নবাব ধর্মে মুসলিম। তবুও নাকি এই মন্দিরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। দুরারোগ্য অসুখ থেকে রেহাই পাওয়ার আশাতেই এখানে এসেছিলেন মিরজাফর। কোথায় রয়েছে সেই মন্দির? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ধর্মের জেরে মানুষের মাঝে দেওয়াল ওঠে। আবার সেই ধর্মই মেলায়। আর সেই সম্প্রীতি ও সমন্বয়ের কথা বারবার সত্যি হয়েছে এই বাংলায়। অতীতের দিকে যত তাকানো যায়, দেখা যায় ছড়ানো আছে সেই সমন্বয়ের চিহ্ন। তেমনই এক গল্প বলে দেবী কিরীটেশ্বরীর মন্দির। কথিত আছে, এই মন্দিরে নাকি এসেছিলেন খোদ বাংলার নবাব মিরজাফর। আবার এই মন্দিরকে শাক্তপীঠ বলেও ভক্তি করেন হিন্দুরা। সবটুকু মিলেমিশেই খ্যাতি এই প্রাচীন মন্দিরের।
আরও শুনুন: ব্রহ্মময়ী কালীর উপাসনায় গান বেঁধেছিলেন অন্য ধর্মের কবি-সাধকরাও
এমনিতে বাংলায় জাগ্রত শক্তিপীঠের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তার মধ্যে এমন কিছু পীঠস্থান আছে, যেগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই সব পীঠে বহু ভক্ত উপকৃত হয়েছেন বলে শোনা যায়। তেমনই কাহিনি জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দিরের সঙ্গে। ৫১ সতীপীঠের অন্যতম এই কিরীটেশ্বরী মন্দির। মুর্শিদাবাদের প্রাচীনতম মন্দিরগুলোর একটি। শোনা যায় শংকরাচার্যের সময়, এমনকি গুপ্ত যুগেও কিরীটেশ্বরী মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। এখানে দেবী সতীর কিরীট বা মুকুট পড়েছিল বলেই বিশ্বাস ভক্তদের। মন্দিরে পূজিতা দেবীর নাম শাক্তমতে বিমলা। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মূল মন্দিরটি আর অক্ষত নেই। বর্তমানের মন্দিরটি ১৮ শতক নাগাদ তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই মন্দিরের কিরীটও রানি ভবানীর তৈরি গুপ্ত মঠে স্থানান্তরিত করা হয় বলেই শোনা যায়। ফলে দেবী বিমলার আসল মন্দির যে কোনটি, তা নিয়েও মতভেদ রয়ে গিয়েছে।
আরও শুনুন: বাংলায় প্রথম মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা করতেন গঙ্গাদেবীর পুজোও, জানেন কে তিনি?
কিন্তু প্রশ্ন জাগে, এহেন এক শক্তিপীঠে বাংলার নবাব আসবেন কেন?
আসলে পুরোনো ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক প্রচলিত গল্পও। তা জানায়, সিরাজ-উদ-দৌলাকে হঠিয়ে বাংলার মসনদ দখল করলেও, মিরজাফরের ভাগ্যে রাজা হওয়া অতটাও সুখের ছিল না। তিনি যে বিদেশিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবাবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, এর ফলে নবাবের পরিবার তাঁকে শাপশাপান্ত করতে ছাড়েনি। জনশ্রুতি বলে, কোরান ছুঁয়ে নাকি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মিরজাফর, তাই শেষে কুষ্ঠ হয় তাঁর। কিরীটেশ্বরী মন্দির ঘিরে যেসব জনরব রয়েছে, তা বলে, সেই কুষ্ঠরোগের জ্বালা জুড়োতেই এই জাগ্রত দেবীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাংলার নবাব। দেবীর চরণামৃতও পান করেছিলেন তিনি।
আসলে বাংলা এই সমন্বয়ের কথাই বলে, কখনও জেনেশুনে, কখনও আবার অজান্তেই। যে ধর্ম বিভেদ তোলে, সেই ধর্মের মাধ্যমেই সে মানুষকে বুঝিয়ে দেয়, চাইলে এই দেওয়াল ভেঙে ফেলা যায় সহজেই।