পেটে মারাত্মক ব্যথা। সেইসঙ্গে ধুম জ্বর। বমিও হয়েছে বেশ কয়েকবার। এমনই অবস্থায় ব্যক্তিকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির হয় তাঁর পরিবার। সেখানে তাঁকে পরীক্ষা করার পর রীতিমতো তাজ্জব বনে যান চিকিৎসকরা। জানা যায়, তাঁর পেটে চুম্বক থেকে শুরু করে ইয়ার ফোনের মতো জিনিস রয়েছে। আর সেসব তিনি নিজেই নাকি খেয়েছেন। কিন্তু কেন? আর এই অবস্থায় তাঁর ঠিক কী চিকিৎসা হল? আসুন শুনে নিই।
বাচ্চারা অনেক সময়ই মুখে এটা সেটা পুরে দেয়। কোনটা খাওয়া উচিত, আর কোনটা নয়- সেই বোধ তাঁদের থাকে না। কিন্তু যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি মোটেও বাচ্ছা নন। অথচ তিনি জেনেশুনেই চুম্বক, ইয়ারফোন কিংবা জামার বোতামের মতো জিনিস খেয়েছেন। তাও আবার একটা দুটো নয়, সবমিলিয়ে প্রায় চল্লিশটা ওমন অদ্ভুত জিনিস খেয়ে ফেলেছেন তিনি। তার জেরে রীতিমতো অসুস্থও হয়েছেন।
আরও শুনুন: সাত নয়, মহাদেশের সংখ্যা বাড়ল আরও এক! ৩৭৫ বছর পর খোঁজ মিলল অষ্টম মহাদেশের
কিন্তু প্রশ্ন হল এমনটা তিনি করলেন কেন? সে প্রসঙ্গে আসছি, আগে জেনে নেওয়া যাক তাঁর কী পরিণতি হল।
ঘটনাটি পাঞ্জাবের। সেখানকার মোগা অঞ্চলের বাসিন্দা কুলদীপ সিং এই অদ্ভুত কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। কিছুদিন আগে প্রবল পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন কুলদীপ। শুধু পেট ব্যথাই নয়, সেইসঙ্গে ধুম জ্বরও ছিল তাঁর। এমনকি কয়েকদিন ধরেই তিনি বমি করছেন, এমনটাই দাবি করে তাঁর পরিবার। তক্ষনি তাঁকে ভর্তি করে বিভিন্ন পরীক্ষা শুরু করেন চিকিৎসকরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনে আসে পেট ব্যাথার কারণ। জানা যায়, তাঁর পেটের মধ্যেই রয়েছে জামার বোতাম, প্যান্টের চেন, চুম্বক কিংবা ইয়ার ফোনের মতো জিনিস। এক্স-রে তে এই দৃশ্য দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে যান চিকিৎসকরাও। তাঁরা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেন না, এসব কুলদীপের পেটে এল কীভাবে? কেউ নিজে থেকে না খেলে তো আর এসব পেটে ঢোকার কথা নয়। আসলে ঠিক সেই কাজটাই করেছিলেন কুলদীপ। চিকিৎসকদের দাবি, টানা ২ বছর ধরে এইসব অদ্ভুত জিনিস খেয়ে চলেছেন তিনি। যদিও অপারেশন করে সেইসবই বার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ টি জিনিস বার করা হয়েছে কুলদীপের পেটের ভিতর থেকে। তবে সেসব কবে এবং কেন কুলদীপ খেয়েছেন, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি নিজেও।
আরও শুনুন: এই মন্দিরে নিষিদ্ধ তিন বিশেষ রং, কেন এমন অদ্ভুত নিয়ম জানেন?
তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর ব্যাখ্যাও রয়েছে। আসলে এ হল এক মানসিক রোগ। ডাক্তারির ভাষায় যার নাম, ‘পিকা কন্ডিশন’। এই অবস্থায়, রোগি ঠিক করতে পারেন না কোনটা খাওয়া উচিত কোনটা নয়। বরং যেসব খেলে শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল সেইসব খাওয়ার দিকেই বেশি ঝোঁক থাকে তাঁদের। যেমন, যে কোনও ধারালো বস্তু কিংবা বিষাক্ত কিছু খাওয়ার আগে দুবার ভাবেন না এঁরা। কুলদীপও সেই কারণেই জামার বোতাম কিংবা ইয়ার ফোন খেয়ে ফেলেছেন। এমনটা হতে পারে, প্রবল মানসিক চাপ থেকে। কুলদীপের পরিবারের দাবি, তিনি সত্যিই কয়েক বছর ধরে সেই মানসিক অস্থিরতা নিয়ে কাটিয়েছেন। তবে তিনি যে এর মধ্যে এইসব করে ফেলেছেন তা বুঝতে পারেননি পরিবারের কেউই। টানা তিন ঘণ্টার অপারেশনে আপাতত তাঁর পেট থেকে, সবকিছুই বের করে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। তবু কুলদীপ এখনও সম্পূর্ন বিপদ মুক্ত নন। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। ঠিক কবে কুলদীপ পুরোপুরি সুস্থ হবেন তা স্পষ্ট ভাবে বলতে না পারলেও, তাঁর প্রাণ সংশয় নেই বলেই মনে করছে চিকিৎসকরা।