মালা নয়। মূর্তির গলায় ঝুলছে স্টোথোস্কোপ। একইসঙ্গে মূর্তির গায়ে চাপানো রয়েছে সাদা অ্যাপ্রনও। ভাবছেন তো, কোনও কিংবদন্তি চিকিৎসকের মূর্তির কথা বলছি? একেবারেই না। এমন মূর্তি দেখা মেলে বিখ্যাত এক হনুমান মন্দিরে। সেখানে খোদ বজরংবলির মূর্তিটিই ওমনভাবে সাজানো রয়েছে। কেন জানেন? আসুন শুনে নিই।
দেবতার মূর্তিতে সাধারণত মালা দিতেই দেখা যায়। কোথাও কোথাও দামী গয়নাও পরানো হয় মূর্তিতে। কিন্তু মূর্তির গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলতে দেখেছেন কখনও? মধ্যপ্রদেশের এক হনুমান মন্দিরে গেলে তেমন মূর্তিও খুঁজে পাবেন।
আরও শুনুন: নায়িকা ভুলে, রামেই মজে মন! রামমন্দিরে ১১ কেজি সোনা-হিরের মুকুট দিতে চান ঠগ সুকেশ
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এখানে স্বয়ং হনুমানকেই সাজানো হয় ডাক্তারের সাজে। স্থানীয় বিশ্বাস, এই মন্দিরে ভক্তিভরে পুজো দিলে সেরে যেতে পারে যে কোনও রোগ। অনেকেই ভাববেন, এমনটা তো আরও অনেক মন্দিরের ক্ষেত্রেই শোনা যায়। তাহলে মধ্যপ্রদেশের এই মন্দির ঠিক কেন বিখ্যাত?
কারণটা অবশ্যই এই মন্দিরের প্রাচীনতা এবং আরাধ্যের অলৌকিক ক্ষমতা। তবে হ্যাঁ, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। এই মন্দিরের ক্ষেত্রে এই যুক্তি ভীষণভাবে প্রযোজ্য। কারণ এখানে এমন কিছু কিংবদনন্তির প্রচলন রয়েছে যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে অসম্ভব বলা চলে। তার আগে জেনে নেওয়া যাক, এই মন্দির ঠিক কোথায় অবস্থিত? মধ্যপ্রদেশের রাজধানী গোয়ালিওর থেকে ৭০ কিমি দূরে এক গ্রামে এই মন্দির রয়েছে। মন্দিরের আসল নাম দঁদরৌয়া সরকার ধাম। তবে সকলেই এই মন্দিরকে ডাক্তার হনুমানের মন্দির বলেই চেনেন। বিশেষ কোনও রোগ নয়, এই মন্দিরে সারতে পারে যে কোনও অসুখই। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই প্রতিদিন হাজারও ভক্ত ভিড় জমান মন্দিরে। সকলেই কোনও না কোনও রোগে ভুগছেন। মন্দিরে পুজো দিলেই তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠবেন। আর এমনটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে বলেই দাবি স্থানীয়দের। কেউ বলেন ৩০০ আবার কারও মতে ৫০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরের বিগ্রহ। কোনও এক নিমগাছের ভিতর থেকে হনুমান স্বয়ং প্রকট হয়েছিলেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
আরও শুনুন: ৩৪ বছর ধরে ছিলেন অধরা, খোঁজ মিলতেই মেয়ের ‘বাবা’-র বিরুদ্ধে মামলা ঠুকলেন মহিলা
তবে মূর্তির মধ্যে এক অদ্ভুত বিশেষত্ব লক্ষ করা যায়। আর তা হল, মূর্তির দাঁড়ানোর কায়দা। দেখলে মনে হবে, বিগ্রহের হনুমান নৃত্যরত। আর সেইসঙ্গে মূর্তির বিশেষ সাজ, আরও আকর্ষনীয় করে তোলে ডাক্তার হনুমানকে। সাধারণত মূর্তি যেভাবে সাজানো হয়, এখানে একেবারেই সে নিয়ম মানা হয় না। অর্থাৎ মূর্তির গলায় মালার বদলে থাকে স্টেথোস্কোপ, গায়ের উপর রঙিন চাদরের জায়গায় সাদা অ্যাপ্রন। দেখলে মনে হবে, কোনও ডাক্তার দাঁড়িয়ে রয়েছে। যদিও এখানে ভক্তদের কাছে হনুমানই ডাক্তার। তবে ডাক্তাররা যেমন বিশেষ কিছু রোগের স্পেশালিস্ট হন, এই হনুমানও তেমনভাবেই বিশেষ কিছু মারণ রোগ সারিয়ে দিতে পারেন বলে দাবি ভক্তদের। আর সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ক্যানসার। অনেকেই এই মারণ রোগের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন স্রেফ এই মন্দিরে পুজো দিয়েই, এমন কথা মন্দির চত্বরে পা রাখলেই শোনা যায়। শুধু তাই নয়, এইডস, টিবি সহ আরও বেশ কিছু জটিল রোগ সারিয়ে দিতে পারেন এই হনুমান। প্রতিবছর হনুমান জয়ন্তী ও রামনবমীর দিনে বিশেষ উৎসবের আয়োজন হয় মন্দিরে। সেইসময় ভক্তদের ভিড়ও হয় চোখে পড়ার মতো। শুধু স্থানীয় এলাকা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই এই সময় ডাক্তার হনুমানের মন্দিরে পুজো দিতে আসেন ভক্তরা।