শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। কীভাবে এহেন ভয়াবহ ঘটনাকে প্রতিরোধ করা যায়, তার উত্তর হাতড়ে চলেছেন সকলেই। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, প্রায় দেড় দশক আগেই সেই প্রতিরোধের জন্য কিছু উপায় সুপারিশ করেছিল একটি কমিতি। কী ছিল সেইসব উপায়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
র্যাগিং শব্দটি শুনলেই যেন কেঁপে উঠতে হয়। অথচ আড়ালে আবডালে এই অভ্যেস চোরাগোপ্তা ভাবে চলছেই। আসলে এ তো ক্ষমতারই খেলা। যে আমার চেয়ে দুর্বল, তাকে উৎপীড়ন করে মজা পাওয়া। সত্যি বলতে, এ অভ্যাস তো কমবেশি জারি রয়েছে সমাজের সর্বত্রই, তাই নয় কি? আর সেই অভ্যাসই ছাপ ফেলছে শিক্ষাঙ্গনের ভিতরেও। সেখানে একাধিক পড়ুয়ার মজা পাওয়ার চোটেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে এক বা একাধিক পড়ুয়ার জীবন, কখনও ঘটছে মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতরে র্যাগিংয়ের অভ্যাস চারিয়ে যাওয়া নিয়ে বরাবরই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিন্তাশীল মানুষেরা। র্যাগিং আটকাতে বারবার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টও। আর সেই লক্ষ্যেই, আজ থেকে প্রায় দেড় দশক আগে রীতিমতো একটি কমিটি তৈরি করেছিল দেশের শীর্ষ আদালত। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যে কমিটি জানিয়েছিল, র্যাগিং প্রতিরোধ করার জন্য কী কী উপায় অবলম্বন করতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলি। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ফের চর্চায় উঠে এসেছে সেই সুপারিশ।
আরও শুনুন: ধর্ষণের ঘটনাতে সায় মহিলাদেরও! অরুন্ধতী বলছেন, আমাদের এখন ‘গভীর অসুখ’
১৯৯৯ সালে একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট ইউজিসি-কে নির্দেশ দেয়, র্যাগিং রোখার জন্য নির্দেশিকা জারি করতে হবে। এরপর ২০০১ সালে আরও একটি মামলাতেও সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, কোনও ছাত্র র্যাগিংয়ের শিকার হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এফআইআরের দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু এরপরেও র্যাগিংয়ের অভ্যাসকে উচ্ছেদ করা যায়নি। আর তাই, ২০০৭ সালে কেরলের একটি মামলার প্রেক্ষিতে রাঘবন কমিটি তৈরি করে দেশের শীর্ষ আদালত। এই কমিটির মাথায় ছিলেন সিবিআইয়ের প্রাক্তন ডিরেক্টর আর কে রাঘবন। সমস্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এই কমিটি একগুচ্ছ গাইডলাইন পেশ করেছিল। যেগুলি মেনে চললে র্যাগিংয়ের প্রবণতায় খানিক লাগাম টানা যেতে পারে বলেই দাবি করেছিল কমিটি।
কী কী ছিল সেই নির্দেশিকায়?
আরও শুনুন: ‘পাপ্পু’ ব্যঙ্গ উধাও! কেন রাহুল ক্রমে মাথাব্যথার কারণ বিজেপির কাছে?
বলা হয়েছিল, প্রতিটি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে অ্যান্টি-র্যাগিং সেল তৈরি করতে হবে। এমনকি এই বিষয়টির উপর প্রতিষ্ঠানের গ্রেড নির্ভর করবে, এমন কথাও হয়। র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে কড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। ইউজিসি-র ফোন নম্বর চালু করতে হবে, যেখানে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়। একইসঙ্গে বলা হয়, র্যাগিংয়ের বিরোধিতা এবং মানবাধিকারের দিকটিকে গুরুত্ব দিয়ে কাউন্সেলিং করতে হবে নিয়মিত। পাশাপাশি ওই কমিটি সুপারিশ করেছিল, হস্টেলে সিনিয়র ও জুনিয়রদের আলাদা রাখতে হবে। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের আলাদা রাখার কথাই বলা হয়েছিল। তবে কলেজের কর্মীদের উপস্থিতিতে যেন আলাদা আলাদা বর্ষের পড়ুয়াদের মধ্যে আদানপ্রদান চলে, নতুন ও পুরনো পড়ুয়াদের নিয়ে যৌথ কর্মশালার আয়োজন করা হয়, এবং সেখান থেকে সহজ সম্পর্ক তৈরি হয়, সেদিকেও নজর দিতে বলেছিল রাঘবন কমিটি।
রাঘবন কমিটির এই গাইডলাইনের পর, ২০০৯ সালেও র্যাগিং রুখতে একাধিক নির্দেশ জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরিজিত্ পাসায়াত ও অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ। কিন্তু এইসব সুপারিশের যথাযথ প্রয়োগ যে কখনোই হয়নি, সে কথাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ছাত্রমৃত্যুর এই সাম্প্রতিক ঘটনা।