সংসারে শান্তি বজায় রাখতে সপ্তাহে প্রতিটা দিন নির্দিষ্ট দেবদেবীর পুজোর চল রয়েছে। যার মধ্যে শুক্রবার দেবী সন্তোষীর জন্য নির্দিষ্ট। এইদিন ভক্তভরে মা সন্তোষীর পুজো করলে যে কোনও অভীষ্ট সিদ্ধি হয়। ভক্তের যাবতীয় বিপদ কাটিয়ে দেন দেবী। কীভাবে করতে হয় এই দেবীর পুজো? আসুন শুনে নিই।
জগতে সবকিছুই চলে তাঁর ইঙ্গিতে। দেবী মাত্রেই সেই মহামায়ার অংশবিশেষ। সন্তোষীও তার ব্যতিক্রম নন। তবে ভক্তের কল্পনায় তিনি দেবী অপেক্ষা মাতৃরূপেই বিরাজমানা। মর্তবাসীর কাছে তিনি মা সন্তোষী হিসেবেই অধিক জনপ্রিয়।
আরও শুনুন: জল দিলেও শুকিয়ে যাচ্ছে বাড়ির তুলসীগাছ! বড়সড় বিপদের ইঙ্গিত, কীভাবে সাবধান হবেন?
শাস্ত্রে একাধিক ক্ষেত্রে দেবীর এই বিশেষ রূপের উল্লেখ মেলে। পুরাণমতে, দেবী সন্তোষী গণেশ কন্যা। তাই তাঁকে সন্তুষ্ট রাখলে খুশি হন গণপতিও। প্রতি সপ্তাতে শুক্রবার দেবীর পুজোর দিন। এইদিন বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে ব্রত করলে অবশ্যই ফল মেলে। একটানা ১৬টি শুক্রবার ব্রতের নিয়ম রয়েছে। তারপর উদযাপন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উদযাপনের দিন আটজন বালককে খাওয়ানোর নিয়ম রয়েছে। সেইসঙ্গে দেবীর প্রসাদের কিছু অংশ খাওয়াতে হয় গোরুকে। গো সেবা দেবীর বিশেষ পছন্দ। কেউ যদি এই ব্রতের দিন ভক্তিভরে গো সেবা করেন তাহলে তাঁর প্রতি দেবী বিশেষ প্রীত হন। তবে এই পুজোয় সবথেকে কড়াভাবে যে নিয়ম মানতে হয়, তা হল টক জাতীয় খাবারে নিষেধাজ্ঞা। স্রেফ খাওয়া নয়, পুজোর দিন ব্রতীর টক জাতীয় দ্রব্য ছোঁয়াও নিষেধ। শাস্ত্রমতে, টক জাতীয় পদার্থকে রজগুন সমৃদ্ধ আহার বলা হয়। অন্যদিকে আমিষ খাবার হল তমঃ গুণ সিদ্ধ। দেবী পুজোয় এই দুই-ইয়ের বর্জন একান্ত কাম্য। এইদিন সত্ত্বগুণ সমৃদ্ধ আহার করার নিয়ম রয়েছে। মিষ্টি, ফল, গুড়, ছোলা এইসব খেয়েই দিন কাটাতে হয় ব্রতীকে। মিষ্টির ক্ষেত্রেও ছানার মিষ্টি নিষিদ্ধ। কারণ ছানা তৈরির ক্ষেত্রে মূলত লেবুর ব্যবহার করা হয়। সেই টক বস্তু কোনওভাবেই এই পুজোয় থাকতে পারে না।
আরও শুনুন: শিবলিঙ্গে জল ঢালার সঠিক নিয়ম জানেন তো? না মানলে রুষ্ট হবেন স্বয়ং মহেশ্বর
দেবী চতুর্ভুজা। রত্নসিংহাসনে বিরাজ করছেন তিনি। সদাহাস্য সুন্দরী এক মূর্তি। চার হাতে, তরবারী, ত্রিশূল, বরাভয় ও সংহার মূদ্রা। দেবীর বাহন বাঘ। তবে মূর্তিতে একটি গোরুও দেখা যায়। দেবীর প্রিয় পশু হিসেবেই তাকে ওই গোরু দেবী মূর্তির পাশে থাকে। দেবী ভাগবতে পার্বতী জন্মের যে আখ্যান মেলে সেখানে শুক্রবারের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেইদিনটি পূর্ণিমা তিথি ছিল বলেও উল্লেখ রয়েছে। পার্বতী দেবীর সেই স্বরূপই চতুর্ভূজা হিসাবে হিমালয়কে দেবীগীতের মাধ্যমে সন্তোষ প্রদান করেছিল। অনেকেই মনে করেন দেবী সন্তোষীর জন্মবৃত্তান্তের ব্যাখ্যা এটিই। তবে গনেশ কণ্যা হিসেবে পার্বতীর আরও কিছু জন্মবৃত্তান্ত মেলে। বৈষ্ণব আদর্শে ভগবতী যোগমায়াকে বিভিন্ন দেবীর রূপে ভিন্ন ভিন্ন নামে উপাসনা করা হয়। তাঁদের অন্যতমা দেবী সন্তোষী। তাই তাঁর পুজোয় কোনওরূপ আমিষের উল্লেখ নেই। তবে কথিত আছে, মনে মনে কিছু প্রার্থনা করে ১৬ শুক্রবার মা সন্তোষীর ব্রত করলে অবশ্যই ফল মেলে। তবে ব্রতের পর অবশ্যই শুনতে হয় ব্রতকথা। এইসব নিয়ম মানলেই তুষ্ট হন দেবী।