বাসন্তীর সঙ্গে কিছুতেই বিয়ে দিচ্ছেন না ‘মসিজি’। আর তাই জলের ট্যাংকে উপরে উঠে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন শোলে-র বীরু। ধর্মেন্দ্রর সেই আইকনিক দৃশ্যই হাতিয়ার হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের। রাজস্থানে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঠিকঠাক পানীয় জল মিলছে না! কিংবা, রেশন নিয়ে সমস্যা! প্রতিবাদ যদি করতেই হয়, তবে করতে হবে একেবারে আইকনিক কায়দায়! কী সেটা? সোজা কথায়, ধর্মেন্দ্রর মতো উঠে যাও জলের ট্যাংকের উপরে। তার পর সোচ্চারে জানাও নিজেদের দাবি-দাওয়া। স্থানীয় ভাষায় প্রতিবাদের এই ধরনটির নাম ‘বীরুগিরি’। আর বীরুগিরিই ট্র্যাডিশন হয়ে উঠেছে রাজস্থানের বেশ কয়েকটি গ্রামে।
আরও শুনুন: একটা ইঁদুর ধরলেই ৪১ হাজার টাকা! দেশের কোন স্টেশনে মিলছে এমন সুযোগ?
সিনেমার ‘রামগড়’ প্রতিবাদের যে পথ দেখিয়েছিল, তাই-ই আয়ত্ত করে নিয়েছেন হনুমানগড়, শ্রীগঙ্গানগরের বাসিন্দারা। সিনেমা তো সেই ১৯৭৫ সালের। তারপর থেকেই কি এই ধরনের প্রতিবাদ চলছে। বর্ষীয়ান সাংবাদিক কারনিদান সিং রাজপুতের মতে, গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে এই প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় মানুষরা যে কোনও প্রতিবাদে ধর্মেন্দ্র-পথ বেছে নিচ্ছেন। তবে, এমন পথ বেছে নেওয়া কি কেবলই সিনেমার জনপ্রিতার কারণে? স্থানীয় নেতারা বলছেন, হয়তো সাধারণ ভাবে প্রতিবাদের দরুন মানুষের কথা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় না। তাই সাধারণ মানুষ এভাবেই প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন। তথ্য বলছে, এ কথার সত্যতাও আছে। যেমন, একবার সাধারণ মানুষ স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাতে কেউ কান দেননি। এরপর মানুষ জলের ট্যাংকের উপরে উঠে প্রতিবাদ করা শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে টনক নড়ে প্রশাসনের। আরও একবার পাট্টা বিলি নিয়েও শুরু হয় ক্ষোভ প্রকাশ। তবে সেবারও একই পথ ধরে তবেই প্রশাসনের সাড়া মেলে। এরকম ঘটনা বারবার ঘটতে থাকে। উল্লেখের বিষয় যে, এই এলাকাগুলোয় জলের ট্যাংকের সংখ্যাও বেশি। সুতরাং সাধারণ মানুষ যখন একবার এই উপায়ে সাড়া পাওয়া শুরু করেছেন, তখন সেই পরীক্ষিত পথেই তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যান। ক্রমে ক্রমে সেটিই প্রথা হয়ে গিয়েছে।
আরও শুনুন: লাগে না বেতন, প্লাস্টিক জমা দিয়েই স্কুলে পড়াশোনা পড়ুয়াদের
প্রতিবাদের এই ধরন কি তবে পাবলিসিটি স্টান্ট? সে প্রশ্নও উঠেছে। এমনকী কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, এই নিয়েও চিন্তায় আছে প্রশাসন। ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই ট্যাংকের সিঁড়ি নির্মাণে বদল আনা হয়েছে। যাতে সহজে যে কেউ ট্যাংকের উপর উঠতে না পারেন। তবে এই প্রতিবাদ যে শুধু চমক দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, তা স্বীকার করেছেন প্রায় প্রত্যেকেই। প্রতিবাদের চেনা পথ ধরে সমস্যার সমাধান খুঁজে না পেয়েই এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন মানুষ।
কড়া সমালোচকরা বলেন, সিনেমা অনেক সময়ই বহু অবাস্তব ঘটনা তুলে ধরে। তবে, তাই-ই যে ধীরে ধীরে বাস্তব হয়ে ওঠে, রাজস্থানের এই ‘বীরুগিরি’ যেন তারই প্রমাণ।