বাধা নয় ঋতু। কেবল মেয়েরাই পৌরোহিত্য করতে পারেন এই মন্দিরে। হ্যাঁ, এই দেশেই রয়েছে এমন অভিনব মন্দির। কোন মন্দিরের কথা বলছি জানেন? আসুন, শুনেই নেওয়া যাক।
এই যুগে দাঁড়িয়েও নারীর ঋতু নিয়ে কম ছুঁতমার্গ নেই আমাদের সমাজে। ঋতুমতী অবস্থায় মন্দিরে প্রবেশ থেকে পুজোপাঠ, সব কিছুই নিষিদ্ধ করা হয় এখানে। এমনকি যে বয়ঃসীমা পর্যন্ত নারীর ঋতুকাল চলে, কোনও কোনও মন্দিরে সেই বয়সি মেয়েদের প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বছর কয়েক আগেই শবরীমালা মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশাধিকার পাওয়া নিয়ে কম বিরোধ বাধেনি। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল, এ দেশেই রয়েছে এমন এক মন্দির, যেখানে পৌরোহিত্যের অধিকার পান কেবল মহিলারাই। ঋতু সেখানে কোনও বাধা নয়। উজ্জ্বল লাল শাড়ি পরে এই মন্দিরের যাবতীয় দায়িত্ব সামলান ওই মহিলা পুরোহিতেরা, যাঁদের বলা হয় বৈরাগিণী মা। বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, এমনকি নানা দেশ থেকে আসা মহিলারা স্থান করে নিয়েছেন এই মহিলা পুরোহিতদের দলে।
আরও শুনুন: বনবিবি-র কৃপায় দূর হয় বাঘের ভয়, আসলে কে এই লৌকিক দেবী?
তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে, ভেলিয়াঙ্গিরি পর্বতের নিচেই রয়েছে মা লিঙ্গভৈরবীর এই মন্দির। মন্দিরের আকৃতি অনেকটা অন্তর্গত ত্রিকোণের মতো, যা আসলে নারীর গর্ভকে চিহ্নিত করছে বলেই জানান মন্দির কর্তৃপক্ষ। আর এর মধ্যেই রয়েছে আকারে ছোট আরও একটি ত্রিকোণ, যা গর্ভের মধ্যে থাকা পুরুষ ভ্রূণকে চিহ্নিত করছে। আসলে সমগ্র মন্দিরটির আকৃতিই নারীদেহের মতোই। আর সেখানে পূজাপাঠও করেন কেবল মহিলারাই।
আরও শুনুন: মহাকাব্যের ‘মন্দজন’, তবু আছে মন্দির! দেশের কোথায় রয়েছে রাবণের মন্দির?
বলা হয়, বৈদিক যুগে পূজার্চনা, বেদপাঠ, উপনয়ন, সবকিছুরই অধিকার পেতেন মহিলারা। গার্গী, অপালা, মৈত্রেয়ীর মতো সেই সময়কার বিদুষী নারীদের কথাও আমাদের অজানা নয়। কিন্তু ক্রমে ক্রমে মেয়েদের অধিকার খর্ব করতে থাকে সমাজ। এই সময়ে দাঁড়িয়ে কোনও কোনও মহিলা যদিও পৌরোহিত্যের পথে এগিয়ে আসছেন, তবে সমাজে কিন্তু তা নিয়ে কম কথা হয় না। এই বিষয়টিকে পুরোপুরি খোলা চোখে এখনও দেখতে পারছে না গোটা সমাজ। সেখানে এই দেশেই এমন এক মন্দির যে নতুন ভাবনার ইঙ্গিত দেয়, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।