সব বাবা-মা-ই, তাদের সন্তানের জন্য, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সেরাটা চান। আর যতক্ষণ না হবু বাবা-মা নিজেদের ব্যাক্তিগত, পারিবারিক ও আর্থিক দিক সামলে সন্তানকে পৃথিবীতে আনার বিষয়ে, মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারছেন, ততদিন তারা গর্ভ নিরোধক ব্যবহার করতেই পারেন। কিন্তু অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না, প্রয়োজন ও পরিবার পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনটি তাঁদের পক্ষে উপযুক্ত হবে? আসুন, জেনে নিন।
ঠিকমত পরিকল্পনা ছাড়া সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তা যেমন মা-বাবার পক্ষে সুখকর হয় না, তাদের দুশ্চিন্তা এবং দুরবস্থার শেষ থাকে না, তেমনই নবজাতক শিশুটির বেড়ে ওঠার পক্ষেও সেটি একটি আদর্শ পরিবেশ হয়ে ওঠে না। তাই সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে কিছু পরিকল্পনা করে নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। নিজেদের সাধ্য ও সামর্থের মধ্যে তারা সবরকম আয়োজন নিয়ে, আগামীকে আহবান জানাতে প্রস্তুত হন। আর সেটাই হওয়া উচিৎ। আর সেইসব দিনগুলিতে হবু বাবা-মায়েরা তাদের দাম্পত্য জীবন টেনশন ফ্রি রাখতে বিভিন্ন ধরনের গর্ভ নিরোধকের সাহায্য নিয়ে থাকেন। দাম্পত্যজীবনে একে অপরকে জেনে-বুঝে নিতেও কিছুটা সময় লাগে। এক্ষেত্রে যারা অল্প সময়ের জন্য গর্ভ নিরোধ চাইছেন তারা এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টিন যুক্ত কম্বাইন পিলের, ২১ বা ২৮ দিন থেকে ৮৪ বা ৯১ দিনের ব্লিস্টার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই পিল নেওয়া শুরু করতে হবে, পিরিয়েডস শেষ হওয়ার পরদিন থেকে। এবং এগুলি কাজ করা শুরু করে ৭ দিন পর থেকে। সুতরাং প্রথম ৭ দিনের জন্য, কন্ডোমের মতো বিকল্প গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
কমবয়সী দম্পতিরা গর্ভ নিরোধের জন্য ইঞ্জেকশন ব্যবহার করতে পারেন। তিন মাস পর্যন্ত এটি কার্যকরী থাকে, তারপর আরেকটি নিতে হয়। তবে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তার পরেও শরীরে থেকে যায়। তাই সন্তান জন্মের ৬ মাসের মধ্যে এই ইঞ্জেকশন না নেওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তারেরা। আবার এটি নেওয়া বন্ধ করার পর নারী শরীর গর্ভধারণে পুণরায় সক্ষম হতে, প্রায় ১বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই তার মধ্যে সন্তান ধারণের পরিকল্পনা যারা করছেন, এবং বেশি বয়সের যে দম্পতিরা পরে সন্তান নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি না নেওয়া উচিৎ।
আরও শুনুন: মৃত্যুর আগে পেতে চান চরম সুখ! স্বামীর কাছে প্রাক্তনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আবদার স্ত্রীর
আবার, যারা প্রথম সন্তান জন্মের পর আর কোনও সন্তান চান না বা একটা লম্বা সময় ব্যবধান রাখতে চান, তাঁরা IUD পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। প্রজেস্টিন IUD-গুলি টানা, ৩ থেকে৬ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। আর কপার IUD প্রায় ১০ বছর। বলে রাখা প্রয়োজন, অসুরক্ষিত যৌন সঙ্গমের পর যেখানে বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যুক্ত, এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল নেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায় সেখানে, ওই ধরনের সঙ্গমের ৫ দিনের মধ্যে IUD পদ্ধতি ব্যবহার, একটা দীর্ঘকালীন সমাধান হতে পারে। এছাড়া যারা আর সন্তান চান না, সেই পুরুষ ও নারী উভয়ই স্থায়ী গর্ভনিরোধ বা বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে পারেন।
আরও শুনুন: ২৪ ঘণ্টায় ৫৭ জনের সঙ্গে যৌনতা, সঙ্গম শেষে কী অবস্থা হয়েছিল যুবকের?
২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে সবকিছুই আমাদের হাতের নাগালে এসে গেছে। মাতৃত্বের প্রতি আকাঙ্খাও কমছে। এখন হঠাৎ করে বা অযাচিতভাবে মা হয়ে যাননা কেউই। বলা যায়, স্ত্রী হিসেবে বা অবিবাহিত সম্পর্কে থেকে নারী এখন অনেক স্বাধীনভাবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে সন্তান যেহেতু বাবা-মা দুয়েরই দায়িত্ব, তাই দুজনের ইচ্ছা, প্রয়োজন, ও শারীরিক অবস্থার নিরিখে, গর্ভ নিরোধের পরিকল্পনাটা কিন্তু একেবারে আগে ভাগেই করে ফেলতে হবে। হবু মায়েদের দায়িত্ব যদিও স্বাভাবিক কারণেই বেশি থাকে। এজন্য নিজের কিছু অভ্যাসেরও পরিবর্তন করতে হতে পারে। তবে গর্ভ নিরোধক বাছার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।