বিরোধী দলের সাংসদ। কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করাই তাঁর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। বরাবরই একাধিক ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। তবে সম্প্রতি তাঁর গলায় শোনা গেল অন্য সুর। মোদি সরকারের বিদেশনীতি নিয়ে সবথেকে বেশি সরব হতেন যিনি, তাঁকেই মোদি প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেল। ঠিক কী বলেছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী? আসুন শুনে নিই।
বাগ্মী হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলেও পরিচিত তিনি। আর সেই কথার ভারেই বিরোধী সাংসদ হিসেবে শাসক দলকে তুলোধোনা করতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু শশী থারুরকে কোনও এক ছকে বাঁধাও মুশকিল। এর আগেও কখনও কখনও নিজের সেই বিরোধী অবস্থান থেকে ঘুরে গিয়েছেন তিনি। উলটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে অস্বস্তিতে ফেলেছেন দলকে। সম্প্রতি ফের তেমনই ঘটনা ঘটালেন কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর।
আরও শুনুন: গেম-প্রেমের সেই পাক বধূ কি আসলে গুপ্তচর? সন্দেহ যোগীরাজ্যে, তৎপর ATS
ঠিক কী বলেছেন তিনি?
আসলে, যে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি এতদিন সরব হতেন, সম্প্রতি সেই মোদিকেই প্রশংসায় ভরিয়েছেন শশী থারুর। নেপথ্যে মোদির আরব যাত্রা। নিজের সংসদীয় এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে মোদির বিদেশনীতি নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে কংগ্রেস নেতাকে, যেখানে এতটুকু কটূক্তি বা ব্যঙ্গের লেশ নেই। উলটে মোদির ভূয়সী প্রশংসাই করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি এতদিন মোদি সরকারের বিদেশনীতি নিয়ে যা বলে এসেছেন, তা ফিরিয়ে নেওয়ারও প্রস্তাব রেখেছেন থারুর। আসলে সাম্প্রতিক কালেই মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে সফর সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি দেশেই বিপুল সংবর্ধনা জানানো হয়েছে তাঁকে। এ প্রসঙ্গেই থারুর বলেছেন, এর আগে কোনও মুসলিমপ্রধান দেশের সঙ্গে ভারতের এত ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়নি। বিশেষ করে আরবের মতো মুসলিম দেশে গিয়ে মোদি যে সৌভ্রাতৃত্বের নিদর্শন দেখিয়েছেন, তা রীতিমতো প্রশংসার। মোদির আরব সফরকে সামনে রেখে তাঁর দাবি, ইসলামিক দুনিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বর্তমানে যতটা ভাল, অতীতে কখনও এমনটা ছিল না। এই অনুষ্ঠানে থারুর আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদি প্রথম বছরে ২৭টি দেশ সফর করেছিলেন। সেই তালিকায় একটিও ইসলামিক দেশ ছিল না। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন শশী থারুর নিজেই। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী সেই পরিস্থিতিকে বদলে ফেলেছেন বলেই মনে করছেন কংগ্রেস সাংসদ।
আরও শুনুন: হিন্দি ভাষার প্রসার হোক বিশ্বব্যাপী, রাষ্ট্রসংঘকে ৮ কোটির বেশি অনুদান ভারতের
বস্তুত, থারুরের এই মন্তব্য বিজেপি শিবিরের কাছে মেঘ না চাইতেই জল। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে জোর প্রচার শুরু করেছে আইটি সেল। শশী থারুরের বক্তব্যের ভিডিও টুইট করে কংগ্রেস নেতাকে ‘সত্য ভাষণ’-এর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে বিজেপির দলীয় সমর্থকদের মধ্যেও। তবে কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয়দের তরফে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য আসেনি এখনও পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, বেঙ্গালুরুর মহাজোট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এই ইস্যুটিকে বিশেষ আমল দিতে চাইছে না কংগ্রেস। আর এতেই হাতে চাঁদ পেয়েছে বিজেপি। শশী থারুরের মতো হেভিওয়েট নেতা যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন, সেই প্রশংসাকে নরেন্দ্র মোদির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করেই তুলতে চাইছে কেন্দ্রের শাসক দল।