বন্দেভারতে দেওয়া চায়ের প্যাকেটে ‘হালাল’ স্টিকার। দেখতে পেয়েই বেজায় চটে যান এক যাত্রী। ডাক পড়ে রেল আধিকারিকের। চলন্ত ট্রেনেই তাঁকে তুলোধনা করেন ওই ক্ষুব্ধ যাত্রী। রেলকর্মীর পালটা উত্তরে শুরু হয় জোর বচসা। ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে নেটদুনিয়াতেও। শেষপর্যন্ত কোন শর্তে অশান্তি থামালেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অধিকাংশ দূরপাল্লার ট্রেনসফরেই খাবারের ব্যবস্থা থাকে। জনপ্রিয় বন্দেভারত এক্সপ্রেসে সে ব্যবস্থা রয়েছে প্রথম থেকেই। রোজকার মতো এদিনও যাত্রীদের চা দেওয়া হয়েছিল। চলন্ত ট্রেনে সাধারণত দুধ, জল এবং চা পাতা আলাদাভাবেই দেওয়া হয়। সেদিনও ঠিক তেমনটাই হয়েছিল। কিন্তু টি-ব্যাগ খুলে চা বানাতে গিয়ে রীতিমতো চমকে ওঠেন এক যাত্রী। তিনি দেখেন, প্যাকেটের গায়ে একটি স্টিকারে ‘হালাল’ লেখা রয়েছে। সমস্যার সূত্রপাত এখান থেকেই।
আরও শুনুন: বলতে হবে ‘জয় শ্রীরাম’, ইমামকে গেরুয়া চাদর পরিয়ে নির্দেশ, যোগীরাজ্যের ঘটনায় ফের বিতর্ক
আসলে এই ‘হালাল’ শব্দটি ইসলাম সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত। মূলত আমিষ খাবারেই এই ধরনের স্টিকার দেওয়া থাকে। তাহলে চায়ের প্যাকেটে কেন এই হালাল স্টিকার দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বেজায় ধন্দে পড়েন ওই ব্যক্তি। তক্ষনি রেল আধিকারিককে ডেকে পাঠান। জানতে চান, চায়ের প্যাকেটে কেন এমন স্টিকার দেওয়া হয়েছে? প্রশ্ন শুনে প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে যান ওই আধিকারিকও। প্যাকেটের গায়ে কোথায় ওমন স্টিকার দেওয়া রয়েছে তা যচাই করেন। ততক্ষনে ঘটনার ভিডিও বানাতে শুরু করে দিয়েছেন ওই যাত্রী। কামরার অন্যান্য যাত্রীরাও নড়েচড়ে বসেছেন। সবকিছু শোনার পর, রেলআধিকারিক বুঝতে পারেন ওই যাত্রী আসলে কী ইঙ্গিত করতে চাইছেন। তাই সঙ্গে সঙ্গে চায়ের প্যাকেটে থাকা ‘সবুজ’ স্টিকার দেখিয়ে তিনি বলতে থাকেন, এই চা সম্পূর্ণভাবে নিরামিষ। তাঁর দাবি, চা সবসময় নিরামিষই হয়। বন্দেভারতে যাত্রীদের দেওয়া এই চায়ের প্যাকেটেও কোনওরূপ আমিষদ্রব্য নেই। কিন্তু এই যুক্তিতে চিঁড়ে ভেজেনি। বরং গলার সুর চড়িয়ে ওই যাত্রী আবারও প্রশ্ন করেন, তাহলে এই ‘হালাল’ স্টিকার কেন দেওয়া হয়েছে? সেইসঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, ISI কিংবা খাদ্যমন্ত্রকের নির্দেশিত কোনও স্টিকারের দেওয়ার বদলে এখানে ‘হালাল’ স্টিকার দেওয়ার মানে কি! উত্তরে অবশ্য হালাল প্রসঙ্গে কিছুই বলেননি ওই রেল আধিকারিক। বারবার সবুজ স্টিকার দেখিয়ে তাঁর ‘নিরামিষ’ খাবারের যুক্তিটিই শোনাতেই থাকেন।
আরও শুনুন: সত্যিই গুপ্তচর! পাক বধূর বেনামে ভারতে প্রবেশ নিয়ে দানা বাঁধছে সন্দেহ
কিছুক্ষণ বাদানুবাদ চলার পর নিজে থেকে খানিক শান্ত হন ওই যাত্রী। তিনি জানান, শ্রাবণমাসে পুজো দিতে যাচ্ছেন। তাই এই ‘হালাল’ স্টিকার তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে। অবিলম্বে এই স্টিকার বন্ধ করার কথা বলেন তিনি। বদলে, ‘স্বস্তিক’ জাতীয় কোনও হিন্দু চিহ্ন দেওয়া হোক। তাঁর এই যুক্তিতে সঙ্গে সঙ্গে সায় দেন ওই রেল আধিকারিক। এই শর্তে বাদানুবাদ থামিয়েও দেন দুজনেই। তবে এরপরই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন ওই ব্যক্তি। সেখানেও রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়। ভিডিওটি ভাইরালও হয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। নেটদুনিয়ায় অনেকেই ওই ব্যক্তিকে সমর্থন জানান। প্রায় সকলেই ভিডিওটি শেয়ার করে নিজেদের মন্তব্য রাখেন। সবমিলিয়ে এই ইস্যুতে রীতিমতো চর্চা চলছে নেটদুনিয়ায়।
@AshwiniVaishnaw @RailMinIndia @IRCTCofficial why Halal certified products are being served to Hindus? Please stop this.. @narendramodi @AmitShah @PMOIndia @HMOIndia pic.twitter.com/qlp0JV5Z4c
— Poonam (@poonam_thukral) July 19, 2023