ক্যাসেট, সিডি এখন আর প্রায় নেই বললেই চলে। বদলে এসেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। প্যানডেমিকের জেরে নেই লাইভ শো, সব-ই ভারচুয়াল। কতটা বদলে গেল গান শোনার অভ্যাস? জানালেন, লোপামুদ্রা মিত্র ও রূপম ইসলাম।
হ্যালো… চেক চেক…। ঘন ঘন চলছে মাইক টেস্টিং। সকাল থেকেই পাড়ায় যেন সাজো সাজো রব। কতজন দর্শক আসবে, স্টেজে মাইক্রোফোন বসানোর তদ্বির করতে ক্লাবের দাদারাও খুব ব্যস্ত। মঞ্চের দুপাশে ছোট-বড় স্টলও বসছে। আর এত কিছু আয়োজন হচ্ছে তার কারণ পাড়ায় আজ গানের অনুষ্ঠান। বড় বড় শিল্পীরা সব গাইবেন। আর তাই ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। মঞ্চের পাশের সিঁড়ি দিয়ে উঠে পুস্পস্তবক দেওয়ার জন্য ঠিক কোথায় দাঁড়াতে হবে দায়িত্বে থাকা বউদিরা এসে দেখে গিয়েছেন। আর শিল্পীদের বসার জায়গা মানে গ্রিনরুম দেখাশোনার দায়িত্ব পেয়েছে পাড়ার মেয়েরা। এখানে তো কোনও ভিড় থাকবে না, প্রিয় শিল্পীদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে, অটোগ্রাফও নেওয়া যাবে।
খুব বেশি নয়, বছর দুই আগেও পাড়ার অনুষ্ঠান বা জলসাকে ঘিরে ছবিটা থাকত এরকম। অথবা রবীন্দ্রসদন কিংবা কলামন্দিরে গিয়ে প্রিয় শিল্পীর একক অনুষ্ঠানে বুঁদ হয়ে থাকা। এই-ই ছিল স্বাভাবিক। মাঝখানের দুটো বছর। বদলে গেছে অনেককিছুই। বিনোদন, আমোদ-প্রমোদ এইরকম অনেক শব্দ আমাদের জীবন থেকে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। করোনা-ভাইরাস আর লকডাউনের বেড়াজালে আমাদের চেনা জীবনের ছবিটাই গেছে বদলে। গানের লাইভ শো-ও বন্ধ।
এই সেদিনও তো ক্যালেন্ডারে ডেট থাকত না শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রর। সকাল বিকেল বসার ঘরে আয়োজকদের ভিড়। তার মধ্যেই ফোনেও চলছে অনুষ্ঠানের বুকিং। আর এখন? কী বলছেন লোপামুদ্রা? বলছেন, ‘খুব খারাপ আছি আমরা। স্টেজ, সামনে দর্শক এসব এখন কিছুই নেই। সবথেকে বড় কথা, মঞ্চে অনুষ্ঠান হলে দর্শক টিকিট কেটে দেখতে আসেন। কিন্তু ভারচুয়াল অনুষ্ঠানে দর্শকের অতটা আগ্রহ দেখা যায় না।’
তবে, শিল্পী রূপম ইসলাম অবশ্য পালটে যাওয়া নিয়ে বেশ আশাবাদী। তিনি বলছেন, ‘এটা সময়ের দাবি। এখন অনেক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আছে। যাঁরা গান শুনতে ভালবাসেন, তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমেই গান শোনেন। আগে ক্যাসেট সিডি কিনে গান শুনতে হত। এখন সেই ব্যাপারটা নেই। এত রকমফের গানের লিস্ট অনেক, তবে, সব চ্যাানেল সার্চ করতে করতে গান শোনার সময়টা কমে গেছে।’
লাইভ শো নেই। ভারচুয়াল কনসার্ট-ই একমাত্র উপায়। রূপমের মতে এখানেও সফল হওয়া সম্ভব, যদি সেটা সঠিক পদ্ধতিতে করা যায়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবন বদলাবে, এটাই সত্যি। তবে এই বদলটা মেনে নিতে হচ্ছে বাধ্য হয়েই। অতিমারীর কারণে বদলের জোয়ার-ভাটায় আমরা সবাই। তার মধ্যে এটা ভেবেই এগিয়ে যেতে হবে, – ‘একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে’।