গয়ায় পিণ্ডদানে অতৃপ্ত আত্মার মুক্তি মেলে। স্রেফ ভারতীয় নয়, এই বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও। এবার যুদ্ধ নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় গয়ায় পিন্ডদান করতে হাজির হলেন ইউক্রেনের এক মহিলা। ঠিক কী জানাচ্ছেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হবে মহালয়ার পরেই। তার আগে পনেরোদিন পিতৃপুরুষের উদ্দেশে জল দেওয়ার উল্লেখ মেলে শাস্ত্রে। তাই এইসময় গয়ায় পিন্ডদানের জন্য হাজির হন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। সেই ভিড়েই এবার দেখা মিলল এক ইউক্রেনের মহিলা। তবে কোনও একজন প্রিয় মানুষ নয়, তাঁর দেশের হাজারও যুদ্ধ নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় পিন্ডদান করছেন তিনি।
আরও শুনুন: ঘরছাড়া করেছে যুদ্ধ, নির্জন দ্বীপের হরে কৃষ্ণ মন্দিরই এখন আশ্রয় ইউক্রেনের উদ্বাস্তুদের
২০২২ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি, রুশ হামলায় কেঁপে উঠেছিল ইউক্রেন। তারপর প্রায় দেড় বছর ধরে চলা যুদ্ধে বিদ্ধস্ত হয়েছে দুই দেশই। আন্তর্জাতিক মহলের একাধিক হুঁশিয়ারিতেও ফল মেলেনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এখন চারদিকে কেবল ধ্বংসের চিহ্ন। বহু মানুষের মাথার উপরে ছাদটুকুও নেই। সেইসঙ্গে অনাথ হয়েছে হাজার হাজার শিশু। কতজন চিরতরে হারিয়েছেন প্রিয় মানুষকে তার হিসাব নেই বললেই চলে। নিজের ঘর, নিজের দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। কেউ আবার চাকরিসূত্রে ভিনদেশে থাকার দরুন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফেরার সুযোগটুকুও পাননি। এদিকে তার পরিবার হারিয়ে গিয়েছে কালের গভীরে। শেষবারের মতো কাছের মানুষের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত হয়নি অনেকের। এবার সেইসব মৃতদের আত্মার শান্তি কামনায় গয়ায় পিণ্ডদান সারলেন ইউলিয়া। মহিলা ইউক্রেনের বাসিন্দা। তবে বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে সনাতন ধর্মকে জীবনের পাথেয় করেছেন তিনি। তাই পিন্ডদানের মতো ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা। তিনিও বিশ্বাস করেন গয়ায় পিন্ডদান করলে মৃত মানুষের আত্মা শান্তি পাবে। আমাদের দেশের এক প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে, মৃত্যুর পর যাঁদের পরলৌকিক ক্রিয়া হয়নি, গয়ায় পিন্ডদান করলে তাঁদের আত্মাও মুক্তি মেলে। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই গয়ায় পিন্ডদান সারলেন ইউলিয়া। যদিও এই প্রথম নয়, গতবছরও একইভাবে গয়ায় পিন্ডদান সেরেছিলেন তিনি। আসলে, ইউলিয়া নিজেও বাব-মা কে হারিয়েছেন। মূলত তাঁদের আত্মার শান্তি কামনাতেই গয়ায় পিন্ডদানের কথা ভাবেন তিনি। তখন তাঁর ধর্মীয় গুরু ইউক্রেনের সমস্ত যুদ্ধ নিহতদের জন্যই পিণ্ডদান করার পরামর্শ দেন। যা শুনে একবাক্যে রাজি হন ইউলিয়া। হাজার হোক তিনি নিজে সেই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ দেখছেন। কত শিশুর কান্না, কত মানুষের হাহাকার বুকে বয়ে বেড়াচ্ছেন তার ইয়ত্তা নেই। তাই সেইসব মৃত মানুষদের আত্মার শান্তিকামনায় পিন্ডদান সারলেন তিনি।