“টাকাতেই চলছে সবার পাকস্থলী/ কেনা আর বেচা নিয়ে গেরস্থালি”- এমনটাই তো জীবনে সত্য। অন্তত আমরা তো তাই ভাবি। কিন্তু এই মানুষটি সে কথার বাইরে গিয়েই বাঁচতে চেয়েছিলেন। আর হাতে কলমে তেমনটা করেও দেখিয়েছেন তিনি। আক্ষরিক অর্থেই টাকা ছাড়া বেঁচে রয়েছেন এই ব্যক্তি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর গল্প।
‘মানিলেস ম্যান’ নামেই পরিচিত মার্ক বয়েল। আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা এই ব্যক্তি ২০০৮ সালের নভেম্বর মাস থেকেই দিন কাটাচ্ছেন কোনোরকম টাকাপয়সা ছাড়াই। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সাল থেকে সবরকম প্রযুক্তির ব্যবহারও তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। যেখানে গোটা পৃথিবীই টাকা ছাড়া অচল, সেখানে দাঁড়িয়েই অন্যরকম এক বাঁচার সন্ধান দিয়েছেন তিনি। আর তাঁর এই অভিনব পথচলার অনুপ্রেরণা একজনই। তিনি মহাত্মা গান্ধী।
আরও শুনুন: বাচ্চারা রেস্তরাঁয় দুষ্টুমি করলে অতিরিক্ত চার্জ! কোথায় চালু এমন নিয়ম?
পৃথিবীকে যেভাবে বদলাতে চাও, নিজেকেই সেভাবে বদলে ফেলো- মহাত্মা গান্ধীর এ কথাই বদলে দিয়েছে মার্ক বয়েলের জীবন। যদিও এ কথা যখন শুনেছিলেন, তখন তিনি ছাত্র। প্রযুক্তিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। ডিগ্রি পাওয়ার পর ২০০২ সালে আয়ারল্যান্ড থেকে চলে যান বিলেতে, ব্রিস্টলে বড় চাকরিও মিলে যায় সহজেই। কিন্তু ওই কথাটি হয়তো কোনোভাবে তাঁর মনে রয়েই গিয়েছিল। ২০০৭ সালে এক রাতে, হাউজবোটে বসে আরও অনেকের সঙ্গে দর্শন নিয়ে আলোচনা করছিলেন তিনি। সেই সময়েই তাঁর মনে হয়, আসলে অর্থই যাবতীয় অনর্থের মূল। আর সেই সময়েই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, পৃথিবীকে এ কথা বলার আগে তাঁকে নিজের জীবন থেকে এই সমস্যা কাটাতে হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। নিজের বহুমূল্য হাউজবোট বিক্রি করে দিয়ে একটি পুরোনো ক্যারাভ্যানে থাকতে শুরু করেন মার্ক। কোনও টাকাপয়সা ছাড়াই।
আরও শুনুন: ৭০ ঘণ্টার থেকেও বেশি কাজ করে মেয়েরা, কথা হয় না তো! কটাক্ষ রাধিকার
এখন পশ্চিম আয়ারল্যান্ডে নিজের ছোট্ট কেবিনে থাকেন তিনি। সেখানে বিদ্যুৎ নেই। আধুনিক সভ্যতার কোনও সুযোগ সুবিধা, প্রযুক্তির কিছুই নেই। টাকাপয়সা ছাড়া জীবনধারণের সময়ই শৌচাগার থেকে সাবান, স্টোভ থেকে ফায়ার প্লেস — সবই তিনি নিজে তৈরি করে নিয়েছেন, হাতের কাছে পাওয়া সামান্য, তুচ্ছ কিছু জিনিস থেকে। আদিম মানুষের মতোই প্রকৃতির মাঝে জীবনযাপন বেছে নিয়েছেন মার্ক। আদানপ্রদানের ভিতে গড়ে তুলেছেন ‘ফ্রিকোনমি কমিউনিটি’। প্রযুক্তির এই আগ্রাসনের যুগে মার্ক মনে করেন, প্রযুক্তি আদতে মানুষ এবং প্রকৃতিকে ধ্বংস করে, তাই তাকে বাতিল করাই শ্রেয়। কেবল নানা বিল মেটানোর জন্য জীবনটা না বেঁচে, প্রকৃতির মাঝে একটা সহজ জীবন বাঁচছেন তিনি, পথ দেখাচ্ছেন অন্যদেরও।