ভাগ্য ফেরাতে আংটি পরুন। গয়নার দোকানে হামেশাই এমন বিজ্ঞাপন দেখা যায়। ভাগ্য ফেরে কি না, সে বিষয়ে তর্ক হতেই পারে। কিন্তু স্রেফ একটা রত্নের জেরে কারও জীবনে হাজারও দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে, তা প্রমাণিত সত্য। ঠিক কোন রত্নের কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
সামান্য একটা রত্ন। অবশ্য সামান্য বললে ভুল বলা হবে। কারণ এই রত্নই হাজার হাজার মানুষের জীবনে ডেকে এনেছে ভয়ানক বিপদ। ধারণ করা দূরে থাক, এই রত্নটি কাছে রাখলেও ঘনিয়ে আসতে পারে বিপদ। বহুবার হাত ঘুরে অবশেষে বিশেষ এক স্থানে সুরক্ষিত রয়েছে সেটি। কিন্তু এতদিনে যে কজন এর মালিকানা পেয়েছেন তাঁদের সকলেরই জীবনই ঢেকেছে দুর্ভাগ্যের কালো মেঘে।
আরও শুনুন: ইমাম শাহ হলেন সদগুরু মহারাজ, হিন্দু ভক্তরা পিরের নাম বদলে দিতেই ক্ষুব্ধ মুসলিমরা
ব্রিটিশ আমলে ভারত থেকে মণি-মাণিক্য চুরি যাওয়ার কথা সকলেরই জানা। তেমনই এক চুরি যাওয়া রত্ন দিল্লির ‘নীলা’। যদিও অনেকেই মনে করেন এই নীলার উৎপত্তি কানপুরে। গাঢ় বেগনি রঙের জ্বলজ্বলে পাথর। আকারে খুব বড় নয়। কিন্তু তাতে কি! এইটুকু পাথরই অনেকের জীবন বদলে দিয়েছিল। তবে আলো নয়, অন্ধকারের পথে তাঁদের ঠেলে দিয়েছিল এই পাথর। শোনা যায়, প্রায় ১১৬ বছর আগে এই নীলাটি চুরি হয়েছিল কানপুরের প্রসিদ্ধ ইন্দ্রমন্দির থেকে। সেসময় সিপাহী বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে দেশে। শোনা যায়, কোনও এক ব্রিটিশ সেনা অফিসার পাথরটি চুরি করেছিলেন। তারপর সোজা ইংল্যান্ডে চলে যান তিনি। কিন্তু সেখানে গিয়েই তাঁর জীবনে নেমে আসে হতাশার অন্ধকার। প্রথমে অর্থনৈতিক মন্দা। কিছুদিনের মধ্যেই বিস্তর ধার দেনায় ডুবে যান তিনি। এরপর শুরু হয় শরীরের সমস্যা। একের পর এক রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন তিনি। তাঁর পরিবারের লোকজনও সেই রোগের হাত থেকে রেহাই পাননি। প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও, হঠাতই তাঁর মনে হয় এই দুর্ভাগ্যের কারণ হতে পারে ওই নীলা। তক্ষুনি এক রত্ন বিশেষজ্ঞের কাছে পাথরটা নিয়ে যান তিনি। কীভাবে এই পাথর তিনি এনেছেন সে কোথাও খুলে বলেন। ভালভাবে দেখে ওই বিশেষজ্ঞ পাথরটা কিছুদিনের জন্য নিজের কাছে রাখতে চান। কিন্তু তার কিছুদিনের মধ্যেই ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়েই ছুটে যান ওই ব্রিটিশ অফিসার। তাঁর এতটুকু বুঝতে বাকি ছিল না, যা হচ্ছে সব ওই পাথরের জন্যই। তাই কাল বিলম্ব না করে পাথরটা বিক্রি করে দেন তিনি।
আরও শুনুন: নারীদের নগ্ন দেখাই শখ! ‘জাদু আয়না’ কিনে ৯ লক্ষ টাকা খোয়ালেন ব্যক্তি
এরপরের কয়েক বছর পাথরটা কোথায় বা কার কাছে রয়েছে তার হদিশ পাওয়া যায় না। কিন্তু এই পাথর যে অভিশপ্ত তার প্রমাণ মেলে, বিজ্ঞানীর এডওয়ার্ড হেরেনের জীবনের ঘটনায়। জানা যায়, ১৮৯০ সালে এই পাথর বিজ্ঞানীর হাতে আসে। বিরল এবং মূল্যবান ভেবেই তা সংগ্রহে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু এই পাথর যে তাঁর জীবনেও অন্ধকার ডেকে আনবে তা বুঝতে পারেননি। একের পর এক খারাপ ঘটনা ঘটতে শুরু করে তাঁর জীবনে। তিনি ব্রিটিশ অফিসারের মতো পাথরটি এক বন্ধুকে দেন। তাঁরও জীবনে একইভাবে অঘটন ঘটতে শুরু করে। এখানেই শেষ নয়। এরপর ওই পাথর পেয়েছিলেন এক গায়ক। শোনা যায় তিনি তারপর গান গাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলেন। অবশেষে বহু হাত ঘুরে পাথরটি ব্রিটেনের এক মিউজিয়ামে জায়গা পায়। দীর্ঘদিন সেখানে বাক্সবন্দি অবস্থায় পাথরটি রাখা ছিল। পরে অবশ্য বাক্সটি সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও কারও ব্যক্তিগত মালিকানায় নেই ওই পাথর। মিউজিয়ামের শোকেসে কাচের ভিতর উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে এই অভিশপ্ত নীলা।