টালিগঞ্জের রিল লাইফের দাম্পত্য। সংকট রিয়েল লাইফে। কেন ভাঙছে সম্পর্ক? কী এর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ? বলছেন মনোবিদ ড. সুবর্ণা সেন।
এ কূল ভাঙে, ও কূল গড়ে। না না, নদীর কথা বলছি না। ভাঙাগড়ার খেলাটা চলছে টলিপাড়ায়। কোথাও সানাই বাজছে তো কোথাও বিচ্ছেদের সুর। যদিও রিল লাইফের নয়, তবু এ কাহিনির পরতে পরতে চমক।
হালফিল না গোড়া? কোথা থেকে শুরু করা যায়? গোড়ার কথাই বলি। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রমিত সেনের বিয়েটা হয়েছিল নেহাতই অল্প বয়সে। নানা চাপান-উতোরের মধ্যে অসুখী দাম্পত্য থেকে স্বস্তিকা বেরিয়ে এসেছেন, যদিও পাকাপাকিভাবে বিচ্ছেদটা হয়নি এখনও । তা বলে, খবর নেই তা তো হতে পারে না। এরই মধ্যে স্বস্তিকা সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন একাধিক সম্পর্কে। জিৎ, পরমব্রত, সৃজিত, সুমন। সব সম্পর্কেই স্বস্তিকা কোনও রাখঢাক করেননি। আবার ওঁদের সঙ্গে বিচ্ছেদও ছিল বেশ বৈপ্লবিক। তাই খবরেরও অভাব ছিল না। এই সম্পর্কগুলোয় জড়িয়ে না পড়লে স্বস্তিকা কি ফিরে যেতেন প্রমিতের কাছে? হালফিলেও শোনা যাচ্ছে তিনি আবার নতুন সম্পর্কে… না থাক, শোনা কথায় কান দিতে নেই।
কী হচ্ছে বলুন তো, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে? তিন-তিনটে বিয়ে, কোনওটাই তো টিকছে না। রোশন যদিও এখন কিছুটা নরম, ফিরে পেতে চায় পুরনো ঘর-সংসার, বউ। কিন্তু শ্রাবন্তী কিছুতেই ফিরতে চান না রোশনের কাছে। কারণ, এই তপ্ততার মাঝেই আবার টুক করে শ্রাবন্তীর জীবনে ঢুকে পড়েছে দখিনা হাওয়া। যদিও এখনই শ্রাবন্তী বলছেন না, ‘শোন গো দখিন হাওয়া প্রেম করেছি আমি’। তবুও তৃতীয় বিয়েটাও জোড়া লাগা বেশ চাপের।
আরও শুনুন : Dilip Kumar : আদালতে দাঁড়িয়ে মধুবালাকে জানিয়েছিলেন, ভালবাসি…
তারকা সাংসদ নুসরতের সঙ্গে নিখিল জৈনের ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ তাক লাগিয়েছিল। যদিও সেটাও নাকি ভাঙতে চলেছে। নুসরত তো বলছেন, রেজিস্ট্রি হয়নি তাঁদের, ফলে বিয়েটা হরেদরে ওই লিভ-ইন-ই ছিল বলা চলে। এরই মধ্যে নুসরত আবার নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন বলেও হাওয়ায় খবর ভাসছে। উপায় নেই দেখে আদালতে বিয়ে বাতিলের আবেদন করেছেন নিখিল।
এদিকে সৌরভ চক্রবর্তীর সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদ এখনও হয়নি মধুমিতা সরকারের। কিন্তু তাতে কী! বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জোর গুঞ্জন তাঁকে ঘিরে।
রাহুল-প্রিয়াঙ্কার বিচ্ছেদ-পর্ব লম্বা হতে হতে প্রায় ইতিহাস। কম কাদা ছোড়াছুড়ি হয়নি। অভিযোগ পালটা অভিযোগে দুজনেই এখন ক্লান্ত। বিচ্ছেদ হোক বা না হোক, প্রিয়াঙ্কা বন্ধু তথাগত, আর রাহুল সন্দীপ্তার সঙ্গে বেশ আছে।
কাঞ্চন-পিঙ্কি-শ্রীময়ী এখন টপ অফ দ্য স্টোরি। পিঙ্কির সঙ্গে কাঞ্চন মল্লিকের দাম্পত্যে বিচ্ছেদ হবে কি না ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু যা হচ্ছে, ত্রিকোণ প্রেমের স্ক্রিপ্ট ছাড়া আর কিছু ভাবা যাচ্ছে না। পিঙ্কি-কাঞ্চনের বিবাহিত জীবন এখন কাঞ্চন-শ্রীময়ীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ভবিষ্যতের ওপর ঝুলছে। পিঙ্কি দোষারোপ করছেন শ্রীময়ীকে। আর শ্রীময়ীও তাঁর বিরুদ্ধে ঘর ভাঙার অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন না।
নিত্যনতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া বা সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া, নতুন কিছু নয়। প্রতিদিনই ঘটছে। কেউ হয়তো খবরও রাখে না। কিন্তু সেটা যখন সেলিব্রিটির অন্দরমহলে শুরু হয়, তখন তা ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয় না। আমরা তখন সম্পর্কের ময়নাতদন্ত করি। নৈতিক না অনৈতিক বিচার করতে বসি।
কিন্তু কখনও কি ভেবেছি সম্পর্ক ভাঙে কেন? দুজন মানুষের মধ্যে তৃতীয় একজন এসে সত্যিই কি সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারে? পাশের মানুষটা, যে খুব কাছের ছিল, কেন আর তাকে ভাল লাগছে না? বড্ড অজানা লাগছে কেন?
দুজন মানুষ একসঙ্গে থাকতে থাকতে কিছু অভ্যাস তৈরি হয়ে যায় যে মুহূর্তগুলো ঘিরে, নতুন সম্পর্কের জন্য তা কি একেবারে ভুলে যাওয়া সম্ভব? সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসা এতটাই সহজ? সম্পর্কের জটিল এই ফাঁকফোকরের কী বিশ্লেষণ আছে মনস্তত্ত্বে?
মনস্তত্ত্ববিদ ড. সুবর্ণা সেন মনে করেন, একটা সম্পর্কের জন্য আর-একটা সম্পর্ক ভেঙে যায়, এই কথাটাই ভুল। এটা হতে পারে দুটো মানুষের সম্পর্কের মধ্যে একটা ফাঁক ছিল, যেটা তাঁরা চেষ্টা করেও ভরিয়ে তুলতে পারেননি। প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা। তাদের ব্যক্তিত্বও একরকম হতে পারে না। তবে যখন দুজন মানুষের মধ্যে আদর্শগত অমিল খুব বেশি থাকে, তখন এই ফাঁকগুলো বাড়তে থাকে। তখন সম্পর্ক এমনিই খারাপ হয়ে যায়। আমরা যখন কাউকে ভালবাসি, তখন তার কিছু গুণ বা কিছু বিষয়কে ভালবাসি। আমার পছন্দের কিছু যখন সেই মানুষটার মধ্যে দেখি তখন তাকে ভাল লাগে। তাকে ভালবাসতে শুরু করি। পরবর্তীকালে আমার ভাল লাগা আরও দশটি বিষয় আমি অন্য কারও মধ্যে দেখতে পেলাম, তাকেও তো আমার ভাল লাগবে বা একটা আকর্ষণ তৈরি হবে। এই আকর্ষণকে আমি কতটা প্রশ্রয় দেব, আমাকেই সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এইখানেই আমাদের মানসিকতার পরিচয়। আর এটা একেবারে ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে সেই তৃতীয় ব্যক্তির কোনও ভূমিকা নেই। এমনও হতে পারে দাম্পত্যে কোনও সমস্যা নেই তবুও তৃতীয় কেউ এসে গেল। যখন দুজনের মধ্যে একজন মনে করছেন, সম্পর্কটা তাঁর দিক থেকে মৃত। সমস্যার শুরু সেখানেই। কারণ সম্পর্ক তো দ্বিপাক্ষিক। কিন্তু যাঁর কাছে সম্পর্কটা মৃত নয়, সমস্যাটা তাঁর বেশি। এখান থেকেই দায়টা চলে যায় তৃতীয় ব্যক্তির উপর। তবে এটা ভাবলে খুব ভুল ভাবা হবে, যাঁর কাছে সম্পর্কটা মৃত, তাঁর কোনও কষ্ট হয় না। যে কোনও সেপারেশনই কষ্ট দেয়।
এখন প্রশ্ন এটাই, সব তিক্ততা ভুলে সম্পর্ককে কি টিকিয়ে রাখা যায়?
মনোবিদ সুবর্ণা সেনের মতে, খুব কঠিন। সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলায়। ধরনও বদলায়। পুরনো সম্পর্কে ফিরে যাওয়া বেশ কঠিন। কারণ প্রথমে একটা সম্পর্কের মধ্যে যে উন্মাদনা থাকে সময়ের সঙ্গে সেটা পালটায়। সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে দেখতে হবে দুজনের মধ্যে কথা বলার মতো কিছু আছে কি না। তা না থাকলে একটা সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখা খুব কঠিন। তবে চেষ্টা করাই যায়। সম্পর্কের ভাল মুহূর্তগুলো নিয়ে ভাবা বা দুজনে কিছুদিন একে অপরের থেকে দূরে সরে থেকে দেখা যেতেই পারে।
সম্পর্ক কথাটা যেমন একান্ত ব্যক্তিগত, একে বাঁচিয়ে রাখার দায়টাও একান্ত নিজস্ব। এখানে দুজনের মধ্যে তৃতীয় কেউ-এর কোনও ভূমিকা নেই। বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালবাসার মাপকাঠিটা রাখতে হবে নিজের হাতে।