চিড়িয়াখানায় গিয়ে সাপ দেখেছি আমরা অনেকেই। কিন্তু জ্যান্ত কেউটে বা কোবরা পাশে নিয়ে শুয়ে আছেন ভেবেছেন কখনও? স্বপ্নে বা নিদেনপক্ষে সিনেমায় দেখলেও কালঘাম ছুটেছে। কিন্তু আমাদের দেশেই এমন একটা জায়গা আছে যেখানে সাপের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান রয়েছে। আসুন, শুনে নিই কোথায়?
জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে একটি ছোট্ট বাচ্চা। হঠাৎ করে সে শুনতে পেল এক অদ্ভুত মোহিণী কণ্ঠস্বর। ভয় পাওয়া বাচ্চাটাকে সেই স্বর বলছে, ‘আমার কাছে এসো, তোমার কোনও ভয় নেই’। মিনিটখানেক ভয়ার্ত বাচ্চাটার চোখ এদিক ওদিক সেই স্বরকে অনুসরণ করতে চেষ্টা করে। হয়তো ভরসা খোঁজে। এইখানে এসে দর্শক দেখতে পাচ্ছেন, বাচ্চাটিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে এক ভয়ানয় বিষাক্ত সাপ। এবার গিলে নেওয়ার অপেক্ষা। আর এই সাপটিই এতক্ষণ কথা বলে ভুলিয়ে রেখেছিল বাচ্চাটিকে। ‘মোগলি’ সিনেমার এই দৃশ্যের সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, এই ভারতেই রয়েছে এমন এক গ্রাম, যেখানে বাচ্চারা একেকটা আস্ত কেউটে সাপের সঙ্গে বসে খেলা করে, নিশ্চিন্তে। হ্যাঁ সেই কেউটে, মনসামঙ্গলে যার কথা পাই আমরা। আর গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারাও এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নেন।
আরও শুনুন: মরেও শান্তি নেই! এইসব দেশে কেউ মারা গেলেও দিতে হয় মোটা টাকা জরিমানা
তথ্য বলছে এশিয়া মহাদেশের এই বিষধর সাপ কেউটে বা কোবরা এক ছোবলে যে বিষ উগরে দেয়, তাতে মারা যেতে পারে একটা আস্ত হাতি। এমন বিষধর সাপের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থানের কারণ কী তাহলে? স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই কেউটে সাপ গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বজায় রাখে। আর সেই আশা নিয়ে সাপের পুজোও করেন এখানকার গ্রামবাসীরা। তারা মনে করেন, সাপ আসলে তাদের রক্ষাকর্তা। তাই প্রতি বাড়িতেই তাদের থাকার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থাও করা হয় এখানে।
জানেন কি কোথায় রয়েছে সেই গ্রাম?
আরও শুনুন: বীর্য নিয়ে গিয়েছে ভিনগ্রহীরা! পৃথিবীর বাইরেও সন্তান জন্মানোর আশায় দিন গুনছেন ব্যক্তি
পুনে থেকে মাত্র ২০০ কিমি দূরে, মহারাষ্ট্রের শোলাপুর জেলায় অবস্থিত সেই গ্রামের নাম শেঠফল। আর এই কারণেই শেঠফল গ্রামে পর্যটকদের ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। চিড়িয়াখানায় সাপ দেখা যায় ঠিকই, কিন্তু এখানে তো একেবারে সামনে দেখে সর্পরাজের দেখা পাওয়ার সুযোগ মেলে। যদিও পর্যটকদের সাপেদের থেকে নিরাপদ দূরত্বেই থাকতে বলা হয়। হাজার হোক তারা তো আর শেঠফলের বাসিন্দা নন, তাই সাপেরা যে তাদেরও রক্ষা করবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে সাপ সম্পর্কে সকলকে শিক্ষিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকেই প্রচার অভিযান সারেন। তাঁরা প্রত্যেকেই সর্প বিশারদ। যতত্ত্র সাপ দেখলেই ভয় বা আতঙ্কিত না হওয়ার নিদান দেন তাঁরা। কোনওভাবে সাপ কামড়ালেও কেউ যেন কুসংস্কারের পথে না হাঁটেন সেই পরামর্শই দেন এই বিশেষজ্ঞরা। শোলাপুর গ্রামও যে খানিকটা তেমনই বার্তা দেয় তা বলাই বাহুল্য।