মারা গিয়েছেন প্রিয়জন। তবু তাঁকে যেতে দিতে নারাজ কাছের মানুষটি। তিনি বিশ্বাস করেন, কোনও একদিন নাকি ফের বেঁচে উঠবেন ওই মৃত ব্যক্তি। তাই সেই মৃতদেহ আগলেই বসে আছেন তিনি। তবে যেমন তেমন করে নয়। রীতিমতো কোটি কোটি টাকা খরচ করে। হ্যাঁ, এভাবেই নাকি প্রিয়জনের দেহ সংরক্ষণ করছেন অনেকেই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মমির কথা কে না জানে! এককালে মৃতদেহকে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল মিশরীয়রা। কিন্তু এ তো সেই প্রাচীন কাল নয়, আধুনিক যুগ। মাঝে মাঝে খবরে শোনা যায় বটে, কেউ কেউ তাঁদের প্রিয়জনের মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে তাঁদের দেহ আগলে রেখেছেন। কিন্তু তার ফলে সে দেহ পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায় স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু সে পথে হাঁটেননি এই মানুষেরা। এরাও প্রিয়জনকে ছেড়ে দিতে নারাজ। কিন্তু তাঁর দেহকে অবিকৃত ভাবেই তাঁরা রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করেই এই ব্যবস্থা করছেন তাঁরা। তার কারণ, এরা আশা করেন যে একদিন তাঁদের ওই প্রিয় মানুষেরা আবার বেঁচে উঠবেন।
ব্যাপারটা আসলে কী? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: Serial Killer: খুনের হাতিয়ার চরণামৃত! কেবল মেয়েদেরই খুন করত এই মহিলা সিরিয়াল কিলার
জানা যাচ্ছে, এক বিশেষ পদ্ধতিতে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখা যায়, যাতে সেটি নষ্ট হয় না। এইভাবে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিতে ‘ক্রায়োনিক্স’ বলে। ‘ক্রায়োনিক্স’ হল অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় মানুষের দেহকে হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা। এই পদ্ধতিতে দেহ মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠান্ডা করে তা অতি সাবধানে তরল নাইট্রোজেনের একটি বিশাল পাত্রে ডুবিয়ে রাখা হয়। সেই পদ্ধতির খরচ প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা দু’কোটি টাকারও বেশি। ১৯৬৭ সালে চিকিৎসক জেমস বেডফোর্ডের দেহটি প্রথম ‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতিতে হিমায়িত করে রাখা হয়েছিল। ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকার প্রায় ২৫০ জনের দেহ এই পদ্ধতিতে সংরক্ষিত করে রাখা আছে। প্রায় দেড় হাজার মানুষ মৃত্যুর আগেই নিজেদের নাম নথিভুক্ত করে রেখেছেন।
আরও শুনুন: আকাশে নয়, পাহাড়ের গায়েই ফোটে রামধনু! কোথায় দেখা মেলে ‘রেনবো ওয়াটারফলে’র?
কিন্তু কেন এইভাবে দেহ সংরক্ষণ করতে চাইছেন তাঁরা? তার কারণ, এরা বিশ্বাস করেন, মৃত্যু মানেই মানুষের দেহ নষ্ট হয়ে যায় না। সে আবার বেঁচে উঠতে পারে। এই মানুষেরা বিশ্বাস করেন, ‘ক্রায়োপ্রিজারভ’ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে মৃতদেহগুলি আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে। তবে এই তত্ত্বকে বুজরুকি বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।