স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিতে প্রতি বছরই মাথায় রঙিন পাগড়ি বেঁধে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রত্যেক বছরই সেইসব পাগড়ির রং ঢং বদলে বদলে যায়। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসে তাঁর পাগড়ি পরার কি কোনও বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে? শুনে নেওয়া যাক।
দেশের যেসব রাজনৈতিক নেতা বেশ পোশাক সচেতন, নরেন্দ্র মোদি যে তাঁদের অন্যতম, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন দেশে বা রাজ্যে গিয়ে সেখানকার বেশে সাজতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাই প্রধানমন্ত্রীর পোশাকের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক কাজকর্মের সাযুজ্য খোঁজে রাজনৈতিক মহলও। আর সেই ভাবনাই আরও একবার উসকে দিয়েছে চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর সাজসজ্জা, বিশেষ করে মাথার পাগড়িটি।
আরও শুনুন: লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে সাহায্য দুই নারীর, কারা তাঁরা?
২০১৯ সালের নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এবারই ছিল মোদীর শেষ স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা। দেখা গিয়েছে, দশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রত্যেকবারই পাগড়ি পরে লাল কেল্লায় হাজির হয়েছেন তিনি। তার অন্যথা হয়নি এবারেও। রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী বাঁধনি প্রিন্টের রংবেরং কাপড়ের পাগড়ি পরে এবছর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উজ্জ্বল হলুদ ও লাল রঙের সঙ্গে তাতে সবুজ বেগুনি রঙের কাজ। তবে এই প্রথমবার নয়। ২০১৪ ছিল প্রধানমন্ত্রী হিসাবে লাল কেল্লায় মোদির প্রথম ভাষণ। সেবারও রাজস্থানের যোধপুরী প্রিন্টের উজ্জ্বল কমলা-সবুজ পাগড়ি পরেছিলেন তিনি। পরের বছর ঘিয়ে রঙের কুর্তা এবং জ্যাকেটের সঙ্গে তিনি পরেন হলুদ জমির উপর রং-বেরঙের রেখা টানা পাগড়ি। ২০১৬ সালের অনুষ্ঠানে গেরুয়া, হলুদ, লাল এবং গোলাপি রঙের টাই-ডাই পাগড়ি বেছে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৭-তেও টাই-ডাই ধরনের লাল-হলুদ মেশানো পাগড়ি পরেন তিনি। ২০১৮ সালে ফের রাজস্থানের বাঁধনি প্রিন্টে ফিরে যান তিনি, পাগড়ির রং ছিল গেরুয়া আর লাল। ২০১৯ সালেও রাজস্থানি লহরিয়া কাপড়ের পাগড়ি পরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। হলুদের সঙ্গে লাল সবুজ গেরুয়া বেগুনি নানা রঙের ছোঁয়া ছিল সেই পাগড়িতে।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে জিতে ফের পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় ফেরেন মোদি। যদিও পরের বছর স্বাধীনতা দিবসের সময় কোভিডে ধুঁকছে দেশ। সে বছর স্বাধীনতা দিবসে গেরুয়া ও ক্রিম রঙের টাই ডাই পাগড়ি পরেন মোদি। ২০২১ সালে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর ঘোষণা করার সময় জাফরানি রঙের সঙ্গে সাদা বাদামি লহরিয়া কাজের পাগড়ি বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে মোদি পরেছিলেন সাদার উপর গেরুয়া এবং সবুজ রঙের ছাপ দেওয়া পাগড়ি।
আরও শুনুন: ভারতে যারা জন্মায় তারা সবাই হিন্দু, গুলাম নবি আজাদের দাবিতে শোরগোল নেটদুনিয়ায়
স্বাধীনতা দিবসে গোটা জাতির মুখোমুখি হওয়ার সময় নরেন্দ্র মোদি যে ভেবেচিন্তেই পোশাক বেছে নেবেন, তা আন্দাজ করাই যায়। আঞ্চলিক কাপড়ের পাগড়ি বেছে নেওয়া, তারপরেও বৈচিত্র্য জারি রাখা থেকে মনে হয়, ভারতের বিচিত্র সংস্কৃতির প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল, এ কথাটিই বোঝাতে চাইছেন মোদি। পাশাপাশি অধিকাংশ পাগড়ির নজর কাড়ার মতো উজ্জ্বল রং হয়তো ব্যবহৃত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিকে আরও উজ্জ্বল করে তোলার জন্য। তবে রাজনৈতিক অঙ্কও কি নেই? সমালোচকেরা বলছেন, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের মরশুমে, ২০২১ সালের স্বাধীনতা দিবসে সরু তাঁতের পাড়ের উড়নি গলায় ঝুলিয়েছিলেন মোদি। আবার ২০২২ সালে বিধানসভা ভোট ছিল হিমাচলপ্রদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে। সে বছরের স্বাধীনতা দিবসের পাগড়িটি অবশ্য তেরঙ্গাকেই সূচিত করেছে। ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ কর্মসূচি নিয়ে বিজেপি যে বিপুল প্রচার চালিয়েছে, সেখানে এই পাগড়িটি যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেই বছরেই সাধারণতন্ত্র দিবসের বক্তৃতা দিতে মোদি হাজির হয়েছিলেন হিমাচলি টুপি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ঐতিহ্যবাহী উড়নি গলায় জড়িয়ে। আর চলতি বছরে ফের রাজস্থানি ধাঁচের পাগড়ি বেছে নেওয়ার পিছনে রাজস্থানের বিধানসভা ভোটের ইশারা দেখছেন অনেকেই। বিরোধীদের দাবি, শুধু স্বাধীনতা দিবসেই নয়, গত ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসেও রাজস্থানের বাঁধনি প্রিন্টের পাগড়ি পরেছিলেন তিনি। কংগ্রেসের হাত থেকে রাজস্থান ছিনিয়ে নিতে যে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে বিজেপি, এ ঘটনা তারই ইঙ্গিত বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।