প্রায় এক মাসে গড়াতে চলল ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষ। গাজার মাটিতে দুই দেশের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাঝে স্বাভাবিক বাঁচার পথটাই হারিয়ে ফেলেছেন সেখানকার মানুষেরা। এবার জানা গেল, জলের অভাবে বাধ্য হয়ে পিরিয়ডস পিছিয়ে দিতে মরিয়া গাজার মেয়েরা। তাঁরা যে যুদ্ধের জন্ম দেননি, তাঁদের গর্ভ ছিঁড়ে নিজের মাশুল গুনে নিচ্ছে সেই যুদ্ধই।
তালিবানের ফের আফগানিস্তান দখল, রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ, ইজরায়েলের আর প্যালেস্টাইনের হামাস গোষ্ঠীর সংঘাত… সব যুদ্ধ, সব হামলায় একটি কথা জেগে থাকে, দগদগে ঘায়ের মতো। সেই ঘা মৃত্যুর, সেই ঘা ধ্বংসের। সমস্ত যুদ্ধের মাঝখানে শুধু কিছু ভাঙন আর মৃত্যু দাঁড়িয়ে থাকে। নিপাট আমজনতার। সেই নিয়তি এড়িয়ে যাবে, এমন সাধ্য কার! গাজা থেকে হামাসের রকেট হানার জবাবে ইজরায়েল যখনই যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তখনই সকলের জানা হয়ে গিয়েছিল, গাজা ভূখণ্ডে এবার দীর্ঘ হতে চলেছে মৃত্যুমিছিল। সত্যি হয়েছে সেই আশঙ্কাই। কিন্তু মৃত্যু তো শেষ পরিণতি, মরার আগেও যে হাজাররকম মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষকে। হামাস আর ইজরায়েলের মাঝে পড়ে যাওয়া গাজায় যেভাবে মরতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নেই বিদ্যুৎ, নেই পরিস্রুত জলও। এবার জানা গেল, এই অমানুষিক পরিস্থিতির মধ্যেই আরও এক বিপদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে গাজার মহিলাদের।
আরও শুনুন: স্রেফ সংখ্যা নয়, ওরাও মানুষ… সন্তানের নাম শরীরে লিখে বার্তা গাজার অভিভাবকদের
যুদ্ধ হোক, ধ্বংস হোক, প্রকৃতির নিয়মে ঋতু তো আসবেই। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে কোথায় মিলবে স্যানিটারি ন্যাপকিন? কীভাবে বজায় রাখা যাবে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যবিধি? এমনকি প্রয়োজনের জলটুকুও যে মিলছে না। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ছবিতে দেখা গিয়েছে, বাধ্য হয়ে সমুদ্রের নোনা জলেই জামাকাপড় ধুয়ে ফেলছেন মেয়েরা। কিন্তু ঋতুর সময়ে সেই জল ব্যবহার করার কথা তো ভাবাও যায় না। তাই মরিয়া হয়ে কোনওমতে ঋতু ঠেকিয়ে রাখতে যুঝছেন এই মেয়েরা। মুঠো মুঠো ওষুধ খাচ্ছেন বাধ্য হয়েই, একমাত্র ঋতুঘটিত রোগের সময়েই যে ওষুধ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। কোনও সমস্যা ছাড়া সে ওষুধ খেলে তা উলটে শরীরের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। কিন্তু উপায় কী! শরণার্থী শিবিরে খাবার, ওষুধ, জামাকাপড় তাও মিলতে পারে, কিন্তু এই তথাকথিত ‘মেয়েলি’ জিনিসের গুরুত্ব এখনও কতটুকুই বা রয়েছে? বন্ধ হয়ে গিয়েছে এলাকার অধিকাংশ দোকানপাটও। তাই নিজেদের মতো করেই এই সমস্যাকে বুঝে নিতে হচ্ছে মেয়েদের। এ যুদ্ধ কবে থামবে, তার উত্তর তাঁদের কাছে নেই। তার মধ্যেই বেঁচে থাকার অসম লড়াই লড়ছেন গাজার মহিলারা।