুক্তিকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে হিন্দুত্ববাদী শিবির। এহেন গল্প মহাভারতের বিকৃতি ঘটাচ্ছে, শিশুদের মধ্যেও ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারণার জন্ম দিচ্ছে- এমন একাধিক অভিযোগে শাসক দল বিআরএস-কে কড়া তোপ দেগেছে বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। বিক্ষোভের সামনে সরকারি পাঠক্রম কমিটির বক্তব্য, ভুল করেই ওই গল্পটি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, পরের শিক্ষাবর্ষে তা সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তার আগেই শিশুপাঠ্য এই গল্পকে কেন্দ্র করে রাজনীতির রং লাগল তেলেঙ্গানার রাজনৈতিক লড়াইয়ে।