সবার মুখে ‘ব্যোম ব্যোম’ রব। দলবেঁধে কেউ চলেছে তারকেশ্বর, কেউ বা অন্য কোনও শিবক্ষেত্র। শ্রাবণ মাসে দেশের প্রায় সর্বত্রই এমন ছবি ধরা পড়ে। সে ক্ষমতা না থাকলে বাড়িতেও শিবপুজো করা যেতে পারে। যে কোনও শিবলিঙ্গে জল ঢাললেই তুষ্ট হন মহাদেব। কিন্তু সেক্ষেত্রে মানতে হয় কিছু নিয়ম। কী জানেন? আসুন শুনে নিই।
শ্রাবণ মাত্রেই দেবাদিদেবের প্রিয় মাস। দেশের বিখ্যাত সব শিবমন্দিরে এইসময় ভিড় হয় চোখে পরার মতো। শিবভক্তরা এইসময় কাঁধে বাঁক নিয়ে মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে যান। এছাড়া বাড়িতে শিবপুজোর চল তো রয়েছেই। গোটা শ্রাবণমাস জুড়ে অনেকেই নিরামিষ খান। আর ভক্তিভরে বাবার মাথায় জল ঢালেন।
আরও শুনুন: কোথাও প্রসাদ মদ, কোথাও বছরভর জলের তলায় মহাদেব, দেশের ৫ বিশেষ শিবমন্দির চেনেন?
এমনিতে শিব ভোলানাথ। তাঁর পুজোয় বিশেষ আড়ম্বরের প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভক্তির অভাব বা পুজোর কাজে নিষ্ঠা না থাকলে মোটেও খুশি হন না মহাদেব। তাঁকে তুষ্ট করতে হাজার হাজার বছর তপস্যা করত অসুররা। এমনকি মাতা পার্বতীও দীর্ঘদিন শিবের তপস্যা করেছেন। তাঁদের আরাধনায় এতটুকু ত্রুটি ছিল না। তবুও মহাদেবের ধ্যানভঙ্গ হয়েছিল বহুদিন পর। তাই মহাদেবের আশীর্বাদ পেতে সাধারণ কোনও ভক্তকে যে যথেষ্টই ধৈর্য রাখতে হবে, তা বলাই বাহুল্য। আর সেইসঙ্গে বজায় রাখতে হবে নিষ্ঠা। পুজোর কাজ করার সময় মন বিচলিত হলে মহা বিপদ। এইভাবে শিবের বরলাভ প্রায় অসম্ভব। এছাড়া শিবলিঙ্গে জল ঢালার ক্ষেত্রেও মানতে হয় কিছু বিশেষ নিয়ম।
আরও শুনুন: বাড়িতে শিবলিঙ্গ রেখেছেন? পুজোর সময় ভুলেও এই কাজ করবেন না
সাধারণত শিবকে জল,দুধ,ঘি,মধু বা দই দিয়ে স্নানের নিয়ম রয়েছে। শৃঙ্গার করার ক্ষেত্রে অনেকে আরও কিছু প্রসাধনী ব্যবহার করেন। তবে মহাদেব সর্বত তুষ্ট হন জলস্নানেই। এক্ষেত্রে গঙ্গাজলে শিবলিঙ্গ স্নান করানোই সর্বোত্তম। তবে কখনই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শিবলিঙ্গে জল ঢালবেন না। অনেকেই মন্দিরে পুজো দেওয়ার সময় এমনটা করে থাকেন। শিবপুরাণ অনুসারে এই কাজ একেবারেই অনুচিত। পুরোহিতদেরও কখনই দাঁড়িয়ে পুজো করা উচিত নয়। সেই অর্থে শিবলিঙ্গ অভিষেকের সময়ও অবশ্যই আসন পেতে বসা উচিত। এরপর বলতে হয় হাতের প্রসঙ্গ। পুজোর কাজে বাম হাত ব্যবহার করা শাস্ত্রবিরুদ্ধ। তাই মহাদেবের লিঙ্গে জল ঢালার সময়ও অবশ্যই ডানহাত ব্যবহার করুন। জল ঢালার সময় বামহাত দিয়ে ডানহাত স্পর্শ করে রাখতে পারেন। সেইসঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, একবারে অনেকটা জল যেন শিবলিঙ্গে না পড়ে। ধীরে ধীরে ওঃ নমঃ শিবায় মন্ত্র সহযোগে জল ঢালুন। এতে মহাদেব বিশেষ তুষ্ট হন। তামার পাত্র থেকে জল ঢাললে মহাদেব প্রীত হন। না থাকলে রূপো বা পিতলের পাত্রও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্লাস্টিক বা অন্য কোনও পাত্র থেকে শিবের মাথার জল ঢালা উচিত নয়। এছাড়া শিবলিঙ্গে জল ঢালার সময় কোনদিকে মুখে করে বসছেন সেটিও খেয়াল রাখা উচিত। কখনই পূর্বমুখে শিবলিঙ্গে জল ঢালতে নেই। খেয়াল রাখবেন শিবলিঙ্গে জল ঢালার সময় যেন উত্তর দিকে মুখ থাকে। মনে করা হয়, উত্তর দিক মহাদেবের বাম অংশ। আর এই দিকে দেবী পার্বতী বিরাজমানা। তাই উত্তরমুখে শিবলিঙ্গে জল ঢাললে শিব ও পার্বতী, উভয়ের আশীর্বাদই পাওয়া যায়। এইসব সাধারণ নিয়ম মেনে ভক্তিভরে শিবলিঙ্গে জল ঢাললেই কাঙ্খিত ফল মিলতে বাধ্য। কিন্তু এর অন্যথায় জীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। মহাদেবের ক্রোধ বড় ভয়ঙ্কর। সেই রোষের হাত থেকে বাঁচতে অবশ্যই মেনে চলুন এইসব সাধারণ নিয়মগুলি।