কথায় আছে, শেখার কোনও বয়স হয় না। স্কুলে ভরতি হওয়ারও নয়। তাই ৯২ বছর বয়সে প্রথমবার স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে দু-বার ভাবেননি এই পড়ুয়া। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বসেই দিব্য ক্লাস করেন তিনি। আর তাঁকে দেখেই নতুন করে শেখার স্বপ্ন বুনেছেন আরও অনেকেই। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
বাড়ির উলটো দিকেই স্কুল। ঘুম থেকে উঠেই শুনতে পান ক্লাস শেষে ঘণ্টার শব্দ। কিন্তু নিজে কখনও সে পথে পা রাখেননি। দীর্ঘ ৯২ বছর অক্ষর জ্ঞানই ছিল না এই বৃদ্ধার। স্রেফ লোকে কী ভাববে, এ কথা চিন্তা করেই এতদিন ভর্তি হননি স্কুলে। কিন্তু পড়াশোনা শেখার ইচ্ছা ছিল বরাবরের। তাই সব কিছু ভুলে গিয়ে হঠাৎ একদিন স্কুলে গিয়ে হাজির হন। তারপর থেকেই যেন আমূল বদলে গিয়েছে এই বৃদ্ধার জীবন।
আরও শুনুন: বিয়ে ভাঙলেও নেই রেহাই! অন্য পুরুষের কাছে চড়া দামে বিক্রি স্ত্রী, অদ্ভুত প্রথা রাজস্থানে
এই ঘটনা উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের। সেখানকার এক গ্রামের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সালিমা। যদি স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘খান-চাচি’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। মহিলার বয়স ৯২। কিন্তু তাতে কী! এখনও দিব্যি নিজের কাজটা নিজেই সামলে নিতে পারেন। দেশ যতই চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছুঁয়ে ফেলুক, এখনও দেশ থেকে নীরক্ষরতা পুরোপুরি মুছে যায়নি। বিশেষত গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের মধ্যে এই প্রবনতা বেশ ভালো মতোই লক্ষ করা যায়। উত্তপ্রদেশের এই গ্রামের ছবিটাও ঠিক তেমনই। গ্রামের অধিকাংশ মহিলাই এখনও নীরক্ষর। সেই তালিকাতেই এতদিন সালিমা-র নামও ছিল। মূলত গ্রামের প্রচলিত কুসংস্কারের জেরেই দীর্ঘ ৯২ বছর স্কুলের গন্ডি টপকাননি তিনি। বিয়ে হয়ছিল মাত্র ১৪ বছর বয়সে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মা হয়েছেন। তাই কখনও পড়াশোনা শেখার সুযোগ হয়নি। অথচ তাঁর বাড়ির ঠিক উলটো দিকেই রয়েছে স্কুল। বরাবর সেই স্কুলের পড়ুয়াদের দেখে পড়াশোনা শেখার ইচ্ছা হত সালিমা-র। কিন্তু কালের নিয়মে বেড়েছে বয়স। সাধারণত তাঁর বয়সী কেউ স্কুলে ভর্তি হয় না বলেই ধারণা ছিল বৃদ্ধার। তাই বহুবার ভেবেও সেই কাজ তিনি করতে পারেননি। তবে একসময় নিজেই ঠিক করেন এই ভাবনার বেড়াজাল টপকাবেন। আর সেইমতো হঠাৎ একদিন হাজির হন স্কুলে। সরাসরি নিজের মনের ইচ্ছা জানান। প্রথমে অবশ্য তাঁকে দেখেই শিক্ষকরা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, এত বয়স্ক একজন বাচ্ছাদের সঙ্গে কীভাবে পড়বে? সেই প্রশ্নের উত্তর দেন সালিমা নিজেই। তবে মুখের কথায় নয়, নিজের কাজ দিয়ে। তিনি প্রমাণ করে দেন মনের ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব। আর রইল পড়ে বাচ্ছাদের কথা! তাদের বেশিরভাগই সালিমা-র নাতি-নাতনি। তাই তারাও কিছুদিনের মধ্যেই ঠাকুমাকে আপন করে নেয় বন্ধু হিসেবেই।
আরও শুনুন: সংবিধানের খসড়া করেছিল হিন্দু মহাসভাও, সেখানে কি জায়গা ছিল মুসলিমদের?
এই মুহূর্তে নিজের নাম সই করা থেকে শুরু করে এক থেকে একশো অনায়াসে গুনতে পারেন ‘খান-চাচি’। সম্প্রতি এক ভাইরাল ভিডিওতে সেই পরিচয়ই মিলেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে বসে মুখে মুখে সংখ্যা গুনে শোনাচ্ছেন সালিমা। জানা গিয়েছে, কেন্দ্র সরকারের স্বাক্ষরতা অভিযানের এক পরীক্ষাতেও সালিমা উত্তীর্ণ হয়েছেন। ফলে এখন আর তিনি নিরক্ষর নন। আর এতে বেজায় খুশি সালিমা নিজেও। স্রেফ পড়াশোনা শেখার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে বলে নয়, এর জেরে তাঁর জীবনেও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। আগে অক্ষর জ্ঞান না থাকায় তিনি টাকা গুনতে পারতেন না। বৃদ্ধার দাবি, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকেই তাকে ঠকাতো। তবে এখন আর সে সুযোগ নেই। একইসঙ্গে তিনি এখন নিজের নাম সই করতে পারেন, এর থেকে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না বলেই দাবি ওই বৃদ্ধার। তবে স্রেফ তিনি একা নন, তাকে দেখে ওই গ্রামের আরও অনেক মহিলাই স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে সালিমা-র দুই পুত্রবধূও রয়েছেন। এঁরা সকলেই এখন একসঙ্গে স্কুলে যান। আর এই মহিলাদের উৎসাহ জোগাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও।