ওয়াহিদা রহমানের সম্মান প্রাপ্তির ঘোষণাতেও মহিলা সংরক্ষণ বিলের প্রসঙ্গ টানতে ছাড়লেন না কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। যা শুনে জল্পনা উঠছে, এই ইস্যুকেও কি ভোটের বার্তা দেওয়ার কাজেই ব্যবহার করতে চাইছে সরকার? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এবার স্বীকৃতি পেতে চলেছেন বলিউড অভিনেত্রী ওয়াহিদা রহমান। ‘দাদাসাহেব ফালকে লাইভটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে, সম্প্রতি এমনটাই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। কিন্তু সেই পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণার মধ্যেও কৌশলে মহিলা সংরক্ষণ বিলের কথা জুড়ে দিতে ভোলেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ওয়াহিদার এই সম্মান এবং মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হওয়াকে কার্যত একই রাজনীতির সুতোয় বেঁধে ফেলেছেন তিনি। যার জেরে জল্পনা উঠছে অনেক মহলেই, তবে কি একজন বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর সম্মান প্রাপ্তিকেও একরকম ভাবে ভোটের হাতিয়ারই করতে চাইছে কেন্দ্রের শাসক দল?
আরও শুনুন: ৫১ মিনিটের ভাষণে ৪৪ বার কংগ্রেসের নাম! মোদিকে খোঁচা হাত শিবিরের নেতার
১৯৫৬ সালে ‘সিআইডি’ ছবি থেকে অভিনয়ে জগতে পা রাখেন ওয়াহিদা। তারপর প্রায় ৫ দশক ধরে সিনে পর্দায় দাপিয়ে অভিনয় করেছেন ওয়াহিদা। বাংলায় এসে সত্যজিৎ রায়ের ‘অভিযান’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেত্রী। শুধু বক্স অফিস নয়, তাঁর অসাধারণ অভিনয় মন কেড়েছিল দর্শক থেকে ফিল্ম সমালোচকদেরও। আর এই সমস্ত প্রসঙ্গই জরুরি ছিল ওয়াহিদা রহমানের কৃতিত্ব বর্ণনায়। তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ওয়াহিদার অভিনয় জীবন এবং পরবর্তী কালে তাঁর সমাজসেবায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে যা কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তার চেয়ে বেশি যেন ওয়াহিদাকে ‘ভারতীয় নারী’-র প্রতীক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন তিনি। অভিনেত্রীকে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ সম্মানের প্রাপক এই অভিনেত্রী আসলে ভারতীয় নারীর নিষ্ঠা, দায়বদ্ধতা এবং শক্তিরই প্রমাণ রেখে গিয়েছেন। যে নারী কঠোর পরিশ্রমে পেশাগত দক্ষতার চূড়ায় পৌঁছতে পারে। শুধু এটুকুই নয়, অনুরাগ ঠাকুর আরও বলেন, যে সময়ে সংসদে ঐতিহাসিক নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম পাশ হয়েছে, সেই সময়েই ওয়াহিদাকে এই সম্মান দেওয়া আসলে ভারতীয় সিনেমার একজন প্রধান নারীর প্রতি যথোচিত শ্রদ্ধার্ঘ্য।
আরও শুনুন: মহিলা বিল থেকে নয়া সংসদ ভবন, সরকারি প্রচারের ‘মুখ’ দেশের অভিনেত্রীরাই!
এমনিতেই মহিলা সংরক্ষণ বিলের সঙ্গে বারবার ভোটের রাজনীতির যোগ খুঁজেছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনী প্রচারে এই বিলের সামগ্রিক কৃতিত্ব নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন খোদ মোদি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, চব্বিশের নির্বাচনের আগে এইভাবেই নিজেদের নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল বলে প্রমাণ করতে চাইছে বিজেপি, আর সেই তাস বিছিয়েই মহিলা ভোট টেনে নিতে চাইছে তারা। এর আগেও এই বিল পাশের দিন সংসদে একাধিক বলিউড অভিনেত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অনুরাগ ঠাকুর। আর এবার ওয়াহিদা রহমানের পুরস্কার ঘোষণাতেও তিনি জুড়ে দিলেন ওই বিলের প্রসঙ্গ। যা দেখে নতুন করে জল্পনা উসকে উঠল রাজনৈতিক মহলে।