পুজোর শপিং করে পকেটে নগদ টাকা শেষ। এদিকে বেজায় খিদে পেয়েছে। সামনে দোকান দেখে ঢুকে তো পড়লেন, কিন্তু বিল মেটাবেন কীভাবে? সহায় অনলাইন পেমেন্ট। নিশ্চিন্তে পেটপুজো সেরে কিউআর স্ক্যান করলেই কাজ শেষ। কিন্তু এক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয় সাবধান না হলে, এক ক্লিকেই ফাঁকা হবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ঠিক কোন কোন বিষয়ের কথা মাথায় রাখবেন? আসুন শুনে নিই।
ডিজিটাল হওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে ভারত। আর সেই কারণে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে অনলাইন পেমেন্টের ধুম। সবজি বাজার হোক কিংবা শপিং মল, সবর্ত্রই চোখে পড়ছে কিউআর স্ক্যানার। মোবাইলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক থাকলেই নিশ্চিন্ত। যেকোনও জায়গায় ক্যাশলেস হয়ে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু এক্ষেত্রে সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিপদের ভয়ও। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অন্তত তেমনটাই জানাচ্ছে।
আরও শুনুন: দুর্গাপুজোয় চাঁদার ‘জুলুমে’ ওষ্ঠাগত প্রাণ… কীভাবে শায়েস্তা হয়েছিলেন সেকালের উদ্যোক্তারা?
ক্ষমতায় আসার পর, দেশ ডিজিটাল করার ডাক দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদি। তবে ডিজিটাল হওয়ার লক্ষে যত না এগিয়েছে ভারত, পাল্লা দিয়ে ততই বেড়েছে অনলাইন দুর্নীতি। ভুয়ো ফোন থেকে শুরু করে ভুয়ো মেসেজ, একটু অসাবধান হলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা। শুধু তাই নয়, ভুল করে কোনও লিংকে ক্লিক করলেও হতে পারে মারাত্মক বিপদ। সেই তালিকায় এবার নতুন সংযোজন কিউআর কোড স্ক্যান। রাস্তাঘাটে যে কোনও দোকানেই আজকাল এই অনলাইন পেমেন্টের জন্য রাখা কিউআর স্ক্যানার চোখে পড়ে। কোথাও আবার মোবাইলেই মেসেজের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া লিংকে ঢুকে পেমেন্ট করতে হয়। এমনিতে এর সুবিধা রয়েছে যথেষ্টই। বিশেষ করে খুচরো টাকা মেটানোর যে সমস্যা, তা অনেকটাই কমাতে পেরেছে ইউপিআই স্ক্যানার। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, বিগত কয়েকবছরে স্রেফ এই কিউআর স্ক্যানারেরে জেরে ২০হাজার গ্রাহক জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকেই লোপাট হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। যদিও সাইবার ক্রাইম দপ্তর এই জালিয়াতি কমানোর যথেষ্ট চেষ্টা চালাচ্ছে। তবু গ্রাহক নিজে যদি সাবধান না হন, তাহলে সম্পূর্ণভাবে এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়।
ঠিক কীভাবে সাবধান হবেন?
আরও শুনুন: নিরামিষ খাবারের টেবিল আলাদা! নয়া নিয়মে আপত্তি করতেই পড়ুয়াকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা বম্বে IIT-র
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচতে সবার আগে প্রয়োজন ডিজিটাল পেমেন্ট সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা। তার জন্য যে কোনও সরকারি ওয়েবসাইটে বা ব্যাঙ্ককর্মীদের থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া যে কোনও জায়গায় কিউআর স্ক্যান করার আগে দেখে নিতে হবে, সেই স্ক্যানারটা আদৌ সুরক্ষিত কী না। সাধারণত ব্যাঙ্কের স্বীকৃত অ্যাপ থেকে স্ক্যান করলে তা আগে থেকেই জানিয়ে দেয় নির্দিষ্ট কোডটি ভুয়ো না সঠিক। তবে অনেকেই যে কোনও থার্ড পার্টি অ্যাপ দিয়ে পেমেন্ট করে থাকেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় কিউআর ভুয়ো হলেও তা আগে থেকে বোঝা যায় না। ফলত জালিয়াতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি কিআউআর স্ক্যান করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, যাকে পেমেন্ট করছেন সেই ব্যক্তি বা সংস্থার নাম দেখানোর পরই পেমেন্ট সম্পূর্ণ করবেন। অনেক ক্ষেত্রে কিউআর স্ক্যান হয়ে গেলেও সঠিক জায়গায় পেমেন্ট পৌঁছায় না। কারণ ওই নির্দিষ্ট কোদ এতই সূক্ষ্ম হয়, যে কেউ চাইলেই ঠিক এক রকম দেখতে অন্য স্ক্যানার বসিয়ে দিতে পারেন। এমনটা হলে না বুঝেই টাকা হারানোর প্রবল সম্ভাবনা থাকবে। এছাড়া অনলাইনে পাঠানো কোনও লিংকে ক্লিক করার আগে ভালোভাবে দেখে নিন। না জেনে ভুল লিংকে ক্লিক করলেই সব শেষ। কিউআর জালিয়াতির সবথেকে বেশি অভিযোগ দায়ের হয় এই ইস্যুতেই। অন্যদিকে পাবলিক নেটোওয়ার্ক যেমন রেল স্টেশনের ওয়াইফাই কিংবা অন্য কারও ফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে, অনলাইন পেমেন্ট এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এক্ষেত্রেও হতে পারে দুর্নীতি। তবে প্রশাসনের তরফে এই জালিয়াতি কমানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে সবসময়। টেলিকম সংস্থা এবং মোবাইল সফটওয়্যার নির্মান সংস্থা গুলিও এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম বা সফটওয়্যার আপডেট করে রাখলে অনেকটা সুরাহা হতে পারে। তবে নিজের সচেতনতা নিজের কাছেই। সাধারণ কিছু বিষয় মাথায় রাখলেই যে কোনও ‘ডিজিটাল’ বিপদ থেকে বাঁচা সম্ভব।