বিশ্ব জুড়ে কর্মহীনতার বাড়বাড়ন্তে অশনি সঙ্কেত দেখছেন সকলেই। এর মধ্যেই নতুন করে আশঙ্কা বাড়িয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গত এক বছরে কয়েক লক্ষ মানুষের চাকরি কেড়েছে AI। আগামী দিনে তা আরও বাড়তে পারে বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। তবে কয়েকটি কর্মক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কখনই হানা দিতে পারবে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তালিকায় কোন কোন সেক্টর রয়েছে? আসুন শুনে নিই।
জুতোসেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, এআই যেন সবই করতে পারে। কম্পিউটারে কাজ কিংবা বই লেখা, সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা সম্ভব। এমনকি প্রেমপত্র লেখাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এবার এত কাজ যদি স্রেফ একটা যান্ত্রিক প্রযুক্তি করতে ফেলতে পারে তাহলে আর মানুষের দরকার কেন? বাস্তবে ঘটছেও তাই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জেরে চাকরি হারাচ্ছেন অনেকেই। তবে এখনও কয়েকটা ক্ষেত্রে থাবা বসাতে পারেনি AI। বিশেষজ্ঞদের দাবি আগামী দিনেও এইসব ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আরও শুনুন: ‘পূর্বপুরুষদের ভুল শোধরানো উচিত’, জ্ঞানবাপী কাণ্ডে মুসলিমদের নিশানা অযোধ্যার মহান্তের
ইতিমধ্যেই অনেক অফিসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিভিন্ন কাজ করে নেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে তা বাড়বে বই কমবে না। কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষের চাকরি খোয়ানোর আশঙ্কা বেশি তা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সম্প্রতি এর ঠিক উলটো দিকটাও খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। অর্থাৎ AI-র দৌরাত্মে কোন কোন ক্ষেত্রে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই, তা খুঁজে বার করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কৃত্রিম বিদ্ধিমত্তার জেরে মূলত তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রেই চাকরি খোয়ানোর আশঙ্কা বেশি ছিল। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ক্ষেত্রেও কিছু কাজ কোনওদিন AI দ্বারা হবে না। ভবিষ্যতেও সেই কাজের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন হবে একজন মানুষ। তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ম্যানেজার পদটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ত সব কাজই করে দেবে, কিন্তু সেই কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, কিংবা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার জন্য অবশ্যই একজন রক্তমাংসের মানুষই প্রয়োজন। এছাড়া, ওয়েব ডেভেলপার, ডাটা এডমিনিস্ট্রেটর কিংবা সিকিউরিটি অ্যানালিস্টের পদে কর্মরত ব্যক্তিদেরও ভবিষ্যতে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি বিশেশজ্ঞদের।
আরও শুনুন: মন্দির না মসজিদ! ‘জ্ঞানবাপী আসলে বৌদ্ধ মঠ’, দাবি পৌঁছল সুপ্রিম কোর্টে
কিন্তু এতো গেল স্রেফ আই-টি সেক্টের কথা। এর বাইরেও কিছু ক্ষেত্রে চাকরি হারানোর আশঙ্কা নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞদের দাবি অনুযায়ী, বাইরের ভারী কাজে কখনই ভাগ বসাতে পারবে না AI। অর্থাৎ কারখানায় শ্রমিকের কাজ, চাষবাস, পাথর ভাঙার কাজ কিংবা এই জাতীয় যে কোনও কাজই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা করতে পারবে না বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া ব্যবসায়ীদেরও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিশেষ ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কোনওদিনই বাজারে গিয়ে কিছু বিক্রি করার মতো ক্ষমতা হবে না AI-এর। যদিওবা কোনও রোবোট তৈরি করে সেই কাজ করা হয়, সেক্ষেত্রেও একজনকে থাকতে হবে সেই রোবোট পরিচালনার জন্য। ব্যবসার ক্ষেত্রে সাধারণত কোনও নিয়ম থাকে না, বিশেষত যারা খুচরো ব্যবসায়ী, তাঁরা কোন ক্রেতাকে কীভাবে জিনিস বিক্রি করবেন তা আগে থেকে ভেবে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই এই কাজে হাজার চেষ্টা করেও ভাগ বসাতে পারবে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের। আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দিয়ে কিছু করাতে হলে, আগে থেকে সবটা প্রোগ্রাম করে দিতে হয়। তাই যেসব কাজ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হয় না, তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে পেরে ওঠা সম্ভব নয় বললেই চলে। অন্যদিকে এমনটাও অনেকে মনে করছেন, মানুষ কোনও কাজ করলে তাতে কিছু না কিছু ভুল থাকাই স্বাভাবিক। আবার দিনের পর দিন সেই ভুলটাই অভ্যাস করে ফেলেন অনেকে। তখন সেটাই স্বাভাবিক হয়ে যায় তাঁদের কাছে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই ভুল জিনিস কখনই করতে পারবে না। তাই AI এর করা কাজ যতই সঠিক হোক, কিছু ক্ষেত্রে তা অবাস্তব মনে হতে বাধ্য। সেই ধারণা থেকেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দিনেও কিছুক্ষেত্রে থাবা বসাতে পারবে না AI।