বংলা পঞ্জিকা মতে বছরের নির্দিষ্ট কোনও মাস মল মাস হিসেবে গণ্য হয়। এইসময় কোনও শুভকাজ বা অনুষ্ঠানের নিয়ম নেই। বাড়িতেও কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে হয়। ঠিক কিসের ভিত্তিতে এই মল মাসের নির্বাচন হয়? আসুন শুনে নিই।
মলমাসে কোনও শুভকাজ হয় না। পঞ্জিকায় এই নিয়মের স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। চলতি বছরে মলমাস হিসেবে গণ্য হবে শ্রাবণ। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ বছর জুলাইয়ের ১৮ থেকে শুরু হচ্ছে মলমাস। অন্যান্য বছর এইসময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান চোখে পড়লেও, এ বছর তার প্রায় কিছুই হবে না। শুধুমাত্র বিয়ে বা অন্নপ্রাশনের মতো ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানই নয়, মলমাসে কোনও হিন্দু দেবদেবীর পুজোরও উল্লেখ নেই।
আরও শুনুন: বাড়িতে শিবলিঙ্গ রেখেছেন? পুজোর সময় ভুলেও এই কাজ করবেন না
শাস্ত্রমতে কোনও মাসে যদি দুটি অমাবস্যা পড়ে, তাহলে সেই মাসকে মলমাস বলা হয়। চলতি বছরে শ্রাবণ মাসে অমাবস্যার অবস্থান এইরূপ। তাই পঞ্জিকামতে শ্রাবণ মলমাস। বৈদিক কর্মকাণ্ডের জন্য এই মাস একেবারেই অশুভ। তবে পরমার্থিক কাজ করায় বাধা নেই। পঞ্জিকায় মাসটিকে একপ্রকার কর্মশূণ্য হিসেবেই দেখানো হয়েছে। তাই বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা এই মাসে শ্রী কৃষ্ণ আরাধনার ব্যবস্থা করেন। একে পুরুষোত্তম মাস ও বলা হয়। মনে করা হয় এইসময় শ্রী বিষ্ণুর নামজপ করলে বিশেষ ফল মেলে। তাই অনেকের কাছে এই মাস বিশেষ শুভ হিসেবেও পরিলক্ষিত হয়। তবে সাধারণত প্রতি বছরই যে মলমাস দেখা যায় এমনটা নয়। মূলত চন্দ্রের অবস্থানের উপর এটি নির্ভর করে। জ্যোতিষমতে যে চান্দ্র মাসে সূর্য একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন করে না, অর্থাৎ পুরো মাস জুড়ে একটি নির্দিষ্ট রাশিতে অবস্থান করে, সেই মাসের সঙ্গে মলমাস শুরু হওয়ার বিশেষ যোগ রয়েছে। তার ঠিক পরের মাসে মল মাস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদিও এ বিষয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেন। বিজ্ঞানমতে সূর্য ও চন্দ্রের অবস্থানগত পার্থক্যই এই মলমাস হওয়ার প্রধান কারণ। বাংলায় দুই থেকে তিন বছর অন্তর অন্তর মলমাস লক্ষ্য করা যায়। চান্দ্রমাস সাতাশ থেকে সাড়ে উনত্রিশ দিনে হয়। যা সাধারণ সৌরমাসের তুলনায় কয়েকদিন কম। কয়েকদিনের এই ফারাক এক বছরে গিয়ে দাঁড়ায় এগারো দিন। আর এই ফারাকের জন্যই কোনও কোনও বছরে মলমাস বদল হয়। এমনকি কোনও বছর যদি আশ্বিন মাস মলমাস হয়, তাহলে দুর্গাপুজোও পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরও শুনুন: পূর্ণিমা মাত্রেই নারায়ণের প্রিয় দিন, তবে গুরুপূর্ণিমার সঙ্গে বিশেষ যোগ রয়েছে মহেশ্বরেরও
তবে মলমাসে বিশেষ কিছু নিয়ম মানলে বদলে যেতে পারে জীবন। সঠিক নিয়ম পালনে যেমন শুভ পরিবর্তন আসতে পারে, তেমনই নিয়মের লঙ্ঘন হলে ঘটতে পারে বিপদও। এই মাসে বিষ্ণুপুজো একান্ত প্রয়োজন। মলমাসের একাদশীতে উপবাস রেখে বিষ্ণুর পুজো করলে বিশেষ ফল মেলে। অশ্বত্থ গাছ বিষ্ণুর সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এইমাসে নিয়ম করে অশ্বত্থ গাছে জল দেওয়া যেতে পারে। গঙ্গাস্নান এমনিতেই শুভ। তবে মলমাসে কেউ যদি নিয়ম করে গঙ্গাস্নান করেন, তাহলে তাঁর সমস্ত পাপ ধুয়ে যাবে বলেই নির্দেশ করে শাস্ত্র। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে উন্নতির জন্য মলমাস নবমী তিথিতে দেবী রূপে কুমারী কন্যার পুজো করার নিয়ম রয়েছে। তাঁকে সন্তুষ্ট করে ভোজন করালে যাবতীয় দুর্ভোগ ঘোচে। এছাড়া মলমাসে সূর্য পুজোরও বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। শাস্ত্রজ্ঞরা এই মাসে রোজ সকালে স্নান করে সূর্যদেবকে অর্ঘ্যদানের বিধান দেন। তবে এইসময় নতুন কিছু কেনা থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়। নতুন বাড়ি, জমি, গাড়ি বা ইলেকট্রনিক্স উপকরণ কেনা একেবারেই উচিত নয়। এমনকি বাসস্থান পরিবর্তনও না করাই মঙ্গল। এছাড়া মলমাসে বিবাহ, বাগদান, গৃহপ্রবেশ বা কোনও ধর্মীয় শুভ কাজ পঞ্জিকা মতেই নিষিদ্ধ। এই সময় বিষ্ণুর স্মরণে সাধারণ কিছু নিয়ম মানতে পারলেই জীবনে বিশেষ শুভ পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন যে কেউ।