বেশ বড় বয়স অবধি নিজের আসল মায়ের নাম জানতেন না কর্ণ। এমনকি পাণ্ডবরা যে তাঁর নিজের ভাই, সে কথাও ছিল অজানা। এক্ষেত্রেও ঘটেছে ঠিক তেমনটাই। তবে মা নয়, এই তরুণী জানতেন না নিজের বাবার পরিচয়। মাঝবয়সে এসে সেই খোঁজ পেয়েছেন, আর আবিষ্কার করেছেন তাঁরও ১৬ জন ভাইবোন রয়েছে। কী হল তারপর? আসুন শুনে নিই।
ছোট থেকে বড় হয়েছেন মায়ের কাছে। বাবার দেখা পাননি কখনও। তাই পরিচয়ও জানতে চাননি। তবে কৌতুহল ছিল বরাবরের। শেষমেশ নিজের বাবার খোঁজ পেলেন তরুণী। কিন্তু তারপরই সেই ব্যক্তির নামে ঠুকলেন মামলা। এবং তিনি একা নন, সঙ্গ দিলেন তরুণীর মা-ও।
আরও শুনুন: জল পর্যন্ত নেই, মুঠো মুঠো ওষুধ খেয়ে পিরিয়ডস পিছোতে মরিয়া গাজার মহিলারা
এই ঘটনা যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। অথচ বাস্তবে ঠিক এমনটাই ঘটেছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আইভিএফ প্রেগন্যান্সি কোনও বিরল ঘটনা নয়। স্বাভাবিক ভাবে সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হলে অনেকেই এই পদ্ধতির সাহায্য নেন। এই ঘটনার কেন্দ্রেও সেই আইভিএফ প্রেগন্যান্সিই রয়েছে। ঘটনাটি মার্কিন মুলুকের। সেখানকার ইডাহোতে প্রায় ৩৪ বছর আছে আইভিএফ করিয়েছিলেন শ্যারন হেইস নামে এক মহিলা। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তানধারণের ক্ষমতা তাঁর ছিল না। একথা জানার পরই, রীতিমতো ভেঙে পড়েন শ্যারন। তখন সেই অঞ্চলের জনপ্রিয় এক চিকিৎসক তাঁকে আইভিএফ-এর কথা বলেন। শ্যারন রাজিও হয়ে যান। তবে শর্ত ছিল, বেছে বেছে উন্নত মানের কোনও শুক্রাণু থেকেই তৈরি করতে হবে ভ্রুণ। বদলে মোটা টাকা দাবি করেন সেই চিকিৎসক। সাধ্যমতো তা দিয়েও দেন শ্যারন। কয়েকদিন পর চিকিৎসক জানান, বিভিন্ন কলেজ পড়ুয়াদের শুক্রাণু সংগ্রহ করে তার মধ্যে সেরার সেরাটা তিনি বেছেছেন। এক্ষেত্রে নিয়ম হল, কার শুক্রাণু ব্যবহার করা হচ্ছে সে ব্যাপারে কিছু জানার অধিকার থাকে না কারও। এমনকি যে মহিলার সন্তান তিনিও জানতে পারেন না, কার শুক্রাণু ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই শ্যারনও জানতেন না শেষমেশ কার শুক্রাণু থেকে তাঁর সন্তানের জন্ম হল। যদিও সে ব্যাপারে মাথা ঘামানোর কথা ভাবেননি শ্যারন। যথেসময়ে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সে দেশে এমন সিংগেল মাদার হওয়া একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই শ্যারন একাই মানুষ করেন নিজের মেয়েকে।
আরও শুনুন: রোজ অফিসে যাওয়ার দরকার নেই! ৭০ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাবে কি অন্য সুর গোয়েঙ্কার?
তবে ঘটনার মোড় ঘোরে সেই মেয়ের বয়স বাড়ার পর। বরাবরই নিজের বাবার পরিচয় জানতে চাইত সেই মেয়ে। কিন্তু যার পরিচয় শ্যারন নিজেই জানেন না, তা কী করে বলবেন মেয়েকে? তাই নানা কথায় ভুলিয়ে রাখতেন। কিন্তু কতদিন আর এভাবে থাকা যায়! বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই মেয়ে নিজেই বাবার পরিচয় খুঁজতে শুরু করে। একসময় তা পেয়েও যায়। জনৈক এক ওয়েবসাইটে নিজের ডিএন-এ নমুনা দিয়ে শ্যারন কন্যা জানতে পারে তার বাবা আসলে কে। হিসাবমতো ওই ব্যক্তির কোনও মাঝবয়সী পুরুষ হওয়ার কথা। কারণ চিকিৎসক শ্যারনকে জানিয়েছিলেন, জনৈক কলেজ পড়ুয়ার বীর্য ব্যবহার করেই তাঁর আইভিএফ করা হয়েছে। কিন্তু না, জানা যায় তরুণীর আসল বাবা ওই চিকিৎসক নিজেই। অর্থাৎ তিনি বিপুল অঙ্কের টাকা নিলেও, আদতে নিজের শুক্রাণু ব্যবহার করেন শ্যারনের সন্তাকে পৃথিবীতে এনেছেন। শুধু তাই নয়, একইভাবে আরও অনেককে ঠকিয়েছেন ওই চিকিৎসক। শ্যারণ কন্যা আবিস্কার করেন, স্রেফ ওই এলাকাতেই আরও ১৬ জনের সঙ্গে তাঁর ডিএনএ ম্যাচ করছে। অর্থাৎ এঁদের সকলেরই ওই চিকিৎসকের শুক্রাণু ব্যবহার জন্ম হয়েছে। সবটা জানার পর বেজায় চটে যান শ্যারন। অন্যদিকে এতদিন পর নিজের বাবার পরিচয় জেনেও, এই সত্যি মেনে নিতে পারেনি তাঁর মেয়েও। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শ্যারণ। যদিও চিকিৎসকের বয়স এখন ৮১। তাই মামলা করলেও তাঁর শাস্তি কত গুরুতর হবে, সে নিন্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। একইসঙ্গে বাকি যাঁদের ওই চিকিৎসক ঠকিয়েছেন তাঁরাও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন বলেই মনে করেছেন শ্যারন। সবমিলিয়ে এই ঘটনায় রীতিমতো অবাক ও বিরক্ত শ্যারন আর তাঁর মেয়ে দুজনেই।