ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মন্দিরের দ্বার। দলে দলে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন সকলে। কিন্তু ফেরার সময় কারও হাতে দেখা যাচ্ছে সোনার গয়না তো কারও হাতে রুপো। মন্দিরে পুজো দিতে সোনা-রুপা পেলেন কোথাও তাঁরা? জানা গেল, মন্দির থেকেই এসব প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কোথায় রয়েছে এমন অদ্ভুত মন্দির? আসুন শুনে নিই।
পুজোর শেষে প্রসাদ পাওয়া খুবই সাধারণ বিষয়। সেক্ষেত্রে মূলত ফুল বা মিষ্টিই দেওয়া হয়। কিন্তু এমনটা কখনও শুনেছেন, মন্দিরে প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়েছে সোনা-রুপোর গয়না। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। দেশে রয়েছে এমনও এক মন্দির যেখানে প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের সোনা-রুপো দেওয়া হয়।
আরও শুনুন: লাগে টাকা দেবেন হনুমান! দেশের এই মন্দিরে টাকা ধার দেন স্বয়ং সংকটমোচন
কথা বলছি মধ্যপ্রদেশের রাতলাম মহালক্ষ্মী মন্দির সম্পর্কে। শুধুমাত্র দেবী মহালক্ষ্মীর আরাধনা হয়, এমন মন্দিরের সংখ্যা খুবই কম। তার মধ্যেও বিরলতম এই রাতলাম মন্দির। কারণ এই মন্দিরেই ভক্তদের প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় সোনা-রুপো। নারায়ণের ঘরনি দেবী লক্ষ্মী ধনদাত্রী। জগতের যাবতীয় ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী তিনিই। আবার তিনিই মাতৃস্বরুপা। পুরাণে বিভিন্নভাবে তাঁর উল্লেখ মেলে। কোথাও তিনি সমুদ্রমন্থনের সময় অমৃতকুম্ভ হাতে উঠে আসা দেবী। আবার কোথাও তিনি মহামায়া দেবী দুর্গার কন্যা স্বরূপা। আবার বিষ্ণুপত্নী হিসেবেও একাধিক আখ্যানে তাঁর উল্লেখ মেলে। তবে দেবী মাত্রেই মহামায়ার অংশ। লক্ষ্মীও তার ব্যতিক্রম নন। মাতৃস্বরূপা এই দেবী যেমন শান্ত তেমনই স্থির। মর্তে মূলত তাঁর দুটি রূপের আরাধনা করা হয়। একটি গৃহলক্ষ্মী কোজাগরী, অন্যটি মহালক্ষ্মী কমলা। দুই রূপের পার্থক্যও বিস্তর। রাতলামের মন্দিরের প্রধান আরাধ্যা দেবী মহালক্ষ্মী। সেই অনুসারে দেবীর চার হাত। পদ্মপ্রিয়া দেবী বিরাজও করছেন পদ্মের উপরই। তবে এক্ষেত্রে বিগ্রহটি সাজানো থাকে টাকার মালা আর নানা রকমের গয়না দিয়ে। শুধুমাত্র উজ্জ্বল মুখটুকু ছাড়া বিগ্রহের আর কোনও অংশ দৃশ্যমান নয় বললেই চলে। কারণ বাকিটা জুড়ে শুধুই টাকা।
আরও শুনুন: ‘তব চরণে নত মাথা’, স্বাধীনতা দিবসে কবিগুরুকে বিশেষ সম্মান নোবেল কমিটির
আসলে, এই মন্দিরে ভক্তরা পুজোও দেন সোনা-রুপো বা টাকা দিয়েই। শোনা যায়, দেবী এতই জাগ্রত যে এখানে মনের ইচ্ছা জানিয়ে গেলে তা পূরণ হতে বাধ্য। বিশেষত ব্যবসার ক্ষেত্রে দেবীর আশীর্বাদ খুবই কার্যকরী। তাই মনের ইচ্ছা পূরণ হলে দেবী মন্দিরেও কার্যত টাকার বন্যা বইয়ে দেন কেউ কেউ। এই মন্দিরে স্রেফ একজন ভক্তের কোটি টাকা দান করার নজিরও রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে সোনা-রুপো দানের চলও। যদিও দেশের বেশ কিছু মন্দিরে ভক্তরা এইভাবে টাকা বা গয়না দান করেই থাকেন। কিন্তু রাতলামের মন্দির অন্য এক কারণে সেইসবের থেকে আলাদা। কারণ এখানে ভক্তদের দেওয়া টাকা বা গয়নাগাটি ভক্তদের মধ্যেই বিলিয়ে দেওয়া হয়। সারা বছরই মন্দির খোলা থাকে। তবে যে কেউ সেইসময় গর্ভগৃহে প্রবেশের সুযোগ পান না। তাই বছরের যেকোনও সময় গেলেই যে প্রসাদ হিসেবে সোনা-রুপো মিলবে তা নয়। ধনতেরসের সময় শুধু সেই সুযোগ মেলে। এইসময় মন্দিরের মূল অংশ টানা ৫ দিনের জন্য খোলা থাকে। আর তখনই বছর ভর ভক্তদের দান করা সোনাদানা বিলিয়ে দেওয়া হয়। শুধু টাকা পয়সা নয়, দেওয়া হয় দেবী মহালক্ষ্মীর আশীর্বাদ ধন্য শ্রীযন্ত্রমও। মনে করা হয়, এই যন্ত্রম ঘরে বা ব্যবসার স্থানে রাখলে আর্থিক উন্নতির পথ আরও সুগম হয়। তাই প্রতিবছর ওই নির্দিষ্ট সময় মন্দিরে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। তবে স্থানীয় বিশ্বাস, সোনা-রুপো পাওয়ার লোভে কেউ এই মন্দিরে আসেন না। বরং সোনাদানা পেলেও তা দেবীর আশীর্বাদ হিসেবেই তাঁরা রেখে দেন। আসল উদ্দেশ্য এই মন্দিরে পুজো দেওয়া। সারা বছর যেন আর্থিক অনটনের মুখ না দেখতে হয়, সেই আশাতেই এখানে পুজো দিতে আসেন ভক্তরা। তবে এইভাবে ভক্তদের মধ্যে টাকা বা গয়না বিলি করার ঘটনা নজিরবিহীনই বলা চলে।