সংসদের বিশেষ অধিবেশনে রমেশ বিধুরির ‘অশালীন’ মন্তব্য নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে অসংসদীয় শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ তুলে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ শানিয়েছেন বিরোধীরা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই অসংসদীয় শব্দ আসলে কোনগুলো? আর তা প্রয়োগ করলে ঠিক কী শাস্তি হতে পারে সাংসদদের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রাজনৈতিক বিরোধিতা অনেকসময়ই সৌজন্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় কুরুচিকর ঘৃণাভাষণে। সংসদে এহেন কটূক্তির জেরে প্রায়শই তর্কযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন সাংসদরা। তাই সংসদীয় কমিটির তরফেই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কিছু শব্দ, অধিবেশন চলাকালীন যা প্রয়োগ করলে হতে পারে শাস্তি। কিন্তু কোথায় কী! সম্প্রতি আবারও সেই ‘অসংসদীয় শব্দ’ প্রয়োগ করে বিতর্কে জড়ালেন বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি।
আরও শুনুন: চুইংগাম খেয়ে আটকে রাখাই রীতি, জনপ্রিয় দেওয়াল দেখতেই ভিড় জমান পর্যটকেরা
সংসদের বিশেষ অধিবেশনে চন্দ্রযান নিয়ে আলোচনার সময় বিএসপি সাংসদ দানিশ আলির উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য করেন রমেশ। সরাসরি তাঁর ধর্ম নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করতে শোনা যায় তাঁকে। স্বাভাবিকভাবেই রমেশ বিধুরির এই মন্তব্য ঘিরে সরগরম গোটা দেশের রাজনৈতিক মহল। বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে আরও একবার চর্চায় উঠে এল সংসদের নিষিদ্ধ করা অসংসদীয় শব্দের তালিকাটি।
ঠিক কোন কোন শব্দ রয়েছে সেখানে?
আসলে যেসব শব্দ সংসদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে পারে, বা যে শব্দের প্রয়োগে কারও ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে, তাকেই অসংসদীয় শব্দ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত বাদল অধিবেশনের আগেই প্রায় ৫০ পাতার এক খসড়া পেশ করে সংসদীয় কমিটি। যেখানে বেশ কিছু অসংসদীয় শব্দের উল্লেখ ছিল। তালিকায়, ‘জুমলাবাজি’, ‘শকুনি’, ‘অ্যাবিউজড’, ‘চিটেড, ‘ক্রিমিনাল’ সহ একাধিক শব্দ রয়েছে। এমনকি ‘খালিস্তানি’ শব্দটিও প্রয়োগ করার অধিকার নেই কোনও সাংসদের। আর এইসব শব্দ কেউ প্রয়োগ করলে তা অধিবেশনের রেকর্ড থেকে মুছে ফেলা হবে, এমনটাই জানাচ্ছে ‘রুলস অফ প্রসিডিওর অ্যান্ড কনডাক্ট অফ বিজনেস ইন লোকসভা’-র ৩৮০ সংখ্যক বিধি। অন্যদিকে সংবিধানের ১০৫(২) নং ধারায় এমনটাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, সংসদের ভিতর করা কোনও মন্তব্য নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে না। ব্যবস্থা বলতে, স্রেফ রেকর্ড থেকে ওই মন্তব্য মুছে দেওয়া। রমেশ বিধুরির ক্ষেত্রেও আপাতত সেই ব্যবস্থাই নিয়েছেন স্পিকার ওম বিড়লা। তবে সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ফের এমন আচরণ করলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে পারেন রমেশ। যদিও যাঁকে উদ্দেশ্য করে এই অশালীন মন্তব্য করা হয়েছে, সেই দানিশ আলি ইতিমধ্যেই স্পিকারের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
আরও শুনুন: আধঘণ্টার রাজা! রাতারাতি ৯ হাজার কোটি পেয়েও খোয়ালেন ট্যাক্সিচালক
তবে এই ঘটনা যেন নতুন করে উসকে দিল সংসদের বিভিন্ন বিতর্কের স্মৃতি। কিছুদিন আগেও অসংসদীয় আখ্যা পেয়েছিল রাহুল গান্ধীর ‘উড়ন্ত চুমু’। এ ছাড়া বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগ তো রয়েছেই। বিরোধীদের আক্রমণের সময় কড়া ভাষা প্রয়োগ করতে গিয়ে এমন অনেক কিছুই বলে ফেলেন সাংসদরা, যা রীতিমতো উত্তেজনা তৈরি করে রাজনৈতিক মহলে। যার প্রভাব পড়ে দেশের সাধারণ মানুষের উপরও। সেইসব ঘৃণাভাষণের প্রবণতা কমাতেই অসংসদীয় শব্দের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও বিতর্ক কমছে কই!