প্রতিবছর দেশজুড়ে মহাসমারোহে পালিত হয় শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিশেষ উৎসবের আয়জন হয় বিভিন্ন কৃষ্ণমন্দিরে। কিন্তু ঠিক তার ১৫ দিন পরেই আসে আরও এক বিশেষ তিথি। কৃষ্ণ ভক্তদের কাছে যা জন্মাষ্টমীর মতোই গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্জিকামতে এই দিনটি পালিত হয় রাধাষ্টমী হিসেবে। কীভাবে বাড়িতেই উদযাপন করবেন রাধাষ্টমীর ব্রত? আসুন শুনে নিই।
বৈষ্ণব পদাবলি জানায় কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার অপার্থিব এক প্রেমের কাহিনি। যে প্রেমে সমাজ সংসার তুচ্ছ করে প্রেমিক কৃষ্ণের উদ্দেশে অভিসারে যান রাধা। সেই মিলনের সাক্ষী থাকে রাতের আঁধার আর গহন অরণ্য। তাই দেশের অধিকাংশ কৃষ্ণ মন্দিরেই যুগল মূর্তির দর্শণ মেলে। এমনকি গোপীনাথ বিগ্রহের সঙ্গেও শ্রী রাধিকার মূর্তি দেখা যায়।
আরও শুনুন: আধঘণ্টার রাজা! রাতারাতি ৯ হাজার কোটি পেয়েও খোয়ালেন ট্যাক্সিচালক
সাধারণত ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয় রাধাষ্টমী। শাস্ত্রমতে এইদিন শ্রী রাধিকার জন্মতিথি। কৃষ্ণের প্রেয়সী রাধিকা মূলত বৈষ্ণবদের উপাস্য। তবে তিনি স্বয়ং দেবী লক্ষ্মীর অংশ। তিনি পরমাপ্রকৃতি, গোপীশ্রেষ্ঠা। তাই নিষ্ঠাভরে তাঁর পুজো করলে বিশেষ ফল মেলে। কৃষ্ণমন্দিরে যুগল মূর্তির নিত্যপূজার ব্যবস্থা থাকে। তবে রাধাষ্টমীর দিন মূলত পুজোর আয়োজন হয় শ্রীরাধিকার। তাঁর জন্ম ঘিরেও প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন জনশ্রুতি। শোনা যায়, রাধার জন্মগ্রহণ করেছিলেন মথুরা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে এক ছোট গ্রাম, রাওয়ালে। কথিত আছে, শ্রীরাধিকার জন্মও সরাসরি মাতৃগর্ভ থেকে হয়নি। নদীতে স্নানের সময় শিশু রাধিকাকে পদ্মফুলের উপর ভাসতে দেখেন তাঁর পিতা বৃষভানু। তিনিই নিজের মেয়ের মতো করে রাধাকে মানুষ করেন। অনেকে আবার এই যুক্তিও মানতে চান না। তবে একথা বলাই বাহুল্য, রাধিকার মাহাত্ম্য অনেকাংশেই শ্রী কৃষ্ণের সঙ্গে জড়িত। সাহিত্য হোক বা উপাখ্যান সব ক্ষেত্রেই রাধিকাকে শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। আবার উত্তরভারতের একাধিক জায়গায়, রাধার নাম শ্রীকৃষ্ণের আগে উচ্চারিত হয়। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর মতোই তাই রাধাষ্টমী পালনের বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে।
আরও শুনুন: দর্শন সেরেছেন শাহরুখ থেকে সানি লিওন, দুদিনে ১ কোটিরও বেশি আয় লালবাগচা গণেশের
জন্মাষ্টমীতে বাড়িতে গোপাল পুজোর চল রয়েছে। তবে শ্রীরাধিকার মূর্তি তেমনভাবে কারও বাড়িতে থাকে না। সেক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রতিকৃতিকে সাজানো যেতে পারে। অন্যান্য পুজোর মতোই এই তিথিতেও সকাল সকাল স্নান সেরে নেওয়া ভালো। এরপর শুদ্ধ বস্ত্রে পুজোয় বসুন। ঠাকুরের স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার পরে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিতে হবে। গোলাপ বা সাদা ফুল দিয়ে রাধাকৃষ্ণের ছবি সাজানো যেতে পারে। তবে অবশ্যই রাখতে হবে শ্বেত চন্দন। পুজোর বিশেষ নিয়ম নেই। কেউ চাইলে রাধাষ্টকম পাঠ করতে পারেন। সেইসঙ্গে শ্রীরাধিকার প্রণামন্ত্র জপ। ভোগের ক্ষেত্রেও বিশেষ কিছু পালনের নিয়ম নেই। তবে নিরামিষ আবশ্যক। ভোগ নিবেদনের সময় শ্রীকৃষ্ণেও অবশ্যই নিবেদন করতে হবে। জ্যোতিষমতে রাধিকার পুজো করলে অবিবাহিতদের বিয়ের যোগ আসে। সেক্ষেত্রে বিবাহে ইচ্ছুক নারীরা এই ব্রত পালন করতে পারেন। সারাদিন উপোস থেকে পুজো, তারপর সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করলে বিশেষ ফল মেলে। এছাড়া এই ব্রতের দিনে কিছু দান করা বিশেষ ফলদায়ক। বৃন্দাবন সহ দেশের বিভিন কৃষ্ণমন্দিরেই এদিন উৎসবের আয়োজন করা হয়। তাই সেখানে পুজো দিলেও মিলবে বিশেষ ফল।