ঘোর অমানিশি রাত্রি তন্ত্রমতে মা কালীর আরাধনার পুণ্য লগ্ন। প্রতি মাসেরই অমাবস্যা তিথির রয়েছে কিছু বৈশিষ্ট্য। তবে কৌশিকী অমাবস্যার গুরুত্ব সবথেকে আলাদা। ভাদ্র মাসের এই তিথিতেই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন দেবী তারা। তাই এদিন সাধারণ কিছু নিয়ম পালনেই বদলাতে পারে ভাগ্য। আবার কিছু এমন কাজও রয়েছে যা এইদিন ভুলেও করা উচিত নয়। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
যে কোনও অমাবস্যা তিথিই তন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর মধ্যে কিছু অমাবস্যা পালন গৃহস্থের জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। কৌশিকী অমাবস্যা তেমনই এক তিথি। এদিন বাড়িতে কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করা উচিত সকলেরই। সেইসঙ্গে মাথায় রাখা উচিত কিছু বিধিনিষেধের কথাও। এদিন অনেকেই বাড়িতে দেবী তারা পুজোর আয়োজন করেন। সেইসঙ্গে কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে ভক্তের ঢল নামে তারাপীঠ মন্দিরে।
আরও শুনুন: মন্দিরের জল্পনাই কি সত্যি? প্রাচীন মসজিদ থেকে সরস্বতী মূর্তি উদ্ধার ঘিরে তোলপাড় মধ্যপ্রদেশ
কথিত আছে, এইদিনেই দেবী তারা মর্ত্যে আবির্ভূতা হন। অন্যদিকে পুরাণ বলছে দেবী তারার অপর নাম কৌশিকী। সেই দেবী কৌশিকীর নাম থেকেই এই অমাবস্যার সূচনা। পুরাণ মতে তিনিই বধ করেছিলেন শুম্ভ নিশুম্ভ নামের দুই পরাক্রমশালী দৈত্যকে। তবে সেই কাহিনি জানতে গেলে জানতে হবে সতীর পুনর্জন্মের কথা। দক্ষযজ্ঞের পর ভরা মঞ্চে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে যজ্ঞাগ্নিতে প্রাণ দেন সতী। পুনর্জন্মে ফিরে এলেন পার্বতী রূপে। অপূর্ব সুন্দরী হলেও সেই দেবীর গাত্রবর্ণ ছিল কালো। স্বামী মহাদেবও তাই কালিকা নামেই সম্বোধন করতেন তাঁকে। এমনই একদিন দেবতাদের সামনে কালিকা বলে সম্বোধন করায় ভয়ানক রেগে যান দেবী। অপমানিত হয়ে মানস সরোবরের ধারে দেবী বসেন এক কঠিন তপস্যায়। তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব ‘কালো’ পরিত্যাগ করেন দেবী। সেই কালো কোশিকা থেকেই জন্ম হয় অপূর্ব সুন্দর এক কৃষ্ণবর্ণ দেবীর। তিনিই দেবী কৌশিকী। তাঁর আবির্ভাব তিথিই চিহ্নিত হয় কৌশিকী অমাবস্যা হিসেবে। এদিকে ব্রহ্মার প্রদত্ত বরে প্রায় অমরত্ব লাভ করেছিলেন শুম্ভ নিশুম্ভ নামের দুই অসুর। কোনও পুরুষ নাকি তাঁদের বধ করতে পারবেন না। এমনকী সাধারণ কোনও নারীর হাতেও তাঁদের মৃত্যু নেই। যে নারী মাতৃগর্ভ ব্যতীত অন্য কোনও ভাবে জন্মলাভ করবেন, একমাত্র তাঁর হাতেই মৃত্যু হতে পারে এই দুই অসুরের। এমন বর পেয়ে মহা পরাক্রমের সঙ্গে তাঁরা দেবলোক আক্রমণ করে বসেন। অসহায় দেবতাদের রক্ষা করতে তখন আসরে নামেন দেবী কৌশিকী। কোনও জননীর গর্ভ থেকে নয়, দেবী কালীর দেহের অংশ থেকে তাঁর জন্ম। সুতরাং ব্রহ্মার বরের শর্ত অনুযায়ী তিনিই শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করতে সক্ষম। তাই তাঁর হাত ধরেই এই দুই দুর্দান্ত দৈত্যের কবল থেকে মুক্ত হল দেবলোক, মুক্তি পেলেন দেবতারাও। আর মর্তে প্রচারিত হল দেবীর মাহাত্ম্য।
আরও শুনুন: বিরল যোগে বদলাবে ভাগ্য! জন্মাষ্টমী তিথিতে ঠিক কোন সময় পুজোয় বসবেন?
সুতরাং একথা বলাই বাহুল্য এই তিথির ভূমিকা শাস্ত্রে যথেষ্টই রয়েছে। তাই এইদিনটি অবশ্যই সাত্ত্বিকভাবে কাটানো উচিত। সামর্থ্য থাকলে, তারা পুজোর ব্যবস্থা করা যেতেই পারে। অন্যথায় বাড়িতে কোনও মাতৃমূর্তি বা দেবী তারার প্রতিকৃতি থাকলে সেই ছবিতেই মালা দেওয়া অত্যন্ত শুভ। ভক্তিভরে দেবীকে স্মরণ করলেই তিনি তুষ্ট হন। সেইসঙ্গে কেউ যদি ধূপ-ধুনো বা মিষ্টি দিয়ে দেবীর পুজো করেন তাহলে শুভাশুভ ফল মেলে। দেবীকে আমিষ ভোগ দেওয়ার চল রয়েছে। তবে পুজোর দিনে অনেকেই নিরামিষ খান। কিন্তু এইদিন ভাত না খাওয়াই ভাল। একইসঙ্গে এদিন ভুল করেও কোনও মিথ্যে কথা বলবেন না। পারলে কাউকে সাহায্য করুন। দেবীর পুজো করার সঙ্গে সঙ্গে কেউ যদি কোনও খারাপ কাজে নিজেকে যুক্ত রাখেন তবে মারাত্মক রুষ্ট হতে পারেন দেবী তারা। আসলে দুষ্টের দমন করে সত্যের প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়েই দেবীর আবির্ভাব। তাই তাঁর ভক্তরাও যেন সর্বদা সত্যের পথে থাকেন এমনটাই চান দেবী। সাধারণ এই নিয়মের কথা মাথায় রাখলেই কৌশিকী অমাবস্যায় ভাগ্যে শুভ পরিবির্তনের সম্ভাবনা প্রবল।