আইসিইউ রোগীকে শোনানো হবে ‘ভজন’। এতেই নাকি দ্রুত সেরে উঠবে রোগী। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওড়িশার এক সরকারি হাসপাতাল। সেই ব্যবস্থা কীভাবে হবে, ইতিমধ্যে সেই পরিকল্পনাও করে ফেলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হঠাৎ রোগীর পথ্য হিসেবে ‘ভজন’ শোনানোর সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল? আসুন শুনে নিই।
আইসিইউ-তে ভর্তি রয়েছেন পরিচিত কেউ। এমনটা শুনলেই দুশ্চিন্তা হতে বাধ্য। আর সেই পরিচিতকে দেখতে হাসপাতালে যদি হাজির হন, তাহলে সেই দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেবে সেখানকার পরিবেশ। বিশেষ করে আইসিইউ থেকে ভেসে আসা যান্ত্রিক শব্দ যেন আরও অস্থির করে দেয় যে কাউকে। কিন্তু যদি দেখেন, আইসিইউ-তে পা রাখলেও শোনা যাচ্ছে না কোনও যান্ত্রিক শব্দ। উলটে কানে ভেসে আসছে ‘ভজন’, তাহলে নিশ্চয়ই অবাক হবেন!
আরও শুনুন: বরের মঙ্গলের জন্য বিয়ে করতে হবে মাটির পাত্রকে! মা-বাবার নির্দেশে দিশেহারা কনে
অথচ এবার ঠিক এমনই ব্যবস্থা নিতে চলেছে ওড়িশার এক সরকারি হাসপাতাল। সম্প্রতি সেখানকার এসসিবি ম্যেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল (SCB Medical College and Hospital) আইসিইউ-তে থাকা রোগীদের ভজন শোনানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাসপাতালটি ওড়িশা সরকারের পরিচালিত। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে সাধারণ মানুষের যথেষ্ট ভিড় হয়। সেইসঙ্গে জটিল অসুখ নিয়েও ভর্তি হন অনেকেই। প্রয়োজন মতো রোগীদের আইসিইউ-তেও রাখা হয়। সাধারণত অস্ত্রোপচার বা জটিল কোনও রোগ থাকলে সেই রোগীকে আইসিইউ-তে রাখা হয়। হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় এখানে রোগীর দেখভাল হয় সবথেকে উচ্চমানের। প্রায় ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের নজরে থাকের আইসিইউ রোগীরা। কারণ আশঙ্কাজনক অবস্থাতেও অনেক রোগীকেই এই বিভাগে রাখা হয়। স্বাভাবিক ভাবে এখানে যন্ত্রের পরমাণ বেশি। সবসময় রোগীর রক্তচাপ, হার্টবিট মাপার যন্ত্র চালু রাখা হয়। সেইসঙ্গে থাকে যে কোনও সময় অক্সিজেন সাপোর্টের ব্যবস্থা। কিছু অত্যাধুনিক নার্সিংহোমে সেই ব্যবস্থা হয় আরও উন্নত। তবে অতিরিক্ত যন্ত্র থাকার দরুণ, আইসিইউ থেকে সবসময় শোনাযায় অদ্ভুত এক যান্ত্রিক শব্দ। যা অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর। সেই কারণেই ওড়িশার এই হাসপাতাল রোগীদের ‘ভজন’ শোনানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গিয়েছে, মূলত ইন্সট্রুমেন্টাল বা যন্ত্রসঙ্গীত শোনা হবে তাঁদের। তবে সেখানে বাজানো হবে স্রেফ ‘ভজন’। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ব্যবস্থা রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে তুলবে। সেইসঙ্গে ডাক্তারদেরও বিশেষ সাহায্য হবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঠিক করা হয়েছে, আইসিইউ-তে এই ‘ভজন’ শোনানোর দায়িত্ব দেওয়া হবে কোনও এক বেসরকারি সংস্থাকে। সরকারি অনুমতি পেলেই শুরু হবে সেই কাজ।
আরও শুনুন: পুজোর কেনাকাটায় বিল মেটাচ্ছেন কিউআর স্ক্যানে? সাবধান না হলে ফাঁকা হবে ব্যাঙ্ক
তবে অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সুপ্রাচীন মিউজিক থেরাপির কথা মাথায় রেখে। এমনটা হামেশাই শোনা যায়, স্রেফ গান শুনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন রোগী। এমনকি কোমায় থাকা ব্যক্তিও গান শুনলে সাড়া দিচ্ছেন, এই খবরও শিরোনাম দখল করেছে বহুবার। করোনা মহামারীর সময় অনেকেই মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে এই মিউজিক থেরাপি বিশেষ কাজ দিয়েছিল বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। তবে সেক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট গান বা গানের ধরণ থাকে না। খুব সাধারণ লাইট মিউজিক বেছে নেওয়া নয় পথ্য হিসেবে। মূলত যন্ত্রসঙ্গীতের ব্যবহারই বেশি হয়। ওড়িশার হাসপাতালও রোগীদের সেই যন্ত্র সংগীত-ই শোনানোর ব্যবস্থা করছে বলে জানা গিয়েছে। তবে নির্দষ্ট ভাবে ‘ভজন’-ই কেন তা নিয়ে নানা মুনি নানা মত প্রকাশ করেছেন। ।