ভগবান শিব ব্রহ্মস্বরূপ। তাঁর পূজা হয় দুই ভাবে, মূর্তিতে এবং লিঙ্গে। তবে আমাদের দেশে লিঙ্গ পূজার চল বেশি। দেবাদিদেব মহাদেব নিরাকার, আবার তিনি সাকারও। নিরাকার ক্ষেত্রে তাঁর পূজা হয় লিঙ্গে আর সাকাররূপে তাঁর পূজা হয় মূর্তিতে। বাড়িতেও মহাদেবের লিঙ্গের পুজোর চল রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে ঠিক কী কী নিয়ম মানতে হয়? আসুন শুনে নিই।
কথায় বলে যত্র জীব, তত্র শিব। শিব অভয়শীল, সর্বদা কৃপাশালী এবং সদারক্ষাকারী। তিনি অল্পেই তুষ্ট হন। ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। কিন্তু ভারত জুড়ে শিব লিঙ্গরূপে বিরাজমান এবং পূজিত। বাড়িতেও অনেকেই শিবের লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হয় কয়েকটা নিয়মের কথা।
আরও শুনুন: পূর্ণিমা মাত্রেই নারায়ণের প্রিয় দিন, তবে গুরুপূর্ণিমার সঙ্গে বিশেষ যোগ রয়েছে মহেশ্বরেরও
প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে, কোন জায়গায় শিবলিঙ্গটি রাখা হচ্ছে। পুজোর পবিত্র স্থান ছাড়া অন্য কোথাও লিঙ্গ রাখা উচিত নয়। নিয়ম করে পুজো করতে না পারলেও, শিবলিঙ্গে রোজ জল ঢালা আবশ্যক। সেইসঙ্গে একটি বেলপাতা অর্পণ করলে প্রভু বিশেষ তুষ্ট হন। তবে বাড়িতে কেবলমাত্র একটিই লিঙ্গ রাখা উচিত। একাধিক শিবলিঙ্গ গৃহে রাখলে বিপদ হতে পারে। এরপর মাথায় রাখতে হবে শিবলিঙ্গের উচ্চতার কথা। মন্দিরে থাকা শিবলিঙ্গ বড় হতে পারে, কিন্তু বাড়ির শিবলিঙ্গের উচ্চতা খুব বেশি না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিছু শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতদের মতে, বাড়িতে থাকা শিবলিঙ্গ বুড়ো আঙুলের সমান উচ্চতার হওয়া উচিত। পুজোর ক্ষেত্রে মূলত গঙ্গাজলই যথেষ্ট। তবে সোমবার কিংবা বিশেষ কোনও দিনে দুধ-জল-ঘি-মধু দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করানো বিশেষ ফলদায়ক। শিবের প্রিয় বেলপাতা এবং বেলফল। সেইসঙ্গে ধুতরা ফুল বা কলকে ফুল দিয়েও শিবপুজোর নিয়ম রয়েছে। বাড়ির শিবলিঙ্গের ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না। গরমের সময় সারাদিন শিবকে জলে রাখার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া শিবের প্রিয় মাস শ্রাবনে, প্রতি সোমবার বাবার মাথায় জল ঢালতে হয়। শিবলিঙ্গের পিনাক একটি বিশেষ অংশ। কোনদিকে মুখে করে সেই পিনাক রাখা হচ্ছে তা অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত। এক্ষেত্রে অনেকেই বলে থাকেন, শিবলিঙ্গের পিনাক সবসময় উত্তর দিকে মুখ করে রাখা উচিত। এবং পুজো করতে বসার নিয়ম পূর্বমুখে।
আরও শুনুন: এইসব মন্দিরে স্বয়ং হনুমানের বাস, পুজো দিলে কী এমন ফল মেলে?
তবে শিবলিঙ্গে কখনই তুলসী পাতা অর্পণ করতে নেই। স্রেফ বেলপাতা অন্যথায় সাদা কোনও ফুল দিয়ে লিঙ্গপুজো সারতে হয়। একইসঙ্গে মাথায় রাখতে হবে শিবলিঙ্গটি কী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। বাড়িতে মূলত পাথরের তৈরি লিঙ্গই রাখার নিয়ম। সেক্ষেত্রে সাদা ও কালো এই দুই বর্ণের লিঙ্গ দেখা যায়। কথিত আছে সাদা শিব ত্যাগের প্রতীক। তাঁর পুজো বাড়িতে করা উচিত নয় বলেই মনে করেন কেউ কেউ। তবে স্ফটিকের শিবও পুজো করেন অনেকেই। তবে শাস্ত্র এবং শিবপুরাণ অনুযায়ী লিঙ্গ রয়েছে পাঁচ প্রকার— স্বয়ম্ভূ লিঙ্গ, বিন্দু লিঙ্গ, প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গ, চর লিঙ্গ, এবং ম গুরু লিঙ্গ। এছাড়াও শাস্ত্রে উল্লেখ আছে বাণলিঙ্গের কথা এই বাণলিঙ্গের ওপর সব দেবতার পূজার্চ্চনা করা হয়। এই বাণলিঙ্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর লিঙ্গটি হল পারদলিঙ্গ। তাই বাড়িতে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করলে শুভাশুভ ফল মেলে।