সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে উধাও ‘সেকুলার’ ও ‘সোশালিস্ট’ শব্দ দুটি। যা দেখে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে সরব কংগ্রেস। আর সেই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ওই শব্দ যোগ করা হয়েছিল বলেই কি এহেন পদক্ষেপ মোদি সরকারের?
পুরোনো ভবন ছেড়ে নতুন সংসদ ভবনে সরে এসেছে কেন্দ্রের অধিবেশন। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে যে সংবিধানেরও নতুন রূপ দেখা যাবে, সে কথা আদৌ আন্দাজ করেননি বিরোধীরা। তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, নতুন সংসদ ভবনে প্রথমবার অধিবেশন শুরুর আগে রীতি মেনে সাংসদদের যে বিশেষ উপহার দেওয়া হয়েছে, সেখানে থাকা সংবিধানের কপিতে উধাও ‘সেকুলার’ ও ‘সোশালিস্ট’ শব্দ দুটি। অর্থাৎ সংবিধানের প্রস্তাবনায় দেশের যে ছবিটিকে দীর্ঘদিন ধরে তুলে ধরা হয়েছে, তা অনেকখানিই পালটে গেল এই নয়া সংবিধানের বক্তব্যে। আর এই বদল নিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস শিবির। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ১৯৭৬ সালে সংবিধান সংশোধন করে যে এই শব্দগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। বিজেপির পালটা বক্তব্য, প্রথম সংবিধানেও এই শব্দ দুটি ছিল না, আর সেই কপিই দেওয়া হয়েছে সাংসদদের।
আরও শুনুন: ‘সরকার যাবে-আসবে, দেশ যেন থেকে যায়’… অটল-স্মৃতি ফেরালেন মোদি
এই প্রেক্ষিতেই নতুন করে উঠে আসছে একটি প্রশ্ন। মোদি সরকার যে নতুন ‘ভারত’ গড়ার প্রকল্প সাজাচ্ছে, সেখান থেকে ক্রমশই পুরোনো কংগ্রেস সরকারের আমলের সব চিহ্ন মুছে যেতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশের যে কোনও বিপর্যয় প্রসঙ্গে ইন্দিরা-রাজীবের দিকে বারে বারেই আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। আম্বেদকরের হাত ধরে যে সংবিধানের গোড়াপত্তন, ১৯৭৬ সালে ইন্দিরার আমলেই তার ৪২তম সংশোধনে ‘সেকুলার’ ও ‘সোশালিস্ট’ শব্দ দুটি জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই ৪২তম সংশোধনীকে ‘কনস্টিটিউশন অফ ইন্ডিয়া’-র বদলে ‘কনস্টিটিউশন অফ ইন্দিরা’ বলে একসময় কটাক্ষ ছুড়তেন বিরোধীরা। তাহলে কি ইন্দিরার আমলে লাগু হয়েছিল বলেই তা বদল করার তোড়জোড় চলছে? এর বছর কয়েক আগেই বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্তকুমার হেগড়ে কর্ণাটকের এক সভায় জানিয়েছিলেন, সংবিধান বদলে দিতে এসেছে বিজেপি। সেখানে ইন্দিরা-যুগের এই বদলের কথাও উল্লেখ করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শুধু সেখানেই নয়, ২০১৫ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে যে সরকারি বিজ্ঞাপনটি দেখা গিয়েছিল, সেখানেও এই দুটি শব্দই উধাও হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ বিজেপি সরকার যে গোড়া থেকেই এই শব্দদুটির বিরুদ্ধে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে, শব্দদুটিতে তাদের মৌলিক আপত্তি একটা কারণ হতে পারে। অপর কারণটি হতে পারে এই যে, শব্দ দুটির যোগ হয়েছিল ইন্দিরা আমলে। নতুন ভারতে পুরনো অনেক কিছুই মুছে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই মুছে দেওয়ার অভ্যাসেই কি সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে বিদায় নিল শব্দ দুটি? সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।